Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পরিচয় পত্র নেই, ট্রেন থেকে নামানো হল বৃদ্ধ দম্পতিকে

রেলের অমানবিক এই ভূমিকায় ক্ষুব্ধ যাত্রীরাও। ইংরেজবাজার শহরের বিদ্যাসাগরপল্লির বাসিন্দা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত অফিসার বঙ্কিমচন্দ্র রায় শুক্রবার কলকাতায় স্ত্রী শান্তাকে নিয়ে চোখের চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন

মালদহ টাউন স্টেশনে বঙ্কিমচন্দ্র রায় ও তাঁর স্ত্রী শান্তা। নিজস্ব চিত্র

মালদহ টাউন স্টেশনে বঙ্কিমচন্দ্র রায় ও তাঁর স্ত্রী শান্তা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:৫৮
Share: Save:

ই-টিকিট ছিল। তবে সঙ্গে আবশ্যিক হিসেবে পরিচয়পত্রের মূল প্রমাণপত্রটি ছিল না সত্তরোর্ধ্ব অসুস্থ দম্পতির কাছে। এই অভিযোগে মালদহ ফেরার পথে ওই দম্পতিকে বোলপুর স্টেশনে নামিয়ে দিলেন কর্তব্যরত টিকিট পরীক্ষকেরা। শনিবার বিকেলে আপ শতাব্দী এক্সপ্রেসের ঘটনা। রেলকর্মীদের এ হেন অমানবিক আচরণে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন ওই দম্পতি। রাতে অন্য ট্রেনে মালদহ পৌঁছে রেল পুলিশ ও স্টেশন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই রেলকর্মীদের বিরুদ্ধে। রেলের এই অমানবিক ভূমিকায় ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ।

ইংরেজবাজার শহরের বিদ্যাসাগরপল্লির বাসিন্দা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত অফিসার বঙ্কিমচন্দ্র রায় শুক্রবার কলকাতায় স্ত্রী শান্তাকে নিয়ে চোখের চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন। দু’জনেরই চোখের সমস্যা রয়েছে। ওইদিন দুপুরে হাওড়া থেকে আপ শতাব্দী এক্সপ্রেসের সি-৫ কামরায় ওঠেন ওই দম্পতি। তাঁদের কাছে ই-টিকিট ছিল। কিন্তু পরিচয়পত্রের কোনও মূল প্রমাণপত্র ছিল না। ট্রেন বর্ধমান পেরনোর পর কামরায় টিকিট পরীক্ষার জন্য হাজির হন দুই পরীক্ষক। ওই দম্পতি জানান, তাঁরা মূল পরিচয়পত্র সঙ্গে নিতে ভুলে গিয়েছিলেন। বিষয়টি টিকিট পরীক্ষকদের জানান। কিন্তু তাঁরা ওই দম্পতির সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। এমনকী, বোলপুর স্টেশনে টিকিট পরীক্ষকেরা তাঁদের নামিয়ে দেন।

প্রায় দু’ঘণ্টা পর সন্ধে ৬টা নাগাদ সরাইঘাট এক্সপ্রেসের সাধারণ কামরায় মালদহে ফেরেন ওই বৃদ্ধ দম্পতি। বঙ্কিম বলেন, ‘‘আমাদের দু’জনেরই চোখের সমস্যা রয়েছে। আমাদের কাছে পরিচয়পত্র ছিল না। টিকিট পরীক্ষকদের এও বলেছিলাম, মালদহ টাউন স্টেশনে পরিচয়পত্র নিয়ে আমার ছেলে থাকবে। তার পরেও টিকিট পরীক্ষকেরা আমাদের বোলপুরে জোর করে নামিয়ে দেন।’’ মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত শান্তা বলেন, ‘‘বোলপুরে প্রায় দু’ঘণ্টা বসে থাকার পর অন্য ট্রেনে উঠি। জেনারেল কামরায় ভিড় থাকায় বসার জায়গা পাইনি। খুব কষ্ট করেই ফিরতে হয়েছে আমাদের।’’

মালদহ টাউন স্টেশনের রেলের এক কর্তা বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী ই-টিকিট থাকলে সঙ্গে পরিচয়পত্র থাকা অবশ্যই প্রয়োজন। টিকিটেও তা উল্লেখ করা থাকে। পরিচয়পত্র না থাকলে ই-টিকিট বৈধ বলে ধরা হয় না।’’ তবু এই ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে মালদহের যাত্রী মহলে। মালদহের যাত্রী সুরক্ষা কমিটির সদস্য নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি বলেন, ‘‘নিয়ম রয়েছে ঠিকই। পরিচয়পত্র না থাকায় জরিমানা করা যেতে পারত। তবে অসুস্থ বৃদ্ধ দম্পতিকে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।’’

অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেল পুলিশের কর্তারা। মালদহের ডিআরএম তনু চন্দ্রা বলেন, “ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Train Detain Couple Identity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE