দুই সপ্তাহের মধ্যে ফের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল বিস্তীর্ণ এলাকা। মঙ্গলবার, সকাল ৯টা ১৮ মিনিটে কোচবিহার শহরের পাশাপাশি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এই কম্পন অনুভূত হয়। উত্তরবঙ্গের আরও বেশ কিছু এলাকাতেও কম্পন অনুভব করেন বাসিন্দারা। এ দিন রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৪.৭। গত ১২ সেপ্টেম্বর হওয়া ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৫। সেদিন ওই ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল অসমের কোকরাঝাড়। মঙ্গলবার, কম্পনের উৎসস্থল ছিল অসমের বরপেটা এলাকা।
ভূমিকম্পে কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর অবশ্য মেলেনি। তবে বারবার ভূমিকম্পের কারণে কোচবিহারের প্রাচীন স্থাপত্য রক্ষায় ‘রেট্রোফিট’ প্রযুক্তি ব্যবহারের দাবি উঠছে।
কয়েকদিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার ভূমিকম্প হওয়ায় অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। আলিপুরদুয়ার শহরের বাসিন্দা তমাল সরকার বলেন, ‘‘বাড়িতে চেয়ারে বসে কাগজ পড়ছিলাম৷ আচমকাই যেন চেয়ার সমতে ঘরটাই দুলে উঠল৷ প্রথমে বুঝতে পারিনি কী হল। পর মুহূর্তেই বুঝলাম, এটা ভূমিকম্প৷’’ কোচবিহারের বাসিন্দা স্বপন দে বলেন, ‘‘দিন পনেরোর মধ্যেই দু’বার ভূমিকম্প হল৷ বিষয়টা ভাল বলে তো মনে হচ্ছে না৷’’
কম্পনের জেরে রাজ আমলের প্রাচীন স্থাপত্য নির্দশনের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা বেড়েছে শহরবাসীর। ওই বিষয়ে সরব হয়েছেন কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, আগেও ভূমিকম্পের পরে রাজবাড়ি ও বিভিন্ন প্রাচীন স্থাপত্য রক্ষায় ‘রেট্রোফিট’ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের দাবি করা হয়। কিন্তু তা গুরুত্ব পায়নি। একমাসে পরপর দু’বার কম্পনে ক্ষতির আশঙ্কা আর উদ্বেগ আরও বাড়েছে। ওই বিষয়ে প্রশাসন, পুরাতত্ত্ব দফতরে স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সোসাইটির কর্তারা।
সোসাইটির এক কর্তার কথায়, ‘‘নির্মাণের সময় ব্যবহার করা হত না, এমন নানা সামগ্রী দিয়ে প্রাচীন বাড়ির পরিকাঠামো শক্তপোক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে। যার পোশাকি নাম রেট্রোফিট প্রযুক্তি। তাতে পুরনো ভবনে নতুন স্তম্ভ নির্মাণ করা, ইটের দেওয়ালের দু’দিকে স্টিলের পাতের বিশেষ মোড়ক বসানোর মতো পরিকল্পনা করা হয়। ভূমিকম্পজনিত কম্পনে ক্ষতি এড়াতে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে এই ভাবে।’’
গবেষক নৃপেন পাল বলেন, “১৭৮৭ সালে কোচবিহারে বড়মাপের ভূমিকম্প হয়। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয় সেবার। রাজবাড়িতে এক কর্মচারী নাকি দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যান। এ ছাড়াও আরও কয়েকজনের মৃত্যু হয় বলে শুনেছি। সেবার মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ প্রাসাদের বারান্দা থেকে লাফিয়ে প্রাণে বাঁচেন বলে শোনা যায়।”
কোচবিহার ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা বলে চিহ্নিত। ভূগর্ভস্থ পাতের গতিবিধি নজরে রাখতে, ভবিষ্যতে কম্পনের আশঙ্কা কতটা তা জানতে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া কোচবিহারে জিপিএস স্টেশন গড়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারাও। এক বছরের মধ্যে সেই স্টেশন গড়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহা বলেন, “রেট্রোফিটের দাবির ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy