Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্প্রীতির বার্তা নিয়েই পুজো হেমতাবাদে

হেমতাবাদ ব্লকের কালীবাড়ি সর্বজনীন দুর্গোত্সব কমিটির খুঁটিপুজো হল বৃহস্পতিবার। এ দিন সকালে পুজোমণ্ডপ চত্বরে পুরোহিত ডেকে ঢাক বাজিয়ে খুঁটিপুজোর আয়োজন করেন কমিটির সদস্যেরা।

একযোগে: খুঁটিপুজোয় হাজির বাসিন্দারা। হেমতাবাদে। নিজস্ব চিত্র

একযোগে: খুঁটিপুজোয় হাজির বাসিন্দারা। হেমতাবাদে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
হেমতাবাদ শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৪০
Share: Save:

হেমতাবাদ ব্লকের কালীবাড়ি সর্বজনীন দুর্গোত্সব কমিটির খুঁটিপুজো হল বৃহস্পতিবার। এ দিন সকালে পুজোমণ্ডপ চত্বরে পুরোহিত ডেকে ঢাক বাজিয়ে খুঁটিপুজোর আয়োজন করেন কমিটির সদস্যেরা। খুঁটিপুজোয় এলাকার হিন্দু ও মুসলিম মিলিয়ে সমস্ত বাসিন্দাই সামিল হয়েছিলেন। এ দিনের পুজোর পরেই শুরু হয় মণ্ডপ তৈরির কাজ।

এলাকার হিন্দু ও মুসলিম বাসিন্দাদের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখতে ১৯৪৬ সালে মুসলিম জমিদার বলে পরিচিত ওবাইদুর রহমান চৌধুরী ও লিয়াকত আলি ওই দুর্গাপুজো শুরু করেন। সম্প্রীতি বজায় রাখতে তাঁদের আবেদনে সাড়া দিয়ে ওই পুজোয় সামিল হন তত্কালীন হেমতাবাদ থানায় কর্মরত একাধিক পুলিশকর্মী, হেমতাবাদের বিডিও, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একাধিক চিকিত্সক-সহ বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মীদের একাংশ। ওই বছরই পুজো পরিচালনার জন্য এলাকার হিন্দু ও মুসলিম বাসিন্দাদের নিয়ে গড়ে ওঠে হেমতাবাদ কালীবাড়ি সর্বজনীন দুর্গোত্সব কমিটি। সেই থেকে শুরু ওই দুর্গোপুজো এখনও সম্প্রীতির পুজো বলেই পরিচিত।

এ বছর এই দুর্গাপুজো ৭১তম বর্ষে পড়ল। দেশভাগের পরে পুজোর অন্যতম দুই উদ্যোক্তা ওবাইদুর রহমান চৌধুরী ও লিয়াকত আলি পরিবারের লোকেদের নিয়ে বাংলাদেশে চলে গেলেও সম্প্রীতির পরিবেশ ধরে রাখতে কোনও বছরই পুজো বন্ধ হয়নি। পুজো শুরুর প্রাচীন ইতিহাস মেনে প্রতি বছর পদাধিকার বলে পুজো কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকেন হেমতাবাদ থানার ওসি। এ বছর ওই থানার ওসির দায়িত্বে রয়েছেন বিশ্বনাথ মিত্র। তাঁর দাবি, হেমতাবাদ সদরের বাসিন্দাদের প্রতি বছর দুর্গাপুজোর আয়োজনের ফলে পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষে সারা বছর এলাকায় সম্প্রীতি বজায় রাখার কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছে।

কমিটির এ বছরের দুর্গাপুজোর আকর্ষণ প্রাচীন মন্দিরের আদলে পুজোমণ্ডপ। প্লাইউড, পাট, থার্মোকল, কুলো, চালুন দিয়ে তৈরি ওই মণ্ডপের গায়ে বেত ও বাঁশ দিয়ে নানা শিল্পকলা ফুটিয়ে তোলা হবে। মণ্ডপের ভিতরে থাকছে দুর্গাপ্রতিমার ন’টি রূপ। সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে আলোকসজ্জায় হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের নানা উত্সব ফুটিয়ে তোলা হবে জানালেন পুজো উদ্যোক্তারা।

পুজো কমিটির উপদেষ্টা তথা হেমতাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান নারায়ণ দাস ও অন্যতম সদস্য আশরাফুল আলির দাবি, তাঁদের পুজোর কোনও বাজেট ধরা হয় না। এলাকার হিন্দু ও মুসলিম বাসিন্দারা স্বেচ্ছায় নিজেরা চাঁদা দিয়ে পুজোর সমস্ত আয়োজন করেন। পুজোর তিন দিন নাচ, গান, আবৃত্তি-সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। নবমীর দিন দুই সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা পাশাপাশি বসে খিচুড়ি খান।

এলাকায় সারা বছর সম্প্রীতি বজায় রাখতে গত সাত দশক ধরে ওই পুজো গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। কখনও বাইরের কোনও গুজব বা প্ররোচনা ছড়ালে দুর্গাপুজোর মতোই এলাকার হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা বৈঠক করে এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE