Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Lockdown

নিষেধের পাহারায়

অভিযোগ, বাস্তবে ওই এলাকায় লকডাউনের কোনও প্রভাবই নেই। রাস্তায় নেই কোনও ব্যারিকেড।

ব্যারিকেড ভেঙেই: মাঝেরডাবরি এলাকার উত্তর পানিয়ালগুড়ির তিরকিপাড়ায়। ছবি: নারায়ণ দে

ব্যারিকেড ভেঙেই: মাঝেরডাবরি এলাকার উত্তর পানিয়ালগুড়ির তিরকিপাড়ায়। ছবি: নারায়ণ দে

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২০ ০৬:৩৭
Share: Save:

করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সচেতনতা, সাবধানতা, প্রচারেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। তাই এ বারে কন্টেনমেন্ট জ়োনের তালিকা তৈরি করে সেখানে লকডাউন শুরু হয়েছে। কেমন ছিল লকডাউন-চিত্র, নানা জায়গায় ঘুরে দেখল আনন্দবাজার।

বিস্মিত বাসিন্দারা

মাঝেরডাবরি: করোনা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন জানান দিচ্ছে, মাঝেরডাবরি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১/২৬৪ নম্বর পার্টের একাংশ কন্টেনমেন্ট জ়োনের আওতায়। যে এলাকাটি পূর্ব মাঝেরডাবরি এসসি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ দিকে পড়ছে। সরকারি নির্দেশে যেখানে লকডাউন হওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ, বাস্তবে ওই এলাকায় লকডাউনের কোনও প্রভাবই নেই। রাস্তায় নেই কোনও ব্যারিকেড। সেখানকার মানুষের অন্য কোনও এলাকায় যাওয়ার ব্যাপারেও নেই কোনও নিষেধাজ্ঞা। অথচ, স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে উল্লেখ না থাকলেও ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর পানিয়ালগুড়ির ১১/২৪৫ নম্বর পার্টের একাংশে শুরু হয়েছে লকডাউন। যার আওতায় পড়েছে আট-ন’টি বাড়ি।

স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সীমা মিনজ বলেন, ‘‘পাঁচ-ছ’দিন আগে এলাকার বছর ছয়েকের এক শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়। তার পরে বৃহস্পতিবার পুলিশের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে ব্যারিকেড দেওয়া হবে। বিকালের পরে সেখানে লকডাউন শুরু হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের তরফে পূর্ব মাঝেরডাবরিতে কন্টেনমেন্ট জ়োনের কথা বলা হচ্ছে!’’ সেখানকার বাসিন্দা সুমিতা নাগ বলেন, ‘‘বিষয়টি শোনার পরে আমরাও অবাক হয়ে যাই। কারণ ১১/২৬৪ নম্বর পার্টের কেউ এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়নি। সে জন্যই হয়তো এখানে কোনও ব্যারিকেডও দেওয়া হয়নি। নেই কোনও নিষেধাজ্ঞাও।’’ তবে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘কেন এমনটা হল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

দু’বেলা ডিম-ভাত

বীরপাড়া: দিন কয়েক আগেই মাসকাবারি বাজার করার সময় একটু বেশি করেই চাল ও ডিম কিনে রেখেছিলেন বীরপাড়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সুভাষপল্লি এলাকার বাসিন্দা মদন ঠাকুর। তার ঠিক পরেই এলাকার এক যুবকের করোনা ধরা পড়ে। ফলে তাঁর বাড়ির এলাকা কনেটেনমেন্ট জ়োনে পড়ে যায়। রাস্তার দু’দিকে ব্যারিকেড দিয়ে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে কড়াকড়ি বেড়ে যায়। শুক্রবার বাড়িতে বসে মদন বলছেন, ‘‘কন্টেনমেন্ট ঘোষণা হওয়ার আগে বাজার থেকে কিছু আনাজও এনেছিলাম। কিন্তু তা শেষ। ফলে এখন ডিম-ভাতই দু’বেলার মেনু হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’

তবে আচমকা বন্দি দশায় এ ভাবে বাড়িতে সময় কাটাতে সমস্যা হলেও পেশায় সিমেন্ট বিক্রেতা মদন কিন্তু বলছেন, ‘‘সুস্থ থাকতে এই লকডাউনটা জরুরি ছিল।’’ তবে শুধু সুভাষপল্লিই নয়, বীরপাড়া থানার ভানুনগর ও বান্দাপানি চা বাগানের হাটখোলা লাইনের একাংশও কন্টেনমেন্ট জ়োনের আওতায় পড়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই এলাকাগুলোতে দিনের বেশ কয়েকবার করে টহল দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে ব্যারিকেড করে দেওয়ার পাশাপাশি মাইকে প্রচারও করে বলাও হচ্ছে— সেখান দিয়ে কেউ যেন যাতায়াত না করেন। বীরপাড়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্তারা জানিয়েছেন, বাসিন্দাদের বাজার-সহ যে কোনও জিনিসের জন্য চারটি টোটো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বাসিন্দাদের ফোন পেলেই টোটো চালকেরা ব্যারিকেড পর্যন্ত গিয়ে জিনিস দিয়ে আসছেন।

উদ্যোগী স্থানীয়েরা

ফালাকাটা: বৃহস্পতিবার ফালাকাটার এক স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে অরবিন্দপাড়ায় তাঁর বাড়ি সংলগ্ন গলিকে বাঁশ দিয়ে ঘিরে দিলেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এলাকাটিকে সরকারি ভাবে কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করতে প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীর বাড়ির লোকেদেরও বাইরে বের না হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তাঁদের কোনও জিনিসের প্রয়োজন হলে তা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তাঁরা।

ভরসা শ্যালক

মেখলিগঞ্জ ও কোচবিহার: মেখলিগঞ্জ পুর এলাকায় চার জন করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলতেই পুরসভার ১ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড দু’টিকে কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষনা করেছে প্রশাসন। ওই নির্দিষ্ট এলাকা বাঁশ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। তবে সকলের স্বার্থে প্রশাসনের নির্দেশ পুরোপুরি মানতে চান তাঁরা। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কন্টেনমেন্ট জ়োনের মধ্যেই পড়েছে বাসন বিক্রেতা তিমিরবরণ ভৌমিক ও সার ব্যবসায়ী রাজু ভৌমিকের বাড়ি।

তিমির বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার যখন এলাকায় এক দম্পতির করোনা আক্রান্ত হওয়ার কথা জানতে পারি তখনই মনে মনে প্রস্তুত ছিলাম কন্টেনমেন্ট জ়োনের মধ্যে আমার বাড়ি পড়বে। তাই বাইরে যেতে না পারলে দোকান চলবে কী করে এটা ভেবেই ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, আমার শ্যালকের হাতে দোকানের চাবি দিয়ে আসি। যত দিন ঘরবন্দি থাকব দোকান চালানোর দায়িত্ব থাকবে শ্যালকের হাতেই।’’

তিমিরের দোকান শ্যালক চালালেও রাজুবাবুর সেই উপায় নেই। সেই কারণে তাঁকে পুরোটাই কর্মচারীদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তবে রাজুর সমস্যা অন্য জায়গায়। টেলিফোনে রাজু বলেন, ‘‘সারের গুদাম বাড়িতে হওয়ায় জিনিসপত্র দোকানে পাঠাতে পারছি না। ফলে বিক্রি কমেছে।’’

একই রকম সমস্যায় পড়েছেন বিমাকর্মী সুদীপ নন্দী-সহ অনেকেই। কোচবিহারের সদরের পুন্ডিবাড়ির ডাঙাপাড়ায় শুরু হয়েছে লকডাউন।

(প্রতিবেদক— নমিতেশ ঘোষ, পার্থ চক্রবর্তী, দেবব্রত ঘোষ, সজল দে )

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lockdown Containment Zone North Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE