কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে ময়াল সাপ বের হওয়ার জোগাড় সেচ দফতরে।
ন্যূনতম দরের থেকে ২৯ শতাংশ কমে কাজের বরাদ দেওয়া হয়েছে শুনে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী থেকে মুখ্যসচিব সকলেই চমকে উঠেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই তদন্ত এগোতেই উঠে আসছে আরও নানা তথ্য। তদন্ত শুরুর পরে জানা গিয়েছে, বাঁধের কাজে প্রায় ষাট শতাংশ ছাড়েও বরাত দেওয়া হয়েছে এমন নজিরও রয়েছে।
মিলনপল্লিতে ৫৯ শতাংশ কম দরে কাজের বরাত দিয়ে দেয় সেচ দফতর। করোতোয়া নদীর পাড় বাঁধাইয়ের কাজ ছিল প্রায় আট লক্ষ টচাকার তাতে ছাড় দেওয়া হয়েছে প্রায় ৫৮ শতাংশ। চেংমারপি বাঁধের কাজ হয়েছে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। ডায়না নদীতে পাড় বাঁধাইয়ের কাজে প্রায় ৫২ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। মিলনপল্লি এলাকায় তিস্তার বাঁধ সংস্কারের কাজে নূন্যতম দরের থেকে ৪২ শতাংশ কমে কাজের বরাত সংস্থাকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ময়নাগুড়ির বাসুসুবা এলাকার কাজ তো ইতিমধ্যে শেষও হয়ে গিয়েছে। সেই কাজ হয়েছে ৩৭ শতাংশ কম দরে। এখন প্রশ্ন উঠেছে কাজের মান নিয়ে। দফতরের এক পদস্থ আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জোর কদমে তদন্ত চলছে। একে একে অনেক কিছুই প্রকাশ্যে আসছে।’’
গত নভেম্বর মাসে উত্তরকন্যায় জলপাইগুড়ি-কোচবিহার-আলিপুরদুয়ার তিন জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই মালবাজারের চাঁপাডাঙায় তিস্তানদীর বাঁধ তৈরির কাজের বরাতের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। প্রায় ২৯ শতাংশ ছাড়ে কাজ হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘এত ছাড়ে কাজটা হবে কী করে?’’ তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরপরই ওই বাঁধের কাজ থেকেই দুই আধিকারিককে সরিয়ে দেওয়া হয়। কী ভাবে এই বিপুল পরিমাণ ছাড় দিয়ে কাজের বরাত দেওয়া হল তা নিয়ে তদন্ত শুরু হতেই সেচ কর্তাদের মুখে ফিরছে বাসুসুবা, মিলনপল্লি, বানারহাট, বিবিগঞ্জের মতো কাজের নাম।
সেচ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের দাবি, ই-টেন্ডারে কাজের বরাত দেওয়ায় ইচ্ছেমতো সংস্থাগুলি কমিয়ে দর দেয়। কোনও সংস্থা অত্যাধিক কম দর দিলে তাদের ডেকে কারণ জানতে হয়। বাসুসুবা থেকে বানারহাট— কোনও ক্ষেত্রেই তা হয়নি বলে অভিযোগ। ন্যূনতম দর থেকে বিপুল ছাড় দেওয়ার সঙ্গে কাজের মানের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। যে কাজ করতে একশো টাকা প্রয়োজন সেই কাজ সত্তর টাকায় সারলে কোনভাবেই যথাযথ মানে হবে না বলে দাবি। সে কারণেই খোদ দফতরের কর্তাদের একটি অংশ এই সব কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি নন সেচ কর্তারা। এক কর্তার দাবি, বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। মালবাজারের পরে আরও চারটি অভিযোগ সামনে উঠে এসেছে। সেগুলি নিয়েও তদন্তের নির্দেশ এসেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy