Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

‘শেষ বয়সে ঘর থেকে বার করে দেবে, মেরে ফেলতে চাইবে, ভাবতেও পারিনি!’

ময়নাগুড়ি ব্লকের হেলাপাকড়ির ঘনশ্যাম সেন, বিজয় সেন ও রতন সেনরা মা-বাবাকে দেবতার আসনে বসিয়ে দীর্ঘদিন পুজো করে আসছেন। সেই ব্লকেরই ভোটপট্টি বকরিবাড়ি এলাকায় এক বৃদ্ধাকে এবার বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল, বৃদ্ধারই পালিত কন্যা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে।

অসহায়: দয়ালদাসী মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

অসহায়: দয়ালদাসী মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

সজল দে
ভোটপট্টি শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:২০
Share: Save:

ময়নাগুড়ি ব্লকের হেলাপাকড়ির ঘনশ্যাম সেন, বিজয় সেন ও রতন সেনরা মা-বাবাকে দেবতার আসনে বসিয়ে দীর্ঘদিন পুজো করে আসছেন। সেই ব্লকেরই ভোটপট্টি বকরিবাড়ি এলাকায় এক বৃদ্ধাকে এবার বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল, বৃদ্ধারই পালিত কন্যা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় ময়নাগুড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই বৃদ্ধা দয়ালদাসী মণ্ডল। যদিও অভিযোগ মানতে নারাজ বৃদ্ধার পালিত কন্যা পারুল মণ্ডল।

কয়েক দশক আগেকার ঘটনা। দয়ালদাসী মণ্ডল ও কীর্তন মণ্ডলের কোনও সন্তান না থাকায়, ওই দম্পতি একটি শিশুকে লালনপালন করে বড় করে তোলেন। আদর করে নাম রেখেছিলেন পারুল। সেই পারুল বিবাহযোগ্য হলে, তাঁকে ময়নাগুড়ি এলাকার ফল ব্যবসায়ী নারায়ণ মণ্ডলের সঙ্গে বিয়ে দেন। বর্তমানে পারুল ও নারায়ণের সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠছে, বৃদ্ধার স্বামী মারা যাওয়ার পর তাঁর দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বৃদ্ধার পুরো সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়েছেন ওই পালিত কন্যা। আর বৃদ্ধা মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ায় তিনি এখন অন্যের আশ্রয়ে রয়েছেন। খাবারের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করতে বাধ্য হয়েছেন।

অধিকার ফিরে পেতে শুক্রবার রাতে ময়নাগুড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। শনিবার সকালে গিয়ে দেখা গেল, ওই বৃদ্ধা অন্যের বাড়িতে রয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ‘‘মেয়েকে কোলেপিঠে করে মানুষ করলাম, বিয়ে দিলাম, এমনকী নাতনির বিয়ের জন্যও জমি বিক্রি করে টাকা দিয়েছি। তারাই আমাকে ভুল বুঝিয়ে আমার সব সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়ে শেষ বয়সে ঘর থেকে বের করে দেবে, প্রাণে মেরে ফেলতে চাইবে, তা কোনও দিন কল্পনাও করতে পারিনি।’’ তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগে এক রাতে তাঁকে প্রাণে মারার চেষ্টা করা হয়। কোনওরকমে সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচেন তিনি। তাঁর থাকার ঘরটিতে তালা লাগিয়ে রেখেছেন মেয়ে, মেয়ে জামাই ও নাতিরা। সে কারণে, এখন ভিক্ষাবৃত্তি ও পাড়াপড়শির আশ্রয়ে বেঁচে আছেন তিনি। তাই বাধ্য হয়েই, সুবিচারের আশায় থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন বলে জানালেন ওই বৃদ্ধা।

এলাকার বাসিন্দা গোবিন্দ সরকার, গৌরী মণ্ডল, ভলেন রায়, অষ্টমী মণ্ডলরা জানালেন, ওই বৃদ্ধা মেয়েজামাইয়ের সঙ্গেই থাকতেন। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে তিনি এর ওর বাড়িতেই থাকছেন। তাঁরা বৃদ্ধার পরিবারের বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে চান না। কিন্তু যেভাবে সত্তর পেরনো এক বৃদ্ধা অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছেন, তা ঠিক নয় বলে মনে করছেন তাঁরা। কারণ, বৃদ্ধার ওই পড়শিরা জানালেন, স্বামী দশবছর আগে মারা গেলেও বৃদ্ধার সম্পত্তি কম ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক রথীকান্ত রায় বললেন, দয়ালদাসীদেবী কীভাবে পালিত কন্যাকে মানুষ করেছেন তা তাঁরা দেখেছেন। শেষ বয়সে এটা ওঁর প্রাপ্য ছিল না বলে মনে করেন তিনি।

তবে মায়ের অভিযোগ মানতে নারাজ পালিত কন্যা পারুল মণ্ডল। পারুলদেবী জানান, ‘‘মায়ের বয়েস হয়েছে তাই ভুল বলছেন। মায়ের জন্য আলাদা ঘর বানিয়ে দিয়েছি। মাকে তো যত্নেই রেখেছি। কিন্তু কয়েকজন আত্মীয় সম্পত্তির লোভে মাকে ভুল বুঝিয়ে তাঁদের নামে মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন।’’

বিষয়টি নিয়ে ময়নাগুড়ি থানার আইসি নন্দকুমার দত্ত বলেন, ‘‘লিখিত অভিযোগ পেয়ে মামলা রুজু হয়েছে এবং ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Begging Elderly Lady
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE