রাতভর তাণ্ডব চালিয়ে জলঢাকা নদীর চর দিয়ে জঙ্গলের পথে বুনো হাতি। বাসিন্দাদের দাবি, একটি গোটা দলই এখানে বাড়ি ভাঙচুর করে। তাঁরা উদ্বেগে রয়েছে। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
হাতির হামলার ভয়ে বাড়ি-ঘর তুলে নিয়ে পালাচ্ছেন ধূপগুড়ির গধেয়ারকুঠি ও বগড়িবাড়ির বাসিন্দারা। এক নাগাড়ে হাতির তান্ডবে দিশাহারা গধেয়ারকুঠি ও বগড়িবাড়ির জলঢাকা নদীর চরের বাসিন্দারা।
জলঢাকা নদী পার হয়ে হাতির দল চলে আসছে গাড়িয়ালটারি গ্রামেও। গত আট দিন ধরে সন্ধ্যা হলেই ৬০-৭০টির হাতির দল চরের বসতিতে হামলা চালাচ্ছে। চরের পরেই গরুমারা জঙ্গল। সেই জঙ্গল থেকেই হাতি দল আসছে বলে জানা যায়। গত কয়েকদিনে দু’একটি বাড়ি ভাঙচুর করে কিছু জমির ফসল নষ্ট করে ভোর হলে চলেও যেত। কিন্তু, হাতির ভয়ে রাত হলেই বাড়িঘর ছেড়ে লাঠিসোটা নিয়ে বাঁধের উপর রাত জেগে পাহারা দেওয়া বাসিন্দাদের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েকদিনের পর হাতির তাণ্ডবের সীমা ছাড়িয়ে যায় শনিবার রাতে।
বাসিন্দারা জানায়, শনিবার সন্ধ্যার পরে ১০০টির উপর হাতি গ্রামে ঢুকে। একের পর এক বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে থাকে।
এক রাতেই ৩০টি বাড়ি ভেঙেছে। সঙ্গে গ্রামের কলা বাগান, পাকা ধান, বেগুন, কপি, শিম সহ এলাকার আনাজের খেত খেয়ে সাবাড় করে করে। অনেক বাসিন্দা লাগাতার হাতির ভয়ে বাড়ি-ঘর ভেঙে নিয়ে নদীর পূর্ব পাড়ে গধেয়ারকুঠির ঘন বসতি এলাকায় চলে যাচ্ছেন।
কেউ কেউ বাড়ি-ঘর ভেঙে দেওয়ার পর অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছেন। তাঁদের দাবি, বন দফতরে খবর দিলেও বনকর্মিরা আসেন না। এলেও বাঁধের উপরে দাঁড়িয়ে থেকে চলে যান।
বনকর্মিদের একাংশ জানান, যে চর এলাকায় হাতি ঢুকছে, সেই এলাকাটি দুর্গম। এলাকায় বন দফতরের গাড়ি ঢোকে না। একদিকে জঙ্গল, অন্য দিকে জলঢাকা নদী। কম সংখ্যক কর্মি ও পরিকাঠামোর অভাবে হাতি তাড়াতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে তাঁদের।
এই এলাকায় হাতির হামলা নতুন নয়। যখন থেকে ধান গাছ বড় হতে শুরু করে তখন থেকে হাতি গ্রামে ঢুকতে থাকে। প্রায় সময় চলে আসে গন্ডারও। গত আট দিন ধরে লাগাতার হামলায় চর এলাকার সব ধরনের আনাজের জমি প্রায় শেষ করে দিয়েছে হাতির দল। লাগাতার হাতির তাণ্ডবের ভয়ে চর এলাকা থেকে বাড়ি-ঘর ভেঙে নিয়ে চলে যাচ্ছেন বসন্ত রায় সহ অনেকে।
গধেয়ারকুঠির বসন্ত রায় বলেন, “কত আর হাতির তাণ্ডব সহ্য করব। জমির ফসল সব শেষ করে দিয়েছে হাতির দল। অনেকের বাড়িও ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। তাই বাড়ি ঘর রক্ষা করতে ঘর নিয়ে নদীর ওপারে ঘন বসতি এলাকায় চলে যাচ্ছি। সেখানে চরে আপাতত বাড়ি করে বসবাস করব।”
আর এক বাসিন্দা জগদীশ রায় জানান, “শনিবার রাতে হাতির দল আমার বাড়িতে তিনটি ঘর ছিল। সবগুলি ঘরই ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। পরিবার নিয়ে বাড়ি ছেড়ে কোন রকমে পালিয়ে বাঁচি। জমি থেকে কেটে আট বিঘা জমির ধানের পুঁজি খেয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নষ্ট করেছে। এখন কী করব, কী ভাবে পরিবার নিয়ে রাত কাটাব, তা ভেবে পাচ্ছি না।”
জলপাইগুড়ির ডিএফও বিদ্যুৎ সরকার জানান, “হাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। হাতিদের চলাচলের পথে পড়লে ঘর ভাঙচুর ও ফসল নষ্ট হবে। তবে গত কয়েকদিন ধরে যে এলাকায় হাতি হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে সেখানকার বাসিন্দারা কেউ এখনও ক্ষতিপূরণের আবেদন করেনি। আবেদন করলে খতিয়ে দেখা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy