ফাইল চিত্র।
কখনও রোগী সেজে অন্তর্বিভাগে ঢুকে চুরি। কখনও রোগীর আত্মীয় সেজে বহির্বিভাগে ঢুকে টাকাপয়সা, মোবাইল প্রভৃতি হাতিয়ে নেওয়া। এমনই ঘটনা ঘটছে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ফলে, রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়-পরিজনেরা চুরির আতঙ্কে ভুগছেন।
১৭ জুলাই: পথ দুর্ঘটনায় জখম হয়ে হাসপাতালের সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন পুকুরিয়ার বাসিন্দা তারামুদ্দিন শেখ। রাতে তাঁর কাছেই ছিল মোবাইল ফোন। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন, ফোন উধাও।
৩১ মার্চ: মেডিসিন বিভাগে ভর্তি ছিলেন বৈষ্ণবনগরের বাসিন্দা নৃপেণ দাস। সকালে তাঁকে দেখতে হাসপাতালে যান স্ত্রী সীমা দেবী। স্বামীর বেডের পাশে মাথা রেখে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি। জেগে দেখেন, ব্যাগ উধাও। ব্যাগে মোবাইল ফোন-সহ নগদ হাজারপাঁচেক টাকা ছিল।
সেপ্টেম্বর ২০১৭: বর্হিবিভাগে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা সুফিয়া বিবি। ভিড়ের সুযোগে তাঁর সঙ্গে ভাব জমায় অজ্ঞাতপরিচয় এক মহিলা। কিছু পরে মহিলা তাঁর ছেলেকে কোলে নেয়। এবং শিশু-সহ উধাও হয়ে যায়।
একই ধরনের চুরি বা হাতসাফাইয়ের ঘটনা ঘটে চলেছে মালদহ মেডিক্যালে। গত এক মাসে ১১টি চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে হাসপাতাল-কর্মীরা জানিয়েছেন। অন্যমনস্কতার সুযোগে কারও ব্যাগ নিয়েছে দুষ্কৃতীরা, কোনও শিশুর হাতের বালা খুলে নেওয়া হয়েছে। ভিড়ের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে মোবাইল নিয়ে পালিয়েছে দুষ্কৃতী। চুরি নিয়ে উদ্বিগ্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। হাসপাতালের সুপার অমিত দাঁ বলেন, ‘‘আমরা সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছি। আরও নিরাপত্তারক্ষী চেয়ে আবেদনও করা হয়েছে।’’ সাদা পোশাকে পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থাও করা হয়েছে বহির্বিভাগে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সদর থেকে মেডিক্যাল কলেজে উন্নীত হওয়ার পরে ভিড় বেড়েছে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বর্হিবিভাগে সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোগী চিকিৎসার জন্য আসেন। রোগীদের সঙ্গে থাকেন তাঁদের পরিবারের লোকেরাও। একই সঙ্গে অন্তর্বিভাগেও প্রায় ২ হাজার রোগী ভর্তি থাকেন। মালদহ ছাড়া দুই দিনাজপুর ও মুর্শিদাবাদ জেলা এবং বিহার-ঝাড়খণ্ড থেকেও রোগীরা ভিড় জমান মালদহ মেডিক্যালে।
হাসপাতাল কর্মীদের অনেকের ধারণা, চুরি-কেপমারির পিছনে কোনও চক্র কাজ করছে। সেই চক্রে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও জড়িত রয়েছে বলে সন্দেহ। রোগী সেজে কিংবা রোগীর আত্মীয় সেজে ভিড়ে মিশে যাচ্ছে তারা। তার পরই কৌশলে রোগীদের ব্যাগ, মোবাইল, টাকা চুরি করছে।
কালিয়াচকের বাসিন্দা নার্গিস বিবি বলেন, “চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসছি। মাথায় চিন্তা থাকে। মনের অবস্থা ঠিক থাকে না। এমন অবস্থায় কী ভাবে বুঝব, কার মনে কী আছে!’’ রোগীর পরিজন সুনীল সরকার, কবিরাজ হালদারেরা চান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কড়া পদক্ষেপ করুন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্হিবিভাগে, অন্তর্বিভাগে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সিসিটিভি-র মাধ্যমে চলছে নজরদারি। হাসপাতালের নিজস্ব ৬২ জন নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন। পুলিশ ক্যাম্পও রয়েছে। তার পরেও কেন চুরি-কেপমারি রোখা সম্ভব হচ্ছে না হাসপাতালে? এক কর্তার কথায়, “মালদহ মেডিক্যালে পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষীর অভাব রয়েছে। পুলিশ ক্যাম্পেও যথেষ্ট কর্মী নেই। ফলে, সমস্ত দিকে নজরদারি সম্ভব হচ্ছে না।” একইসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সকলকেই সচেতন হতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী রোগীর সঙ্গে একজন আত্মীয় থাকার কথা অন্তর্বিভাগে। কিন্তু একাধিক লোকজনকে রোগীর শয্যায় বসে থাকতে দেখা যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy