Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বন্দিদের গানেই মাতল জল্পেশ

রবীন্দ্র ভাবনায় দস্যু রত্নাকরের বাল্মীকিতে উত্তরণ মঞ্চস্থ করেছিলেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলের বন্দিরা। নৃত্যশিল্পী অলকানন্দা রায়ের প্রশিক্ষণে ‘বাল্মিকী প্রতিভা’ গীতিনাট্যে নিজেদের উজার করে দিয়েছিলেন খুন-ডাকাতি-তোলাবাজির নানা ঘটনায় সাজাপ্রাপ্তরা।

মঞ্চে: জল্পেশ মেলার মঞ্চে অনুষ্ঠানে জলপাইগুড়ি সংশোধনাগারের বন্দিরা। শুক্রবার রাতে। নিজস্ব চিত্র

মঞ্চে: জল্পেশ মেলার মঞ্চে অনুষ্ঠানে জলপাইগুড়ি সংশোধনাগারের বন্দিরা। শুক্রবার রাতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৭ ০২:৩১
Share: Save:

রবীন্দ্র ভাবনায় দস্যু রত্নাকরের বাল্মীকিতে উত্তরণ মঞ্চস্থ করেছিলেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলের বন্দিরা। নৃত্যশিল্পী অলকানন্দা রায়ের প্রশিক্ষণে ‘বাল্মিকী প্রতিভা’ গীতিনাট্যে নিজেদের উজার করে দিয়েছিলেন খুন-ডাকাতি-তোলাবাজির নানা ঘটনায় সাজাপ্রাপ্তরা। তাঁদের সেই প্রয়াস মন ছুঁয়েছিল মানুষের। এ বার জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের বন্দিদের সুরে মাতল ময়নাগুড়ির জল্পেশ মেলা।

ওঁদের কেউ খুনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের সাজাপ্রাপ্ত। কেউ আবার অন্য অপরাধে দশ বছরের সাজা খাটছেন৷ জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের বন্দি এমনই পাঁচ আবাসিকের সুর ও কন্ঠে মাতল জল্পেশ মেলা৷

ক্ষিতিশ রায়, সহদেব সরকার, বিশ্বনাথ সরকার, গোপাল সুর, কৌশিক রায় এর আগেও জল্পেশ মেলায় অনুষ্ঠান করেছেন৷ দিন কয়েক আগে ফালাকাটার ছোট শালকুমারের বিরসা বিদ্যা ভবন উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবেও গান গেয়েছেন তাঁরা৷ তবে শুক্রবার রাতে জল্পেশ মেলায় তাদের অনুষ্ঠান যেন সেই সবকিছুকেই ছাপিয়ে যায়৷ তাঁদের গান শুনে মুগ্ধ হয়ে দর্শকদের অনেকেই এগিয়ে গিয়ে পাঁচ আবাসিককে পুরস্কৃতও করেন৷ যার জেরে শুধু ওই পাঁচ আবাসিকই নন, খুশী কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষও৷

জলপাইগুড়ি সংশোধনাগারের সুপার শুভব্রত চাকী বলেন, ‘‘দর্শকরা যেভাবে পাঁচ আবাসিকের গান শুনে তাদের পুরস্কৃত করতে এগিয়ে এলেন তাতে আমরা সবাই খুশি৷ আগামীদিনে ওঁরা আরও ভাল গান গাওয়ার অনুপ্রেরণা পাবে৷’’

কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার সূত্রের খবর, জল্পেশ মেলায় এর আগেও অনুষ্ঠান করেছেন। সেই সুবাদে এ বারও জল্পেশ মেলায় গান গাওয়ার ইচ্ছা ছিল ওঁদের৷ এই শিল্পীদের মধ্যে ক্ষিতিশ, সহদেব ও বিশ্বনাথ যাবজ্জীবন কারাদন্ডে সাজাপ্রাপ্ত৷ বাকি দু’জন দশ বছরের সাজা খাটছেন৷ সংশোধনাগের কর্তারা জানিয়েছেন, দিন কয়েক আগে মেলার উদ্যোক্তারা অনুষ্ঠানে তাঁদের গান গাওয়ানোর জন্য সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে৷ তারপরই জল্পেশ মেলায় অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু করে দেন আবাসিকরা৷

অনুষ্ঠান করতে শুক্রবার কয়েক ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তিও পান তারা৷ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা নাগাদ কড়া পুলিশ পাহারায় তাদের জল্পেশ মেলায় নিয়ে যাওয়া হয়৷ সাড়ে আটটার খানিক পড়ে তারা অনুষ্ঠান করতে মঞ্চে ওঠেন৷ এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে চলে অনুষ্ঠান৷ পাঁচজনই কম বেশি গান করেন৷ কেউ গাইলেন ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’, কেউ ‘তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো’, আবার কেউ ‘একই বৃন্তে দুটি কুসুম’। প্রত্যেকটা গানের শেষেই হাততালিতে ভরে যায় অনুষ্ঠান স্থল৷ দর্শকরা মঞ্চে উঠে পুরস্কৃত করতে থাকেন কারাগারের পাঁচ আবাসিককে৷ সবচেয়ে বেশি নজর কারেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ক্ষিতিশ। তাঁর হাতে দু’হাজার টাকা দিয়ে পুরস্কৃত করেন ময়নাগুড়ি থানারই এক পুলিশ আধিকারিক৷ ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘যা গান শোনালেন ওঁরা, তাতে মন ভরে গেল৷’’ উদ্যোক্তাদের তরফেও পাঁচ বন্দিকে আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হয়৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

correctional home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE