হলদিবাড়িতে বৃষ্টি। ঠান্ডা আবহাওয়া। উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার জেলার আবহাওয়াও মোটামুটি একইরকম। কিন্তু গরমে পুড়ছে দেশের বেশিরভাগ অংশ। আর এই তারতম্যই কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে হলদিবাড়ির চাষিদের। কারণ হলদিবাড়ি থেকে ট্রাকে নিয়ে যাওয়ার পথেই প্রচন্ড গরমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে টোম্যাটো। ফলে বাজারে দাম কমে যাচ্ছে। এরজেরে উদ্বেগে কৃষিদফতর।
হলদিবাড়ি ব্লকের কৃষি আধিকারিক সঞ্জীব মৈত্রী বলেন, “আবহাওয়ার তারতম্য টোম্যাটোর পক্ষে মারাত্মক। রসালো ফল। বৃষ্টি হলে রসে ফুলে ওঠে। বেশিদিন রাখা যায়না। প্রচন্ড গরমে নষ্ট হবেই। এবছর এই ঘটনাই ঘটছে। পরিস্থিতি খারাপ।” এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে হলদিবাড়িতে মরসুমের শেষভাগের টোম্যাটো ওঠা আরম্ভ হয়। স্থানীয় ভাষায় এর নাম ‘নমলা’ টোম্যোটো। নমলা টোম্যোটোর বাজার মেলে মে এবং জুন মাসে। বিহার এবং উত্তরপ্রদেশ ছাড়া ওড়িশাতেও এই টোম্যাটো যায়। এই টোম্যাটো চাষের পক্ষে হালকা বৃষ্টি হলে ভাল। বেশি বৃষ্টি হলেই জলে ভরপুর হয়ে ওঠে।
কোচবিহার জেলা কৃষি দফতর সুত্রে জানা গিয়েছে হলদিবাড়িতে এবছর মে মাসের ১১ তারিখ থেকে ১৯ তারিখের মধ্যে ২৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গতবছর এই সময় কোনও বৃষ্টি হয়নি। এবার এই অল্প সময়ে এত বেশি বৃষ্টি হওয়ায় টোম্যাটো রসে ভরে উঠেছে। এই টোম্যাটো গরমের গেলেই তা আক্ষরিক অর্থে সেদ্ধ হয়ে যায়।
হলদিবাড়ি পাইকারি সব্জি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন এই সময় বেঙ্গালুরুর টোম্যাটো ওঠা শুরু হয়। অন্যবার প্রতিযোগিতায় হলদিবাড়ির টোম্যাটোর কাছে দাঁড়াতে পারেনা বেঙ্গালুরুর টোম্যটো। কারণ হলদিবাড়ির টোম্যাটো আকারে বড় এবং শক্ত হয়। এবছর ব্যাতিক্রম। আকারে বড় হলেও এবার টোম্যাটোর মধ্যে জলের পরিমান বেশি থাকায় নরম হয়ে যাচ্ছে। অন্যত্র পাঠাতে গেলে পচে যাচ্ছে।
হলদিবাড়ি পাইকারি সবজি বাজারে এখন প্রতিদিন ১০০ টন করে টোম্যাটো আমদানি হচ্ছে এবং এই টোম্যাটো ওড়িশার কটক ভুবনেশ্বর ছাড়াও কোলকাতা, শিলিগুড়ি, বিহারের কিছু অংশে এবং নেপালে যায়। হলদিবাড়ি পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক দিগ্বিজয় সরকার বলেন, “বৃষ্টি এবং দেশের বাকি অংশের গরম এবছর আমাদের ডুবিয়ে দিয়েছে। টোম্যাটো বাইরে পাঠালে নামানোর পর পচে যাচ্ছে। বাজার পাচ্ছিনা।” গতবছর এই সময়ে একই পরিমান টোম্যটো বাজারে উঠেছিল। রাজ্যের বাইরে চাহিদা থাকায় দাম ভাল ছিল। পাইকারি দাম প্রতি কিলোগ্রাম ১৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। বুধবার হলদিবাড়ি বাজারে টোম্যাটোর পাইকারি দাম ছিল প্রতি কিলোগ্রাম ১০ টাকা। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন এই দাম আরও কমবে।
এরকম অবস্থায় যে সমস্ত চাষি শেষ মরসুমে ভাল দাম পাবেন আশা করে টোম্যাটোর চাষ করেছিলেন তারা আশাহত হচ্ছেন। হলদিবাড়ি থানার বক্সিগঞ্জের কৃষক বুলবুল মুন্সি, পাঠানপাড়ার কৃষক অনিল বর্মন প্রত্যেকেই ৩ বিঘা করে জমিতে টোম্যাটো চাষ করেছিলেন। তারা বলেন, “এই সময়ে শেষ মরসুমে টোম্যাটো চাষ করলে খরচ বেশি হয়। ক্রমশ দাম কমছে। আমরা ক্ষতির সন্মুখিন হচ্ছি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy