Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

‘ভাগ্যিস গর্ত থেকে উঠে এসেছিলাম, না হলে...’

বৃহস্পতিবার রায়গঞ্জের গৌরী গ্রাম পঞ্চায়েতের এলেঙ্গিয়ায় মৃত নাজিমুদ্দিনের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘গর্ত থেকে ভাগ্যিস উঠেছিলাম। না হলে কী হত ভাবলেই গা শিউরে উঠছে।’’

রাজ্জাক আলি (বাঁ দিকে)। সাহেদ আলি। নিজস্ব চিত্র

রাজ্জাক আলি (বাঁ দিকে)। সাহেদ আলি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ ও ইটাহার শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৩৫
Share: Save:

গর্তে কাজ করতে নেমে মাটি চাপা পড়ে চোখের সামনে ছ’জন সহযোগীর মৃত্যু দেখেছেন। তিনি নিজেও ওই গর্তের নীচে মারা যেতে পারতেন। তবে ঘটনার ঠিক আগেই ব্যক্তিগত কাজে গর্ত থেকে উঠে এসেছিলেন তিনি। সেই কথা বলতে গিয়ে চারদিন পরেও দরদর করে ঘামছিলেন ওই তরুণ।

রায়গঞ্জের বালিজোল এলাকার বাসিন্দা সাহেদ আলি। উত্তরপ্রদেশের বরেলীতে ওই ছ’জনের সঙ্গে তিনিও মোবাইল সংস্থার অপটিক্যাল কেব্‌ল বসানোর কাজ করছিলেন। গর্তের ভিতরে যন্ত্র খারাপ হওয়ায় সেটা তোলার জন্য তিনিও নেমেছিলেন। পরে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তিনি গর্ত থেকে উঠে পড়েন। কিছুক্ষণ পর ফিরে দেখেন, ওই গর্তেই মাটি চাপা পড়েছেন তাঁর সহযোগীরা। বৃহস্পতিবার রায়গঞ্জের গৌরী গ্রাম পঞ্চায়েতের এলেঙ্গিয়ায় মৃত নাজিমুদ্দিনের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘গর্ত থেকে ভাগ্যিস উঠেছিলাম। না হলে কী হত ভাবলেই গা শিউরে উঠছে।’’

বুধবার গভীর রাতে ঘরে ফিরে এখনও আতঙ্কের রেশ কাটেনি রজ্জাক আলি, মুজফ্ফরের চোখেমুখে। রজ্জাকের বাড়ি এলেঙ্গিয়ায়। মৃত নাজিমুদ্দিন তাঁর মামাতো ভাই। রেজ্জাক এবং মুজফ্ফরও মাটি চাপা পড়েছিলেন। কী ভাবে রক্ষা পেলেন? ওঁরা জানান, গর্তে কাজ করতে নেমে প্রথমে নাজিমুদ্দিন হক ওরফে হাবু, মহিরুল হক, নাজিমুল হক, হাসান আলি চারজন মাটি চাপা পড়ে। সাহেদ তখন উঠে গিয়েছিল। বাকি আরও সাতজন শ্রমিক চা-সিগারেট খেতে গিয়েছে। রজ্জাক, মুজফ্ফর, নাজিমুল এবং কওসর তাঁদের বাঁচাতে গর্তে নামেন। ফের মাটি ধসে তাঁরাও চাপা পড়েন। রেজ্জাকের দুটো হাত বাইরে বেরিয়ে ছিল। মুজফ্ফরের মাথার উপরের চুল দেখা যাচ্ছিল। পাঁচ ফুট উপরে গর্তের বাইরে দাঁড়িয়েছিল রজ্জাকের ভাই কুরবান আলি এবং ফইজুল হক। আচমকা হতচকিত হয়ে দিশা পাচ্ছিলেন না তাঁরা।

রজ্জাক জানান, মাথার মাটি হাত দিয়ে নিজেই সরিয়ে ফইজুলকে ডাক দেন তিনি। তখন ফইজুল ও কুরবান গিয়ে মাটি সরাতে থাকে। এর মধ্যেই লোকজন জড়ো হয়েছে। কিন্তু কেউ এগোচ্ছিল না। রেজ্জাক গিয়ে তাঁদের সাহায্য করতে বলে হাতে পায়ে ধরেন। দু’জন এগিয়ে আসেন। একটা ভাঙা কোদাল বাইরে পড়েছিল। বাকি সব গর্তে চাপা পড়েছে। সেই ভাঙা কোদালই তখন মাটি সরানোর হাতিয়ার। তা নিয়েই টানাটানি শুরু হয়। অনেক কষ্টে রেজ্জাক এবং মুজফ্ফরকে বার করা হয়। গর্তের বাইরে আনতেই অচেতন হয়ে পড়েন। বাকি শ্রমিকেরা ততক্ষণে ফিরেছে। মাটি সরিয়ে যখন বাকিদের উদ্ধার করা হয় তখন তাঁদের দেহে প্রাণ নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

UP Accident Labours Dead Body
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE