Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Kumortuli

‘আমাদের জন্য নয় এ পুজো’

ফি বছর মুম্বই থেকে হইহই করে ফিরতেন কার্তিক। ব্যাগের ভিতর তরে তরে সাজিয়ে রাখতেন নতুন জামাকাপড়।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২০ ০৭:০১
Share: Save:

কাঁধে সিমেন্টের বস্তা। মাথায় বালি। হাঁটতে হাঁটতে হাঁপিয়ে উঠছেন কার্তিক। বলছেন, “কখনও ভাবিনি এমন দিন আসবে!” মাথার উপরে সূর্য়ের তেজ তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছে। ঘর্মাক্ত শরীর ভিজে চুপচুপে। গোলগাল-সুঠাম চেহারা ক’দিনেই যেন ভেঙে পড়েছে। রোদে পুড়ে কালো হয়ে উঠতে শুরু করেছে মুখমণ্ডল। খানিক দূরেই কুমোরটুলি। একটি ছোট্ট মাইকে মায়ের-ই আরাধনার গান চলছে, গুণ গুণ করে। মায়ের মূর্তির শেষ সময়ের কাজে চূড়ান্ত ব্যস্ততা। মায়ের পাশেই দাঁড়িয়ে কার্তিক। গোলগাল-সুঠাম চেহারা, তার মুখশ্রী ক্রমশ যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠতে শুরু করেছে। সেদিকে’ই চোখ যায় হাঁপিয়ে ওঠা যুবকের। দূর থেকেই আঙুল উঁচিয়ে বলেন, “এখন আর আমি ওই কার্তিক নই।” চোখ ছলছল করে আসে তাঁর। গলা জড়িয়ে আসে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, “ছোট্ট ছেলেটাকে এ বার পুজোয় একটা জামি কিনে দিতে পারিনি। মনে হয় আমাদের জন্য নয় এ পুজো।”

ফি বছর মুম্বই থেকে হইহই করে ফিরতেন কার্তিক। ব্যাগের ভিতর তরে তরে সাজিয়ে রাখতেন নতুন জামাকাপড়। একটি গাড়ি ভাড়া করেই পৌঁছে যেতেন বাংলাদেশের সীমান্তের গ্রাম দিঘলটারিতে। জানালা দিয়ে দূর থেকেই বাবা’কে দেখে ফেলত কুণাল। ‘বাবা’-‘বাবা’ চিৎকার করে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ত সে। নতুন জামা হাতে নিয়ে কি আনন্দ কুণালের। স্ত্রী টুম্পাও হাসি হাসি মুখে দাঁড়াতেন স্বামীর সামনে। নতুন শাড়ি হাতে পেয়ে তাঁর মন ছুট দিত এক মণ্ডপ থেকে আরেক মণ্ডপে। এ বার পুজোর অনেকদিন আগেই ফিরতে হয় কার্তিককে। মুম্বইয়ে যে কাপড় কারখানায় দেখভালের কাজ করতেন, করোনার প্রকোপ শুরু হতেই তা বন্ধ হয়ে যায়। তবুও কার্তিক নতুন করে সব ঠিক হওয়ার আশায় সেখানেই বসে ছিলেন। কিন্তু ফিরতে হয়েছে। জেলায় ফেরার তাঁর কোভিড টেস্ট হয়। পজ়িটিভ হওয়ার পরে কয়েকদিনের ঠিকানা হয় শিলিগুড়ি’র কোভিড হাসপাতাল।

বাড়ি ফিরে জমানো টাকায় কয়েক’দিন চলে যায়। ভেবেছিলেন, নতুন কোনও কাজ পাবেন। কেউ পাশে দাঁড়াবে। কিছুই হয়নি। অবশেষে দিনমজুরি’র খোঁজে বেড়িয়ে পড়েন। একটি ছোট্ট সাইকেলে কিলোমিটারের পরে কিলোমিটার ঘুরেছেন। দিনশেষে যা হয়, পকেটে পুড়ে বাড়ি ফেরেন। ছোট্টবেলায় সুন্দর-গোলগাল চেহারার জন্য মা আদরের নাম রেখেছিলেন কার্তিক। সেই নামেই শেষ পর্যন্ত পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। দুর্গাপুজোর সময় তাই মণ্ডপে ঢুকলে মায়ের সঙ্গেই কার্তিকের দিনে বেশি নজর ছিল তাঁর। কখনও কল্পনায় নিজেকেও সাজিয়ে ফেলতেন একই ভাবে। আজ, মণ্ডপের অনেক অনেক দূর থেকে দাঁড়িয়েই তাঁর মনে হয়, “ওই কার্তিকের সঙ্গে একটুকুও মিল নেই।” বাংলা থেকে মন আবার ছুটতে থাকে ভিনরাজ্যের পথে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kumortuli Durga Puja 2020
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE