বাঁশ দিয়ে বাঁধ টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। —নিজস্ব চিত্র।
তিস্তা নদীর প্লাবন থেকে চাষের জমি রক্ষায় কৃষি দফতরের মৃত্তিকা সংরক্ষণ বিভাগের তৈরি ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতের দাবি উঠেছে। ময়নাগুড়ি ব্লকের বর্মণ পাড়া, চাতরার পাড়, মালবাজার মহকুমার মাস্টার পাড়া, কেরানি পাড়া, ঠাকুরদাস পাড়ার কয়েকশো চাষি পরিবার ওই দাবি তুলেছেন। যদিও কৃষি দফতরের মৃত্তিকা সংরক্ষণ বিভাগের তরফে জানানো হয়েছে তাঁদের পক্ষে বাঁধ মেরামত করা সম্ভব নয়। সম্ভব হলে সেচ দফতর তা করবে। সেচ দফতর ইতিমধ্যে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ শুরু করেছে।
কৃষি দফতরের মৃত্তিকা সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, চাষের জমি রক্ষার জন্য ১৯৮৫ সালে সেচ দফতরের উঁচু বাঁধ থেকে আধ কিলোমিটার দূরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ তৈরি করা হয়। মালবাজার মহকুমার বাসুসুবা সেন পাড়া এলাকায় ওই বাঁধের অন্তত আধ কিলোমিটার অংশ নদী গর্ভে তলিয়েছে। সেখানে বালির আস্তরণে ডুবে বিঘার পর বিঘা ধান, বাদাম ও পাট চাষের জমি নষ্ট হয়েছে। এবার নতুন করে ময়নাগুড়ি ব্লকের বর্মণ পাড়া এলাকায় বাঁধের ভাঙন দেখা দিয়েছে। কৃষি দফতরের মৃত্তিকা সংরক্ষণ বিভাগের কর্তারা জানান, ১৯৮৫ সাল থেকে কয়েকটি পর্যায়ে ওই বাঁধ তৈরির জন্য খরচ হয়েছে প্রায় দু’লক্ষ টাকা। কয়েকশো বিঘা চাষের জমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়। সেখানে উৎপাদিত সবজি শহরের বাজারগুলিতে যোগানের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ ভুমিকা নিয়েছে। কৃষি দফতরের মৃত্তিকা সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী অধিকর্তা বৃন্দাবন রায় বলেন, “চাষিদের দাবি মেনে ওই বাঁধ তৈরি করা হয়। গত তিন দশকে কয়েক কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হয়েছে সেখানে। বর্তমানে বাঁধ মেরামতের কাজ করার মতো আর্থিক সঙ্গতি আমাদের নেই। সেচ দফতর পারলে করবে।”
বাসুসুবা সেনপাড়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় অন্তত আড়াইশো চাষি পরিবার বিপাকে পড়েছে। এখানে মরশুমের প্রথম সবজি চাষ করে বাসিন্দারা রোজগার করত। এছাড়াও ধান, পাট, বাদামের উৎপাদন হত। এবার কিছুই নেই। চাষের জমি বালিতে তলিয়েছে। মালবাজার মহকুমার চাঁপাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রমণীকান্ত রায় বলেন, “সেচ দফতরকে বলার পড়ে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। ওই বাঁধ না থাকলে এলাকার চাষিরা সমস্যায় পড়বে। জেলার সবজি উৎপাদন মার খাবে।” চাষের জমি নষ্ট হয়েছে ময়নাগুড়ির চাতরার এলাকায়। এখানেও বিঘার পর বিঘা জমি বালিতে তলিয়েছে। স্থানীয় চাষি বিরেন দাস ও হরিবালা দাস জানান প্রায় তিনশো বিঘা জমি নষ্ট হয়েছে। বাঁধ মেরামত না হলে আরও কয়েকশো বিঘা জমি নষ্ট হবে। উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান গৌতম দত্ত বলেন, “বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। বর্ষা এখনও অনেক বাকি আছে। জানি না শেষ পর্যন্ত সেটা টিকে থাকবে কিনা।”
চাষিদের আশা বাঁধ মেরামতের কাজ শেষ হলে কয়েক দশক নিশ্চিন্ত থাকা সম্ভব হবে। ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুভাষ বসু বলেন, “এলাকার চাষিরা জানিয়েছে তিস্তা নদীর ওই এলাকার সবজি জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ি বাজারে যায়। কৃষি দফতরের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেও জেনেছি এখানে আবাদ বন্ধ হলে বাজারে সবজির যোগান কমবে। সেচ দফতর উদ্যোগী হওয়ায় এলাকার চাষিরা কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy