Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

ডেঙ্গির নতুন উপসর্গ

ডেঙ্গি আক্রান্তদের একাংশের মধ্যে এ ধরণের বিভিন্ন নতুন উপসর্গ নজরে এসেছে চিকিৎসকদের। আর তা চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের।

অসুস্থ: জ্বর নিয়ে হাসপাতালের পথে। শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

অসুস্থ: জ্বর নিয়ে হাসপাতালের পথে। শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৭ ০১:৫৯
Share: Save:

ডেঙ্গির নতুন উপসর্গ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে উত্তরবঙ্গে। পাশাপাশি চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস। নকশালবাড়ির বাসিন্দা রাজু দাসকে জেই সংক্রমণ নিয়ে সোমবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়। সিসিইউ’তে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। এ বছরই উত্তরবঙ্গে ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে। জলপাইগুড়ি ও উত্তর দিনাজপুরের বাসিন্দা তাঁরা।

এ দিকে জ্বর, গা-হাত-পা, চোখের কোলে ব্যথা তো রয়েইছে, সঙ্গে কারও পেটের অসুখ। কারও পেটে অত্যাধিক ব্যথা। জ্বরের দু’-তিন দিনের মাথায় কারও প্লেটলেট কমতে শুরু করছে। কারও রক্ত নালিকাগুলোতে ছিদ্র হয়ে শরীরে রক্ত জমছে।

ডেঙ্গি আক্রান্তদের একাংশের মধ্যে এ ধরণের বিভিন্ন নতুন উপসর্গ নজরে এসেছে চিকিৎসকদের। আর তা চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের। শহরের চিকিৎসকদের ডেকে দ্রুত সেগুলি নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানতে কর্মশালার আয়োজন করতে চলেছে স্বাস্থ্য দফতর।

জ্বরে আক্রান্ত শিলিগুড়ির অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মহেশ্বর মোদীও। ডেঙ্গির নোডাল অফিসার তিনি। হাকিমপাড়ায় স্বাস্থ্য দফতরের অফিসের উপরে ভাড়া থাকেন। যে সমস্ত ওয়ার্ডে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দিয়েছে তার মধ্যে ওই এলাকা অন্যতম। ম্যাক এলাইজা পরীক্ষার জন্য এ দিন তাঁর রক্তের নমুনা পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস জানান, জ্বরে আক্রান্ত অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট এলে তিনি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত কি না বোঝা যাবে।

তিনি বলেন, ‘‘ডেঙ্গিতে আক্রান্তদের মধ্যে বেশ কিছু নতুন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। চিকিৎসকদের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছি। দ্রুত তাদের নিয়ে কর্মশালা করে অভিজ্ঞতা জানতে চাওয়া হবে।’’ চিকিৎসক শেখর চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘এ বছর ডেঙ্গি আক্রান্তদের অনেকেই ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। অন্ত্রে সংক্রমণ ঘটছে। ডেঙ্গি রোগীদের মধ্যে এ ধরনের উপসর্গ আগে দেখা যেত না।’’

শিলিগুড়ি পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুজয় ঘটক আগেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ বার তাঁর মেয়েও জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় তাঁদের দু’জনকেই মাটিগাড়া উত্তরায়ণ উপনগরীর একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। সুজয়বাবুর ১৫ বছরের মেয়েকে রাতেই রক্ত দিতে হয়েছে।

এ দিন কুমোরটুলি লাগোয়া দুর্গানগর এলাকায় আইএমএ’র স্বাস্থ্য শিবিরে তিনশো জন বাসিন্দা নিখরচায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। তাদের ৬০ শতাংশই জ্বরে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য।

২০১৪ সালে ডেঙ্গির পাশাপাশি এনসেফ্যালাইটিসেও অনেকে আক্রান্ত হয়েছিলেন শিলিগুড়ি শহর এবং মহকুমার বিভিন্ন এলাকায়। গত দু’ বছর বয়স্কদের জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের প্রতিষেধক টিকা দেওয়া হলেও ৭৫ শতাংশ টিকাকরণ হয়েছে। ডেঙ্গির সঙ্গে তাই জাপানি এনসেফ্যালাইটিস বা অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় শহর এবং বসতি এলাকায় শুয়োর প্রতিপালন বন্ধের দাবি উঠেছে। তবে স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, এ বছর শিলিগুড়িতে এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ অনেকটাই কম। জাপানি এনসেফ্যালাইটিস এবং অ্যাকিউট এনসেফেলাইটিস সিনড্রমে এ বছর দক্ষিণ দিনাজপুরে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, চলতি সপ্তাহে গঙ্গারামপুর হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর রক্ত পরীক্ষা করে এনসেফেলাইটিসের জীবাণু মিলেছে।

জ্বর জ্বালা

ডেঙ্গি

নতুন উপসর্গ

• পেটের অসুখ, অন্ত্রে সংক্রমণ

• পেটে অতিরিক্ত ব্যথা

• জ্বরের তিন-চারদিনের মধ্যেই কমছে প্লেটলেট সংখ্যা

• রক্ত নালিকাতে ছিদ্র হয়ে রক্ত জমছে

বা়ড়ছে আক্রান্ত

• ২০১৪- ২ জন

• ২০১৫- ১০ জন

• ২০১৬- ৬৪ জন (মারা যান ১ জন)

• ২০১৭- এখন পর্যন্ত ২২ জন

এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত

• শিলিগুড়ি শহর- ১৯০

শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ- ১৮ (নকশালবাড়ির ৮, মাটিগাড়া ৬)

• পাহাড়- ৭

এইএস, জেই

• ২০১৪-তে প্রথম দেখা দিয়েছে অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রম

• শিলিগুড়িতে শুয়োর পালন বন্ধ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এখনও নানা এলাকায় চলছে শুয়োর পালন।

এ বছর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি

• এইএস ২৩ জন

• জেই ২ জন

• মারা গিয়েছেন ৩ জন (এইএস)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE