ডাইন অপবাদ দিয়ে এক বৃদ্ধ দম্পতিকে মারধর করে ঘরছাড়া করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আত্মীয়দের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে মালদহের হবিবপুর থানার আকতৈল পঞ্চায়েতের হোগলা গ্রামে।
আতঙ্কে ওই দম্পতি গ্রাম ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন পড়শি গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। বুধবার দুপুরে তাঁরা হবিবপুর থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের পরই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন। পুলিশ জানিয়েছে, আক্রান্ত দম্পতির নাম শম্ভু মন্ডল এবং তাঁর স্ত্রীর নাম ক্ষীরোবালাদেবী। তাঁদেরকে বুলবুলচণ্ডী গ্রামীণ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়েছে। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই দম্পতির অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। আর ওই দম্পতিকেও ঘরে ফেরানো হচ্ছে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হবিবপুর থানার আকতৈল পঞ্চায়েতের হোগলা গ্রামে বাস ওই বৃদ্ধ দম্পতির। শম্ভুবাবু জমিতে দিনমজুরের কাজ করেন। তাঁর এক ছেলে নবীন শ্রমিকের কাজ করেন। শম্ভুবাবুর বাড়ির পাশেই থাকেন তাঁর ভাই অনিল। গত ২ জুন অনিলবাবুর ছেলে মোহিনী অসুস্থতার কারণে মারা যান। তার পর থেকেই অনিলবাবু ভেঙে পড়েন। এমনকী, ছেলের মৃত্যুর জন্য তাঁর দাদা ও বৌদিকেই দায়ী বলে অভিযোগ তোলেন। এরপরেই ডাইনি অপবাদ দিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে সালিশি সভা বসানো হয়। অভিযোগ সেখানেই তাঁদের মারধর করা হয় ও তাঁদের গ্রাম ছাড়া করারও হুমকি দেওয়া হয়।
ঘটনার পরেই আতঙ্কিত দম্পতি পালিয়ে যান পাশের গ্রাম কদমডাঙায়। সেখানে তাঁদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন তাঁরা। আত্মীয়েরা তাঁদের বুলবুলচণ্ডী গ্রামীণ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করান। প্রাণনাশের আশঙ্কায় এদিন দুপুরে শম্ভুবাবু তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে হবিবপুর থানার দারস্থ হয়। সেখানে ভাই অনিলের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি বলেন, ‘‘ভাইপোর হঠাৎ মৃত্যুতে আমরাও খুবই দুঃখিত। তবে ভাই এর জন্য আমাদেরই দায়ী করছে। আমরা স্বামী-স্ত্রী নাকি ডাইনি। আমাদের জন্যই তার ছেলে মারা গিয়েছে বলে দাবি করে মারধর করে। প্রাণে মারাও হুমকি দেয়। আতঙ্কে থানার দারস্থ হয়ে অভিযোগ করেছি।’’ ডাইনি সন্দেহে বৃদ্ধাকে মারধরের ঘটনায় উদ্বিগ্ন ব্লক প্রশাসনের কর্তারাও। হবিবপুরের বিডিও ফুরবা দর্জি শেরপা বলেন, ‘‘ঘটনাটি শুনেছি। ওই গ্রামে আমাদের প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে। গ্রামবাসীদেরকে সচেতন করা হবে। এ ছাড়া পুলিশকে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy