সংগ্রাহক: রায়গঞ্জে নিজের বাড়িতে বিমল সাহা। নিজস্ব চিত্র
দেওয়ালে ঝলছে বাঁধিয়ে রাখা খবরের কাগজ। তাতে ছাপা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, চাঁদের মাটিতে পা রাখছে মানুষ। কাচের নীচে ভিয়েতনামের টেবিল স্যুভেনির, পাশে রাখা একটি ফ্লাক্স, ইংল্যান্ডের থেকে কেনা। দেওয়ালের সঙ্গে যে গিটারটি হেলান দেওয়া রয়েছে সেটি ১৯৬৪ সালে কেনা রাশিয়া থেকে। কাচের আলমারিতে আমেরিকা থেকে আনা ‘শেফার পেন’। জাপানের পাইলট পেন। পুরনো দিনের জাপানি রেডিও, হল্যান্ডের ফুলদানি। মিউনিখ অলিম্পিক্সের সময় চালু হওয়া দশ মার্ক, এক রুবেল কয়েন।
যৌবনে নাবিক ছিলেন রায়গঞ্জের বিধানচন্দ্র রায় সরণির বাসিন্দা বিমল সাহা। জীবনের একটা বড় সময় কাটিয়েছেন সমুদ্রের সঙ্গে। ঘুরেছেন একের পর এক দেশ। এখন তিনি স্মৃতির বণিক। যেখানেই গিয়েছেন তুলে এনেছেন সেদেশের কোনও না কোনও স্মারক। ৮২ বছর বয়সে সেইসব স্মারক নিয়েই গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সংগ্রহশালা। সেইসব ‘স্মৃতি’র সমুদ্রেই অহরহ ডুব দেন তিনি।
বাড়ির একতলায় ঘরে ঢুকলেই সংগ্রহশালা। বড় কাচের আলমারিতে, পাশে রাখা টেবিলে, দেওয়ালের তাকে সাজানো বিভিন্ন সামগ্রী। দেওয়ালে বাঁধানো খবরের কাগজটা দেখিয়ে বিমল বলেন, ‘‘ওটি ১৯৬৯ সালের ২২ জুলাই জার্মানিতে প্রকাশিত হয়েছিল। আমি তখন হামবুর্গে। সেখানেই কিনেছিলাম। আগের দিন নিল আর্মস্ট্রং চাঁদের মাটিতে পা রেখেছিলেন।’’ বললেন, ‘‘রাশিয়ায় গিয়েছিলাম ১৯৬৪ সালে। দেখলাম রাশিয়ার জগদ্বিখ্যাত ব্যালে নাচ। সঙ্গে ক্যামেরা ছিল না। বাইরে থেকে পরে সংগ্রহ করেছিলাম ব্যালে নাচের এই ছবিগুলো।’’ টেবিলে কাচের তলায় সাজিয়ে রাখা অজস্র গুরুত্বপূর্ণ ডাকটিকিট, বিভিন্ন দেশের পুরনো মুদ্রা। নিজের হাতে সংগৃহীত বিভিন্ন সমুদ্রের জলও বিভিন্ন বোতলে রাখা। রয়েছে তৎকালীন ইংল্যান্ড, মিশর, ইতালি, স্পেন, আমেরিকা, ব্রাজিল, জার্মান, কুয়েতে চিঠি পাঠানোর এয়ারমেলের নমুনা। বিমলবাবুর কথায়, ‘‘জাহাজ বন্দরে ভিড়লে সেখানে অন্য দেশের জাহাজও আসত। সেইসব জাহাজ ঘুরে এইসব সংগ্রহ করতাম।’’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের গৃহরক্ষীদেরকে দেওয়া মেডেল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশদের তরফে ভারতীয় সেনাদের হাতে তুলে দেওয়া ব্রোঞ্জ পদক।
১৯৫১ সালে বিমলেরা রাজশাহী থেকে এদেশে আসেন। রায়গঞ্জে থাকা শুরু। সপ্তম শ্রেণির পর আর পড়া হয়নি। ১৯৫৬ ‘ইন্ডিয়া স্টিমশিপ কোম্পানি’র জাহাজে কাজ করার সুযোগ পান। কিন্তু এই সংগ্রহশালা কি উৎসাহীদের দেখার সুযোগ করে দেবেন? বিমল হেসে বলেন, ‘‘কী করব এখনও ভেবে উঠতে পারিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy