উদ্ধার: ২৯ অক্টোবর সুজাপুর ডাঙা থেকে উদ্ধার এক লক্ষ টাকার জালনোট। নিজস্ব চিত্র
বদলেছে নোট। কিন্তু নোটবন্দির দু’বছর পরেও কালিয়াচক-সহ মালদহের বিস্তীর্ণ এলাকায় জাল নোটের কারবারের ছবিটা তেমন বদলায়নি। বিশেষত, কালিয়াচক আছে কালিয়াচকেই। যত দিন যাচ্ছে, অভিযোগ, দু’হাজারি জাল নোট তত নিখুঁত করার চেষ্টা চালাচ্ছে কারবারিরা।
২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর, নোটবন্দির পরে প্রথম দু’মাস কালিয়াচকে জালনোটের কারবার অনেকটাই থমকেছিল। জানা যায়, কারবারিদের অনেকেই হতাশ হয়ে অন্য কাজের খোঁজে পাড়িও দিয়েছিলেন ভিন রাজ্যে। কিন্তু দু’হাজারি নোট বাজারে পর্যাপ্ত হতেই কালিয়াচক ফের সেই পুরনো ছন্দে ফেরে বলে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের অনেকের দাবি।
সূত্রের খবর, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পাচারের পুরনো রুটই মালদহে এখনও চালু আছে। সঙ্গে আরও নতুন রুটেও শুরু হয়ে গিয়েছে কারবার। যদিও জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ), বিএসএফ ও পুলিশের দাবি, তাঁদের যৌথ নজরদারিতে কারবার অনেকটাই কমেছে। জালনোট উদ্ধারের পরিসংখ্যানও অন্তত তেমনই। কিন্তু প্রশ্ন, এনআইএ, বিএসএফ ও পুলিশের নজরদারিকে ফাঁকি দিয়ে নতুন কোনও ছকে কারবার চলছেনা তো?
ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা কালিয়াচক বরাবরই জালনোটের পাচারের বড় আখড়া। সীমান্ত সূত্রেই খবর, আগের মতো এখনও ওপার থেকে কালিয়াচকের মহব্বতপুর, ষষানি, দুইশতবিঘি, গোলাপগঞ্জ, চরিঅনন্তপুর, হাদিনগর, ঘোষটোলা, গোপালনগর, মিলিক সুলতানপুর, শোভাপুর, পারদেওনাপুর এলাকা দিয়ে জালনোট পাচার চলে। আগাম ফোনে যোগাযোগ করে গামছায় নোট মুড়ে ওপার থেকে এপারে ছুড়ে দেওয়া হয়, এপারের কারবারিরা তা কুড়িয়ে নেয়। শীত কালে কুয়াশা থাকায় তাতে সোনায় সোহাগা হয়। এপারের বিভিন্ন ডেরায় মজুত হওয়া সেই জালনোট বিভিন্ন রুটে চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
যেমন, বৈষ্ণবনগরের পারদেওনাপুর ঘাট থেকে নৌকো করে গঙ্গা পেরিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান থেকে, ট্রেনে বা বাসে করে কলকাতা-সহ ভিন রাজ্যে। কালিয়াচকেরই বৈষ্ণবনগরের ১৬ মাইল, ১৮ মাইল থেকে সড়ক পথে এক দিকে ফরাক্কা স্টেশন হয়ে, অন্য দিকে মালদহ টাউন স্টেশন রুট ধরেও জালনোট ছড়িয়ে যায় বিভিন্ন এলাকায়। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদ জেলার সমসেরগঞ্জ ও নিমতিতা সীমান্ত এখন নতুন রুট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাঁরা আরও বলছেন, ‘‘নোটবন্দির পরে যত দিন যাচ্ছে দু’হাজারি নোট ততই নিখুঁত হচ্ছে। নোটের কাগজের মানও এখন বেড়েছে।’’
বিএসএফ ও পুলিশ সূত্রে খবর, নোটবন্দির পরপরই রঙিন ফটোকপি করে জালনোট এপারে এসেছিল। এখন আরও উন্নত অফসেট মেশিন বসানো হয়েছে এবং নোটের সিকিউরিটি থ্রেড-সহ অন্য অনেক বৈশিষ্ট্য নিখুঁত ভাবেই তৈরি করার চেষ্টা করছে জালনোটের কারবারিরা। সন্দেহ, ওপারের চাপাই নবাবগঞ্জ জেলার রোহনপুর, কানসাট, গোমস্তাপুরেও নোট ছাপিয়ে কালিয়াচক সীমান্ত দিয়ে এপারে পাচার করা হচ্ছে। মালদহের এক জেলা পুলিশ কর্তার দাবি, নজরদারি বাড়ানোয় জালনোটের কারবার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। কিন্তু কারবার সেই চালু রয়েছেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy