Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ডিম দামি, পাতে মুরগি

সত্যজিৎ রায়ের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র শেষ দৃশ্য। বনবাংলো থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে চার বন্ধুর গাড়ি। টিফিন বাক্স খুলে রবি ঘোষ বের করে আনলেন একটি সেদ্ধ ডিম। সঙ্গে অনবদ্য ভঙ্গীতে সংলাপ, ‘ডিম মাইরি!’ বঙ্গ জীবনের অন্যতম অঙ্গ সেই ডিমের দাম হঠাৎই চড়ছে। ফলে এগরোলের দাম বাড়ার যেমন আশঙ্কা, তেমনই টান পড়েছে মিড ডে মিলে। স্কুলে স্কুলে ঘুরে দেখল আনন্দবাজার। আজ প্রথম পর্বডিমের বদলে মুরগি! ডিমের চড়া বাজারে এমনটাই ঘটেছে মালদহের দাল্লা চন্দ্রমোহন বিদ্যামন্দিরে। প্রধান শিক্ষক জয়দেব লাহিড়ি বলছিলেন, ‘‘স্কুলে গড়ে ৯০০ জন পড়ুয়া মিড ডে মিল খায়।

সুনসান: ডিম আছে। ক্রেতা কোথায়? জলপাইগুড়ির বাজারে শনিবার। ছবি: সন্দীপ পাল।

সুনসান: ডিম আছে। ক্রেতা কোথায়? জলপাইগুড়ির বাজারে শনিবার। ছবি: সন্দীপ পাল।

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৫৩
Share: Save:

ডিম না, মুরগি

মালদহ: ডিমের বদলে মুরগি! ডিমের চড়া বাজারে এমনটাই ঘটেছে মালদহের দাল্লা চন্দ্রমোহন বিদ্যামন্দিরে। প্রধান শিক্ষক জয়দেব লাহিড়ি বলছিলেন, ‘‘স্কুলে গড়ে ৯০০ জন পড়ুয়া মিড ডে মিল খায়। এক একটা ডিমের দাম এখন ৭ টাকা। প্রতি সপ্তাহে তা খাওয়াব কী করে? তাই ডিম বন্ধ করে এ সপ্তাহে দু’পিস করে ব্রয়লার মুরগির মাংস দেওয়া হয়েছে।’’

হবিবপুরের কলাইবাড়ি প্রাইমারি স্কুলে মিড ডে মিলের দায়িত্বে থাকা থাকা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যা ডলি হালদার বলেন, ‘‘মিড ডে মিলে ছাত্রপিছু বরাদ্দ মোটে ৪ টাকা ১৩ পয়সা। আনাজ, মশলা, তেল, জ্বালানি কেনার পর ৭ টাকায় ডিম কিনে প্রতি সপ্তাহে একদিন করে খাওয়ানো সম্ভব নয়। ১৫ দিন পরপর ডিম অতি কষ্টে দিতে পারব এখন।’’ ফলে এই স্কুলের ২৮৬ জন পড়ুয়াকে ডিম পেতে অপেক্ষা করতে হবে দু’সপ্তাহ।

পুরাতন মালদহ ব্লকের বেশিরভাগ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেও ডিম দেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ব্লকের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা বলেন, তাঁরা সকলে মিলে ব্লক শিশু উন্নয়ন আধিকারিককে ডেপুটেশন দিয়ে ২০ তারিখ থেকে কেন্দ্রে ডিম দেওয়া বন্ধ করেছেন।

অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বীণা চৌধুরী, মীনা রায়রা বলেন, ‘‘আমরা ডিমের দাম বাবদ পাই ৪ টাকা। সেখানে বাজারে ডিমের দাম ৭ টাকা। এক বা দু’দিন কোনওমতে চালানো যায়। কিন্তু রোজ কী করে সম্ভব!’’

আইসিডিএসের জেলা প্রকল্প আধিকারিক ধনপতি বর্মন যদিও বলেন, ‘‘ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু কোথাও ডিম বন্ধ রয়েছে এমন খবর নেই।’’

বদলে পনির

আলিপুরদুয়ার: এমনিতেই বরাদ্দ কম মিড ডে মিলে। মেনুতে সপ্তাহে এক দিন ছিল ডিম ডে। দাম চড়তেই তাতে কোপ পড়েছে যথারীতি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের তরফে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক স্কুলগুলিতে সপ্তাহের মেনুতে তাই বদল এসেছে। শুক্রবার ডিম খাওয়ানোর কথা। প্রতি সপ্তাহে তা মিলছে না অনেক স্কুলেই।

কার্যত সে কথা মেনে নেন আলিপুরদুয়ার জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংদের চেয়ারম্যান অনুপ চক্রবর্তী। তিনি জানান, শিক্ষকরা শুক্রবারে ডিম-ভাতের জায়গায় নিজেদের মতো করে মেনু তৈরি করছেন।

কী রকম? যেমন, শ্যামাপ্রসাদ প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ পাল জানান, ডিমের দাম বাড়ায় এখন মাসে এক দিন ডিমের বদলে পনির খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চেচাখাতা আর আর প্রাইমারি স্কুলের এক শিক্ষক জানান, তাঁদেরও এক দিন পনির। আর এক দিন অর্ধেক ডিম।

অর্ধেক ওমলেট

রায়গঞ্জ ও ইসলামপুর: উত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন স্কুলে ডিম হারিয়ে যাচ্ছে মিড ডে মিলের পাত থেকে। কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানালেন, সাধারণত ডিম যে দিন খাওয়ানো হয়, সে দিন উপস্থিতি বেশি থাকে। এখন দাম বেড়ে কোথাও কোথাও ডিম প্রতি সাত টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। শিক্ষকরা বুঝে পাচ্ছেন না, কী ভাবে এই মেনু বজায় রাখবেন।

যেমন, রায়গঞ্জের স্নেহলতা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিজয় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘পুষ্টি প্রকল্পে পড়ুয়াদের ডিম খাওয়ানোর সরকারি নির্দেশ রয়েছে। তাই আমরা কখনও একটি ডিমের ওমলেট করে তা ভাগ করে দু’জন পড়ুয়াকে দিতে বাধ্য হচ্ছি।’’

একই অবস্থা সুদর্শনপুর দ্বারিকাপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যাচক্র এবং করোনেশন হাইস্কুলেরও। দুই স্কুলের দুই প্রধান শিক্ষকই বলেন, ‘‘যে হারে ডিম, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, তাতে মিড ডে মিলে ডিমের বদলে আনাজ ও সোয়াবিনের তরকারি দিচ্ছি।’’ ইসলামপুরের কোদালদহ প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জীবেশ ঘোষ বলেন, ‘‘ছাত্র প্রতি মিড ডে মিলে যে টাকা দেওয়া হয়, তাতে ডিম খাওয়ানোটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই চাপ সব স্কুলেরই।’’ (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Egg Price Hike ডিম
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE