যুবভারতী স্টেডিয়ামে রবিবার সন্ধ্যায় এক ডার্বি শেষ হতেই সাড়ে ছশো কিলোমিটার দূরে জলপাইগুড়ির ছাদনাতলায় আরেক ডার্বি শুরু হল।
রবিবার সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ির নতুনপাড়ার বিশ্বাসবাড়ির সায়ন্তীকে বিয়ে করতে এসেছিলেন কলকাতার দত্তপুকুরের বাসিন্দা সাম্যজ্যোতি ঘোষ। উলুধ্বনি ছাপিয়ে সেখানে আওয়াজ উঠল ‘জয় ইস্টবেঙ্গল’। ব্যান্ডপার্টির তালে ‘ইস্টবেঙ্গল হিপ হিপ হুররে’ স্লোগানে নাচ চলছে বরযাত্রীদের। গোধূলি লগ্নে বিয়ে। শুভদৃষ্টির সময় কনেকে পিড়িতে তোলা হল। সে সময় দু’জনের মাথার ওপরে চাদর বিছিয়ে দেওয়া প্রথা। বর-বধূর মাথার উপর চলে এল ইস্টবেঙ্গল পতাকা। তার নীচে মালাবদল করলেন সাম্যজ্যোতি-সায়ন্তী। কনেপক্ষে তখন গুঞ্জন, “আমাদের মেয়ে তো মোহনবাগান!” সে কথা শুনে সাম্যজ্যোতির বক্তব্য, “কিছু করার নেই। আজ আমাদের দিন। দু’গোল দিয়েছি।”
মেয়ে মোহনবাগানের, ছেলে ইস্টবেঙ্গল-পাগল। বিয়ের আসরে ইস্টবেঙ্গলের পতাকা নিয়ে আসা বরের সঙ্গী সুদীপ মুখোপাধ্যায় বললেন, “সাম্যর বিয়ে আর ইস্টবেঙ্গল পতাকা থাকবে না, এটা হতে পারে না। গত পনেরো বছরে একটাও ডার্বি মিস করেনি।” রবিবার রাতে বিয়েবাড়িতে তখন আর বরপক্ষ-কনেপক্ষ নয়, ভাগ হয়েছে ইস্ট-মোহনে। মেয়ের দাদা পরাগ, অরিন্দম, অর্ণবও ইস্টবেঙ্গল সমর্থক, বরযাত্রীদের সঙ্গে তাঁরাও পতাকার একদিক ধরেছেন।
ছাদনাতলায় লাল-হলুদ পতাকায় নববধূ সায়ন্তী আপত্তি করেননি, মুচকি হেসেছিলেন শুধু। বিয়ে পর্ব সারা হলে নব বরবধূকে পাতে খাওয়ার সাজিয়ে দেওয়া হল। কাঁসার থালার পাশে, কাঁসার বাটিতে উপচে পড়ছে গলদা চিংড়ি। ‘মোহনবাগানের মেয়ে’র বিয়ে আর চিংড়ি হবে না! পাত্রীর কাকা প্রাক্তন রেল আধিকারিক সুবীর বিশ্বাস একটু দম নিয়ে বললেন, “এটা আমাদের পাল্টা গোল!”
সোমবার সাম্যজ্যোতির শ্বশুর সমীর বিশ্বাস শোনান তাঁর ছাত্রজীবনে মোহনবাগান ম্যাচের টিকিট কিনতে রাতভর লাইন দেওয়ার গল্প। মধুরেণ সমাপয়েৎটি সাম্যজ্যোতির জ্যেঠা মানসবাবুর। বললেন, ‘‘তবে এই দু’দল আছে বলেই বাঙালির ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy