Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

জেলা পরিষদে দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন সদস্যাই

তৃণমূল পরিচালিত কোচবিহার জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতির বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠল। অভিযোগ তুললেন শাসক দলেরই এক নেত্রী তথা জেলা পরিষদ সদস্য। মঙ্গলবার জেলা পরিষদের অফিস ঘরের ভিতরে ঢুকে তুলকালাম করেন ওই নেত্রী হাসিনা রব্বানি বেগম। বেলা ১২ টা নাগাদ অফিসে ঢুকে চিৎকার শুরু করেন ওই সদস্যা।

কোচবিহারে জেলাপরিষদ সদস্যর ক্ষোভ।

কোচবিহারে জেলাপরিষদ সদস্যর ক্ষোভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৩:০৬
Share: Save:

তৃণমূল পরিচালিত কোচবিহার জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতির বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠল। অভিযোগ তুললেন শাসক দলেরই এক নেত্রী তথা জেলা পরিষদ সদস্য।

মঙ্গলবার জেলা পরিষদের অফিস ঘরের ভিতরে ঢুকে তুলকালাম করেন ওই নেত্রী হাসিনা রব্বানি বেগম। বেলা ১২ টা নাগাদ অফিসে ঢুকে চিৎকার শুরু করেন ওই সদস্যা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বামী মাথাভাঙার শ্রমিক তৃণমূলের নেতা আলিজার রহমান। অফিস ঘরে ঢুকে রাস্তার টেন্ডারের কাগজ দেখতে চান তাঁরা। তা নিয়ে অফিস কর্মীদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। সেই সময় বন ও ভূমি দফতরের কর্মাধ্যক্ষ পরিমল বর্মন সেখানে যান। তিনি বিষয়টি নিয়ে আলোচনার আশ্বাস দেন।

ওই সদস্যা প্রশ্ন তোলেন, “জেলা পরিষদ গঠনের পর থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। কোনও কাজ আমাদের জানানো হচ্ছে না। এলাকায় কোনও কাজ হচ্ছে না। সহ সভাধিপতি ললিত প্রামাণিক তাঁর গ্রামের বাড়ির সামনের রাস্তা পাকা করাচ্ছেন। অথচ যে সব রাস্তা দিয়ে হাজার হাজার মানুষ চলাফেরা করছেন সে সব রাস্তার কোনও কাজ হচ্ছে না।” তাঁর আরও অভিযোগ, ললিতবাবুর গ্রামের বাড়ির সামনে ৬০০ মিটার একটি রাস্তা পাকা করার জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। সে জন্য ২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ওইটুকু রাস্তার জন্য এত টাকা বরাদ্দ করাটা দুর্নীতি বলেও তাঁর অভিযোগ।

ললিবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে তোলা ওই অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি বলেন, “চল্লিশ ঘর মানুষ সেখানে বসবাস করে। আমার গ্রামের বাড়ি থাকলেই কি সেই রাস্তা আমি করতে পারব না! আর ওই রাস্তার অনেক কাজ পাকা করার আগে মাটিও কাটতে হবে। তাই ওই পরিমাণ টাকা প্রয়োজন।” আলিজার রহমানের পাল্টা দাবি, “ললিতবাবু চল্লিশ ঘর লোকের কথা বলছেন। অথচ যেখানে হাজার হাজার মানুষ রাস্তার জন্য কষ্ট করছেন সেখানে তিনি কিছু করছেন না কেন? এলাকার জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্যাকে না জানিয়ে তিনি কাজ করছেন কেন?”

জেলা পরিষদের সভাধিপতি পুষ্পিতা ডাকুয়া দাবি করেন, অভিযোগ ঠিক নয়। তিনি বলেন, “সব এলাকাতেই কাজ হচ্ছে। হাসিনা রব্বানির পরিকল্পনা থেকেও কাজ হয়েছে। একটি সম্পূর্ণ রাস্তা করতে গেলে ওই পরিমাণ টাকা লাগবেই এটা নিয়ে অভিযোগের কি আছে।”

সভাধিপতি, সহ সভাধিপতি ওই রাস্তার জন্য বরাদ্দ টাকা ঠিক রয়েছে বলে দাবি করলেও বিষয়টি ‘অবিশ্বাস্য’ বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদের অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক প্রণীতা সেওয়া। তিনি বলেন, “৬০০ মিটার রাস্তা পাকার জন্য ২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ! অবিশ্বাস্য! এটা হতে পারে না। আমি বিষয়টি খোঁজ নেব। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বাকি অভিযোগ নিয়ে তিনি জানান, সমস্ত কাজ পূর্ত দফতরের কমিটিতে পাশ হয়। তার পরেই নিয়ম মেনে কাজের জন্য বাকি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জনপ্রতিনিধিরাই সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন।

জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, মাথাভাঙা-১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন হাসিনা রব্বানি। মাথাভাঙ্গার আরেকটি এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ললিত প্রামাণিক। ললিতবাবু পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাধিপতি। বর্তমানে তাঁর বাড়ি মাথাভাঙা শহরে জোরপাটকির শিবপুরে গ্রামেও তাঁর একটি বাড়ি রয়েছে। সেখানে তাঁর পরিজনেরা থাকেন ওই এলাকা হাসিনা রব্বানির নির্বাচনী এলাকার মধ্যে পড়ে। ওই গ্রামেই ললিতবাবুর বাড়ির সামনে পাকা রাস্তা তৈরি হচ্ছে। হাসিনা রব্বানি বলেন, “আমার এলাকায় কোনও কাজ হয়নি। বহু পরিকল্পনা দিয়েছি। প্রতিবাদ ছাড়া কোনও রাস্তা নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc district council corruption cooch behar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE