সযতনে: চলছে টিকাকরণ। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। ছবি: বিনোদ দাস।
করোনা প্রতিষেধক দেওয়ার প্রথম দিন শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভ্যাকসিনেশন আধিকারিক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন এক মহিলা। শনিবার সকালেই হায়দরাবাদ থেকে তাঁর ভাইয়ের মৃত্যুর খবর আসে। জরুরি ভিত্তিতে তাঁকে ছুটি দেন উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক(৩) সংযুক্তা লিউ।
কিন্তু তিনি ছুটি না নিয়ে এ দিন হাসপাতালে সারাদিন কাজ করেছেন। ওই আধিকারিক জানান, তাঁর ভাইয়ের দেহ আসতে রবিবার হয়ে যাবে। তাই এ দিন তাই তিনি ছুটি নেননি। কাজের প্রতি তাঁর এই নিষ্ঠায় হাসপাতালের অনেকেই অভিভূত। ইতিবাচক এই ঘটনা দিয়েই এ দিন এই হাসপাতালে প্রতিষেধক পর্ব শুরু হয়। তালিকায় থাকা ১০০ জনের মধ্যে সকলেই এ দিন শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে এসে প্রতিষেধক নিয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানান।
এর আগে যখন প্রতিষেধক নিতে আগ্রহীদের নামের তালিকা হচ্ছিল, তখন অনেকেই ইতস্তত করছিলেন। সেই সময় একজনই সাহস করে জানিয়েছিলেন, তাঁকেই যেন প্রথম ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এ দিন শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে প্রথম প্রতিষেধক নিলেন অ্যাম্বুল্যান্স চালক সেই ব্যক্তি, অশোক রায়। প্রতিষেধক দিয়ে প্রমোদনগরের বাসিন্দা অশোক বলেন, ‘‘করোনা রোগীকে নিয়ে অনেক যাতায়াত করেছি। যে ভয় ছিল, এখন তা অনেক কমে গেল। প্রতিষেধক নিতে কেউ যেন ভয় না পান।’’ অশোক প্রতিষেধক নেওয়ার পর তাঁকে পুষ্পস্তবক দিয়ে সংবর্ধনা জানান মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে এ দিন প্রাক্তন বিধায়ক তথা বর্তমানে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য এবং তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতাদেবী প্রথম টিকা নেন। তাঁরা অবশ্য দু’জনেই চিকিৎসক। তবে তালিকায় তাঁদের নাম ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছিল প্রথম দিকে। রুদ্রবাবু অবশ্য পরে জানান, তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর নাম তালিকায় ছিল।
প্রতিষেধক দিতে দার্জিলিং জেলায় ভাল সাড়া মিলেছে এ দিন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ৫টি কেন্দ্রে ৫০০ জনের নেওয়ার কথা ছিল। সেখানে ৪৯৮ জনকে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল ছাড়া খড়িবাড়ি ব্লক হাসপাতাল, কার্শিয়াং মহকুমা হাসপাতাল, দার্জিলিং জেলা হাসপাতালে সর্বত্রই ১০০ জন করে তালিকাভুক্তরা সকলেই এসে প্রতিষেধক নেন। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ৯৮ জন নিয়েছেন। কালিম্পঙে ১০০ জনই নিয়েছেন।
কো-উইন অ্যাপ কাজ না করায় অ্যাপে নাম তোলা যায়নি। কম্পিউটারে প্রিন্ট করে তালিকা তৈরি করে ডাকা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে অনেকে যাঁরা প্রতিষেধক নিতে আসেননি, তার জায়গায় অন্য জনকে ডেকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে বলেও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। এ দিন কালিম্পঙে একটি কেন্দ্রে প্রতিষেধক দেওয়া হয়। ১০০ জন নিয়েছেন। প্রথম নেন কালিম্পং হাসপাতালের সাফাই কর্মী নির্মল ছেত্রী।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য বলেন, ‘‘জেলা স্বাস্থ্য দফতর প্রতিষেধক দেওয়ার কর্মসূচি সফল করতে কোমর বেঁধে নেমেছে। যাঁরা এ দিন নেননি, আগামী সোমবার নিতে পারবেন। যাঁরা প্রতিষেধক নিয়েছেন সবাই সুস্থ রয়েছেন। কেউ কোনও সমস্যার কথা জানাননি।’’
এ দিন বেলা সাড়ে ১০টায় দেশ জুড়ে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে টিকাকরণ কর্মসূচির সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বেলা ৯টা থেকেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিষেধক দিতে সকলে উপস্থিত হলেও সরকারি প্রোটোকল মেনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর শিলিগুড়ি হাসপাতাল এবং অন্যত্র টিকাদান পর্ব শুরু হয়। এ দিন উত্তরবঙ্গ জুড়ে টিকাদান পর্ব নির্বিঘ্নেই হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy