Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সংস্কৃতি যেখানে যেমন...

চায়ের দোকানের আড্ডা জন্ম দিল সাহিত্যপত্রিকা ‘আড্ডা উপাখ্যান’ এর। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এই কর্মযজ্ঞের নেপথ্যে রয়েছে একটি খাট । জলপাইগুড়ির বাবুপাড়ার নার্সিংহোম সংলগ্ন চায়ের দোকানের আড্ডাবাজরা বুঝিয়ে দিলেন সাহিত্যচর্চাতেও তাঁরা কিছু কম যান না।

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২১
Share: Save:

চায়ের আড্ডা থেকে সাহিত্যপত্রিকা

চায়ের দোকানের আড্ডা জন্ম দিল সাহিত্যপত্রিকা ‘আড্ডা উপাখ্যান’ এর। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এই কর্মযজ্ঞের নেপথ্যে রয়েছে একটি খাট । জলপাইগুড়ির বাবুপাড়ার নার্সিংহোম সংলগ্ন চায়ের দোকানের আড্ডাবাজরা বুঝিয়ে দিলেন সাহিত্যচর্চাতেও তাঁরা কিছু কম যান না। ‘ষাটোর্ধ্ব নীলাঞ্জনবাবুর ডবল বেডের খাট ক্রয় করবার ইচ্ছা’ প্রসঙ্গে আড্ডবাজরা শোনালেন খাট সম্পর্কিত সরস কথা। কবিতা এবং ছড়া শোনালেন সুব্রত বাগচি, দেবাশিস রায়চৌধুরী, সমরেন্দ্রনাথ দত্ত, বিভাস রায়, গৌতমেন্দু নন্দী, জয়ন্ত দে, কুমার সরকার এবং নীলাঞ্জন দাশগুপ্ত প্রমুখ। এদের কেউ সরকারি কর্মচারী, কেউ বা অবসর নিয়েছেন চাকরি জীবন থেকে। তাঁদের আলাপ-আলোচনায় প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়ের গল্প আর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান। সুদৃশ্য বাক্সে বাঁধা লাল-হলুদ, সবুজ-মেরুন ফিতের বন্ধন থেকে ‘আড্ডা উপাখ্যান’কে আনুষ্ঠানিক ভাবে মুক্তি দিলেন বিভাস রায়। চার রঙের ফিতে কেন? ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান বিষয়ে কোনও আপসে নেই আড্ডাবাজরা। তাই। তাঁদের সাহিত্যপত্রিকাতেও স্থান পেল খাট সম্পর্কিত রম্যরচনা এবং কবিতা। সঙ্গে গৌতমেন্দু নন্দীর ছড়ায় আড্ডাবাজদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়। ত্রুটি ছিলনা আপ্যায়নেরও। ঘন ঘন চা, সঙ্গে বিস্কুট, ঝুরিভাজা আর সন্দেশ। আড্ডার সূচনা লগ্নে গ্রামাফোনে আঙুরবালার গান শুনিয়ে তাঁরা বুঝিয়ে দিলেন বাঙালি আছে বাঙালিতেই। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চায়ের দোকানের কর্ণধার ত্রিপিত মাহাতও।

রাজবংশী ভাষা আকাদেমির ভোগা

অগ্নিশিখার পরশে উজ্জ্বল একটি ভাষা। সেই ভাষাও মায়ের ভাষা। তার শব্দে উত্তরের মাটির ঘ্রাণ। সেই শব্দে গাঁথা প্রবন্ধ উককথা (উপকথা), গল্প, কবিতা, নাটক আর পালার শরীরেও মাটির সেই সুবাস। ‘‘রাজবংশী ভাষায় নামটা নিয়া আর কুনও কথা থাকিবারের পারে না’’, ‘‘কলীন্দ্রনাথ বর্মন: একেনা বড় মানসিক নিয়া দুখুনা ছোট কথা’’, ‘‘উত্তরবঙ্গের গাঁধী: দরদরিয়া যজ্ঞেশ্বর রায়’’, ‘‘একখান ব্রতের উককথা,’’ ‘‘অবেলা’’ এমনই সব শব্দ কোলাজ তৈরি করেছেন গিরিজাশঙ্কর রায়, নিখিলেশ রায় এবং আরও অনেকে। তাঁদের শব্দকোলাজে মাটির গন্ধের সঙ্গে মিশে যায় উত্তরের নিজস্ব সুর। নিখিলেশ রায়ের সম্পাদনা, স্পন্দিত সুর আর সুবাসকে পরিণত করে উত্তরের নিজস্বীতে। সেই নিজস্বীর ধারক এবং বাহক হয়ে ওঠে, রাজবংশী ভাষা আকাডেমির ‘‘ছয়মাসিয়া মুখপত্র’’ ভোগা।

চল্লিশ-পঞ্চাশের বাঙালি

চল্লিশের দশকের সূচনালগ্নে স্বাধীনতা সংগ্রাম, পরবর্তীতে স্বাধীনতা এবং সেই স্বাধীনতা নিয়ে দ্বিখণ্ডিত ভারত, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। তারও পূর্বে মহামারি, মন্বন্তর। এই সময়ে ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যার প্রভাব আজও বহন করছি। এই ভাবনা থেকেই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হল চল্লিশ-পঞ্চাশ দশকের বাঙালি জীবন ও বাংলা সাহিত্য শীর্ষক জাতীয় আলোচনাচক্র। উদ্বোধক উপাচার্য সোমনাথ ঘোষ। স্বাগত ভাষণ দেন বিভাগীয় প্রধান উৎপল মণ্ডল। প্রধান অতিথি নাট্যব্যক্তিত্ব মনোজ মিত্র জানান, চল্লিশ-পঞ্চাশ দশকের বাঙালির ক্রমাগত পরিবর্তন দেখেছেন এক বিশেষ আর্থসামাজিক রাজনৈতিক টানাপড়েনের আঙিনায়। চল্লিশ-পঞ্চাশ দশকের বাংলা কবিতার পালা বদলের কথা তুলে ধরেন অশ্রুকুমার সিকদার। ছিলেন সাধন চট্টোপাধ্যায়, হিমবন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়. অতনু শাসমল, নন্দিতা বসু, মুনমুন গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ।

অনুভবের আলোয়

কথা এবং কবিতা—দুই পর্বে তনুশ্রী পালের গদ্যকথা, ‘অনুভবের আলোয় কিছু কথা ও কবিতা’। ‘কথা’ পর্বে রবীন্দ্রনাথ এবং সঞ্জয় ভট্টাচার্যকে নিজের অনুভব থেকে দেখেছেন লেখক। অন্য রচনায় কখনও ভ্রমণ, কখনও নস্টালজিয়া আর স্মৃতিচারণা। লেখকের গদ্যে এক ধরনের সরলতা মিশে থাকে, তা শেষপর্যন্ত গল্পে পরিণত হয়। সেই গল্প ভাববার, নস্টালজিয়ায় আচ্ছন্ন হবার। ‘কথা’ পর্বে বিষয় নির্বাচন, পাঠের আগ্রহ তৈরি করে ‘কবিতা’ পর্বের। ‘রাত্রিকে: সঞ্জয় ভট্টাচার্য’, নিঃসন্দেহে মূল্যবান সংযোজন। শক্তিপদ ব্রহ্মচারী, চন্দ্রিমা দত্ত, সমীর চট্টোপাধ্যায়, অরুণেশ ঘোষ, সজল বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজা মিত্র এবং গৌরাঙ্গ মোহান্তর কবিতা অনুভবের গদ্যকথায় সম্পূর্ণ হয় দ্বিতীয় পর্বটি। দুই পর্বের ‘অনুভব’ লেখক-পাঠক মেলবন্ধন তৈরি করে।

নায়কের অপেক্ষায় না থেকে

সাধারণত নাটকে একজন নায়়ক ও তাঁকে ঘিরে কিছু পার্শ্বচরিত্র থাকে। এই বিশ্বাস থেকে একজন নাট্যকার শ্রমজীবী কিছু সাধারণ মানুষকে নিয়়ে নাটক মঞ্চস্থ করতে আসেন। নাটকের ক্রমবিন্যাস অনুযায়়ী ওথেলো, কিং লিয়়র, জুলিয়াস সিজার, তোরাপ, শাহজাহানের মতো দেশবিদেশের বিভিন্ন চরিত্র মঞ্চে অবতীর্ণ হয়। কিন্তু নাট্যকার কিছুতেই অভিনব নাটক দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করতে পারছিলেন না। শেষে যে শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ নাটক করবেন বলে এসেছিলেন, তারা নায়়কের আসার অপেক্ষায় না থেকে নিজেরাই মুখ্যচরিত্রে নেমে পড়েন। যবনিকা পড়ার আগে ঘোষিত হল সংগ্রামী সাধারণ মানুষের জয়়। সম্প্রতি জলপাইগুড়ি বান্ধব নাট্যসমাজের প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হল রবীশ্বর ভট্টাচার্য রচিত নাটক ‘উত্তরণ’। একই দিনে পরিবেশিত হল তাদের আর একটি নাটক ‘বুড়োশালিকের ঘাড়ে রোঁ।’ দুটি নাটকের সম্পাদনা ও নির্দেশনায় ছিলেন বরুণ ভট্টাচার্য। শহরের মানুষ দুটি নাটকই উপভোগ করেন।

পঞ্চানন বর্মা স্মারক বক্তৃতা

বিগত পাঁচ বছরের মতো এ বারও পঞ্চানন বর্মা স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করেছিল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন লোকাল ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচার্স। ‘ফোকলোর অ্যান্ড ট্র্যাডিশনাল নলেজ’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতায় সভাপতিত্ব করেন ডঃ গিরীন্দ্রনারায়ণ রায়। মুখ্য বক্তা ছিলেন অসমের আনন্দরাম বড়ুয়া ইনস্টিটিউট অফ ল্যাঙ্গুয়েজ লিটারেচার অ্যান্ড কালচারের ডিরেক্টর ডঃ দীপক কুমার কলিতা। তিনি বলেন, ‘‘লোককথা ও তার ঐতিহ্য আমাদের সমাজকে ধারণ করে আছে। যা আমাদের অস্তিত্বের কথা জানান দেয়। সন্ধান দেয় শিকড়ের। আধুনিক শিক্ষা বা প্রযুক্তির মূলেও রয়েছে এই লোককথার কাহিনিগুলি।’’ সভায় উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক প্রকাশ পট্টনায়ক, সমর বিশ্বাস-সহ বহু বিশিষ্ট জন। ছিল প্রশ্নোত্তর পর্বও। সেন্টারের ডিরেক্টর ডঃ নিখিলেশ রায় জানান, উত্তর পূর্ব ভারতের অন্যতম প্রধান সমাজসংস্কারক, মনীষী পঞ্চানন বর্মা ছিলেন আঞ্চলিক সাহিত্য, ভাষা, সংস্কৃতিচর্চার পথপ্রদর্শক। সমাজজীবনে তাঁর অবদানের কথা মাথায় রেখে গবেষণা কেন্দ্র এই স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে।

তোর হাসিকে নিয়ে

সম্প্রতি দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা প্রেস ক্লাবে প্রকাশিত হল শিল্পী নিরুপম ভাদুড়ির আধুনিক গানের সিডি ‘তোর হাসিকে নিয়ে’। আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করলেন কবি মৃণাল চক্রবর্তী। সিডিটিতে রয়েছে শিল্পীর নিজের লেখা এবং সুরারোপিত মোট আটখানি গান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE