মুখোমুখি: আধিকারিকদের ক্ষোভের কথা বলছেন আবাসিকরা। ইংরেজবাজারে। নিজস্ব চিত্র
ডেঙ্গির মতো মশাবাহিত রোগ নিয়ে আবাসনে জেলা প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সচেতনতা সভাকে স্বাগত জানালেও সরকারি আবাসন চত্বর কেন আবর্জনাময়, নিকাশি নালা কেন সাফ হয় না- তা নিয়ে সেই সভাতেই ক্ষোভ উগরে দিলেন আবাসিক মহিলারা। রবিবার দুপুরে ইংরেজবাজারের মহেশমাটির সরকারি আবাসনে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, পুরপ্রধান, মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিকেরা মঞ্চে থাকাকালীনই ক্ষোভের কথা জানান তাঁরা।
রীতিমতো মাইক্রোফোন হাতে পূজা দাস নামে এক আবাসিক বলেন, ‘‘এই চত্বরে বাইরের এলাকার সমস্ত নোংরা আবর্জনা ফেলা হয়। গরু, কুকুর অবাধে ঢুকে যায়। নিকাশি নালা সাফ হয় না। কিছু ঢাকনা ছাড়া জলের ট্যাঙ্ক রয়েছে। সেগুলোও পরিষ্কার হয় না। এ জন্য মশা বাড়ছে। আপনারা এসেছেন বলে আজ গরু ঢোকেনি, আশপাশ পরিষ্কার করে ব্লিচিং ছিটানো হয়েছে।’’ ভরা সভায় এমন ক্ষোভের মুখে বিব্রত হয়ে পড়েন প্রশাসনের কর্তারা।
জেলাজুড়েই ডেঙ্গির প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে। সূত্রের খবর, তা বেশি বাড়ছে ইংরেজবাজারে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ তে এই পুরসভায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৬৫ জন কিন্তু ২০১৭ তে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৭০ জনে। তাই এ বছরের জানুয়ারি থেকেই ইংরেজবাজারে ডেঙ্গি মোকাবিলায় প্রতি মাসে ১০ দিন করে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা, সচেতনতা, মশা মারতে তেল স্প্রে চলছে।
সচেতনতা প্রচার নিয়ে শহরের আবাসনগুলোতে নানা সমস্যা রয়েছে বলে অভিযোগ। শহরে সরকারি- বেসরকারি মিলে ৬৭টি আবাসন রয়েছে। অভিযোগ, পুর-স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রচার এবং সমীক্ষায় গিয়ে বাধার মুখে পড়ছেন শহরের একাধিক আবাসনে। কোনও আবাসনের নিরাপত্তা কর্মী তাঁদের ঢুকতে দেয় না, কোথাও বা আবাসিকরা সহযোগিতা না করে ফিরিয়ে দেন। সে কারণে এ বার সরকারি ও বেসরকারি আবাসনগুলিতে সচেতনতা প্রচারে জোর দেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর।
এরই অঙ্গ হিসেবে রবিবার শহরের ২৪টি সরকারি ও বেসরকারি আবাসনে একযোগে সচেতনতা প্রচার চালানো হল জেলা প্রশাসনের তরফে। জেলা প্রশাসনের সমস্ত আধিকারিক, স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভারও একাধিক আধিকারিকরা বিভিন্ন আবাসনে সভা করে প্রচার করেন। ঘরে ঘরে গিয়েও পরিস্থিতি দেখেন।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন,‘‘ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশা সাধারণত পরিষ্কার জলেই জন্মায়। আবাসনগুলোতে এসি, ফুলের টবের মত জায়গায় পরিষ্কার জল জমায় আবাসনগুলোতে প্রচার জরুরী ছিল।
মহেশমাটির সভায় ছিলেন জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য, পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ, পুরপ্রধান নীহাররঞ্জন ঘোষ, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৈয়দ শাহজাহান সিরাজ। মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে করণীয় কী- তা বোঝান প্রশাসনের কর্তারা। শেষে আবাসিকরা তাঁদের ক্ষোভের কথা জানান। কৌশিক বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘গত বছর মশাবাহিত রোগের প্রকোপ হওয়ায় আবাসনগুলোতে সচেতনতা প্রচার চালাচ্ছি। এটা চলবে।’’
এ দিন সভায় আবাসিকরা নিরাপত্তাহীনতারও অভিযোগ তোলেন। পুলিশ সুপারের কাছে তাঁরা আবাসন চত্বরে পুলিশি টহল ও মূল গেটে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েনের দাবি জানান। জেলাশাসক বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy