যুগল: সনৎ ও কঙ্কনা নন্দী। নিজস্ব চিত্র
এক পা দু’পা করে চৌত্রিশ বছর হেঁটে আসা। নাকি কবির কথা ধার করে, ‘ঢেউ খেলা দু’দশ কদম’, নিজেদের প্রেমের কথা কী ভাবে বলবেন ভেবে পান না সনৎ-কঙ্কনা। পরিচিতদের অনেকে বলেন, ‘‘ওঁরা হলেন তিস্তা পাড়ের শম্ভু মিত্র-তৃপ্তি মিত্র। নাট্য দম্পতি।’’ যা শুনে যারপরনাই লজ্জিত হন সনৎ, মুখ নামিয়ে নেন কঙ্কনা। দীর্ঘ চৌত্রিশ বছরের দাম্পত্য জীবন। কখনও একজন হয়তো কর্মসূত্রে বাইরে থেকেছেন, অন্য জন সামাল দিয়েছেন সংসার, ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা। সে সব দিন অতীত। এখন ছেলে-মেয়েরা নিজেদের জীবনে থিতু। সনৎ-কঙ্কনাও নিজেরা গুছিয়ে নিয়েছে নিজেদের মতো।
জলপাইগুড়ির পান্ডাপাড়ার বাসিন্দা সনৎ নন্দী সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছে দু’হাজার পনেরো সালে। ধবধবে সাদা চুল, লম্বা দাড়ি। চুলের দু’পাশ রুপোলি হয়েছে কঙ্কনারও। চুলে পাক ধরলেও মোটরবাইক চড়া বন্ধ হয়নি। এখনও দু’জন সকাল-সন্ধে বাইকে চেপে টইটই করেন। বাদ দেন না একটি নাটকও। একসময়ে স্ত্রী কঙ্কনাকে পৌঁছে দিতে নিয়মিত নাটকের মহড়ায় যেতেন। তেমনিই একদিন এক অভিনেতার অনুপস্থিতিতে নির্দেশকের অনুরোধে মঞ্চে পা দেন সনৎবাবু। ষাট পেরিয়েও সে স্মৃতি টাটকা। সনৎবাবু বললেন, ‘‘মনোজ মিত্রের ‘গল্প হেকিম সাহেব’ নাটক ছিল সেটি। সেই নাটকে আমি অভিনয় করেছিলাম আমার স্ত্রীরই বিপরীতে।’’
জীবনে দ্বিতীয়বার মঞ্চে আসাও স্ত্রীর অনুরোধে। সনৎবাবু স্বীকার করে নেন, স্ত্রীকে ভালবেসেই ‘অ্যামেচার থিয়েটারে’ প্রবেশ। স্ত্রীকে ভালবেসেই দ্বিতীয়বার মঞ্চে অভিনয়। সনৎবাবু বলেন, ‘‘এখন তো ঝাড়া হাত-পা। অবসর নিয়েছি। আমরা দু’জন চুটিয়ে অভিনয় করছি, নাটক দেখছি।’’ কঙ্কনা নাটক ছাড়াও আরও বেশ কিছু সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। তিনিও জানালেন, কোনও দিনও তাঁর কোনও সাধে-ইচ্ছেয় স্বামী বাধা দেননি। উল্টে নিজেই নাটকের দলে ভিড়ে গিয়েছেন। সনৎবাবুর কথায়, ‘‘ভালবাসা না থাকলে কিছুই ভাল হয় না। না দাম্পত্য না অভিনয়।’’
নাটকের সূত্রেই ওঁদের চেনেন জলপাইগুড়ির নাটক-পাগল পিনাকী সেনগুপ্ত। রাজনৈতিক পরিচয়ে পিনাকীবাবু পুরসভার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান। কিন্তু তার বাইরে তিনি নাটকের দলের লোক। পিনাকীবাবু বলেন, ‘‘ওঁদের তো আমরা আড়ালে শম্ভু মিত্র-তৃপ্তি মিত্র বলে ডাকি। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই নাটক করে বলে নয়, এই বয়সেও ওঁদের দুরন্ত দাম্পত্য দেখে।’’ দু’জনে দু’জনের জন্য আপস করেছেন অনেক, স্বার্থত্যাগের লিস্টটাও ছোট নয়। তবে সে সব নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন কেউই। ভ্যালেন্টাইন ডে নিয়েও মাতামাতি নেই। আজ বুধবার বাইকে স্ত্রীকে বসিয়ে নাটকের মহড়ায় যাবেন সনৎবাবু। ইচ্ছে হলে রেস্তোরাঁয় ঢুকবেন। সনৎবাবু বললেন, ‘‘এ সব আমাদের মাঝেমধ্যেই হয়।’’ সঙ্গে কঙ্কনা দেবীর সংযোজন, ‘‘বাইকে বসলে কিন্তু ও এখনও পঁচিশ!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy