Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দুই মনোরোগী দাদার সঙ্গে ঘরবন্দি যুবক

বড় দুই ভাই মানসিক ভারসাম্যহীন। তাই সরকারি হাসপাতালের একই ঘরে রাখা ওই দু’জনকে সামাল দিতে ওই ঘরেই তালাবন্দি করে রাখা হয়েছে তাদের সুস্থ ভাইকে। প্রশাসনের উদাসীনতায় গত পনেরো দিন ধরে চলছে এই ব্যবস্থা।

মানসিক ভারসাম্যহীন ওই দুই দাদা। ছবি: সন্দীপ পাল ।

মানসিক ভারসাম্যহীন ওই দুই দাদা। ছবি: সন্দীপ পাল ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৬ ০২:১৮
Share: Save:

বড় দুই ভাই মানসিক ভারসাম্যহীন। তাই সরকারি হাসপাতালের একই ঘরে রাখা ওই দু’জনকে সামাল দিতে ওই ঘরেই তালাবন্দি করে রাখা হয়েছে তাদের সুস্থ ভাইকে। প্রশাসনের উদাসীনতায় গত পনেরো দিন ধরে চলছে এই ব্যবস্থা।

দিনরাত ভারসাম্যহীন দুই সহোদরের গালিগালাজ, একনাগারে পাগলের প্রলাপ শুনতে শুনতে নিজেও পাগল হওয়ার পথে ২৭ বছরের যুবক আসরাফুল। তিনি বলেন, “ এই কি সরকারি প্রতিশ্রুতি? এই কি লিগাল ফোরামের আইনি সহযোগিতা? দাদা হলেও ওরা মানসিক ভারসাম্যহীন। কেন তাঁদের সঙ্গে আমাকেও একই ঘরে তালাবন্দি থাকতে হবে? দিন রাতের কোনও সময় ঘুমোতে পারছি না। এবার বোধহয় আমাকে পাগল বানানোর সরকারি প্রক্রিয়া চলছে।’’

গত ২৬ জুন রবিবার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল ২৬ বছর ধরে ধূপগুড়ির চামটিমুখি গ্রামের ৬৫ বছরের বৃদ্ধ আয়ুব আলির মানসিক ভারসাম্যহীন দুই ছেলে সাহানুর আলম ও আব্দুল হাকিমের শেকল বন্দি থাকার সচিত্র সংবাদ। খবরের জেরে পরদিন সোমবার মহকুমা প্রশাসন ও দার্জিলিং জেলা লিগাল ফোরামের উদ্যোগে শেকল মুক্ত হয় দুই ভাই। তাঁদের স্থান হয় জলপাইগুড়ি হাসপাতালের একটি ঘরে। জানা গিয়েছে, দুই ভাইকে শেকল মুক্ত করার সময় ধূপগুড়ির বিডিও শুভঙ্কর রায় ও দার্জিলিং লিগাল ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকার , সরকারি কোনও মানসিক হাসপাতালে রেখে তাদের চিকিৎসা করানো হবে বলে পরিবারকে আশ্বস্ত করেছিলেন। পরিবারের সহযোগিতা ছাড়াই চিকিৎসা করানো হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উদ্ধার করে আনার পর পনের দিন পার হয়ে গেলেও তাদের মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি পালন করা হয়নি। উপরন্তু দুই মানসিক ভারসাম্যহীন এক সঙ্গে একঘরে থাকলে বড় কোনও অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে, এই আশঙ্কায় তাদের সামলাতে সঙ্গে থাকতে হচ্ছে তাদের ছোট ভাইকে।

ধূপগুড়ির বিডিও শুভঙ্কর রায় বলেন, “ এভাবে একঘরে মানসিক ভারসাম্যহীনদের সঙ্গে সুস্থ কাউকে রাখা ঠিক নয় বুঝতে পারছি। কী কারণে দু’জনকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে না তা বুঝতে পারছি না। বাড়ি থেকে শেকল মুক্ত করে এনে এভাবে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে পড়ে থাকতে হবে ভেবে নিজেকেই অসহায় লাগছে। আমি আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি তাঁদের স্থায়ী ভাবে কোনও সমাধান করার জন্য।”

সরকারি টালবাহানায় ক্ষুব্ধ তাঁদের বাবা বৃদ্ধ আয়ুব আলি। তাঁর কথায় , “ কি লাভ হল শেকল মুক্ত করে ছেলেদের নিয়ে গিয়ে। দুই পাগল ছেলের সঙ্গে থাকতে থাকতে আমার সুস্থ ছোট ছেলেও না পাগল হয়ে যায়। ওই ভাবে থাকার চেয়ে বাড়িতে শেকল বন্দি হয়ে আলাদা আলাদা ঘরে থাকাটায় ভাল ছিল।’’

দার্জিলিং লিগাল ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকার বলেন, “ ওই দুই মানসিক ভারসাম্যহীনকে মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। আশা করি আদালত দ্রুত তাদের কোনও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে সে কথা জানিয়ে দেবে।’’ এ দিকে মানসিক ভারসাম্যহীন দুই ভাইয়ের চিকিৎসা করছেন জলপাইগুড়ি হাসপাতালের চিকিৎসক শক্তিশোভন চৌধুরী। তিনি বলেন, “ দুই মানসিক ভারসাম্যহীন ভাই চিকিৎসায় সারা দিচ্ছেন। মনে হচ্ছে বাইরে পাঠানোর প্রয়োজন হবে না।”

কিন্তু ছোট ভাই আসরাফুল ও তাদের পরিবারের বক্তব্য, জলপাইগুড়ি হাসপাতালের চিকিৎসায় সারা দিয়ে পুরোপুরি সুস্থ হলে তো ভালই হয়। কিন্তু এর আগেও দুই জনই কয়েকবার সুস্থ হয়েও ফের মানসিক ভারসাম্য হারায়। সে কথা মাথায় রাখতে হবে।

একসময় আট বিঘা কৃষি জমি ও গ্রামে ধান ভাঙানোর মিল ছিল বৃদ্ধ আয়ুব আলির। দুই মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সব বিক্রি করেছেন তিনি। এমনকি এখন যে বাড়িতে থাকেন চিকিৎসা করাতে সেটাও ব্যাঙ্কের কাছে বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছেন। যত দিন যাচ্ছে ততই জড়িয়ে পড়ছেন দারিদ্রের নাগপাশে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mental patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE