Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সাফারিতে সঙ্গী পানশালার মালিক, বিতর্কে মন্ত্রী

নান্টুবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, শিলিগুড়িতে সদ্য নিয়ে আসা দু’টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে বিরক্ত করার। তা নিয়ে বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞেরা আপত্তি তুলেছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে ওই একই জায়গায় গেলেন মন্ত্রী গৌতমবাবু। তবে তিনি একা নন। সঙ্গে ছিলেন একাধিক ব্যক্তি। এক পানশালার মালিকও তাঁর সঙ্গে থাকায় বিতর্ক তীব্র হয়েছে।

সাফারির অবস্থা দেখতে মন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে পানশালার মালিক (লাল রঙে চিহ্নিত)।

সাফারির অবস্থা দেখতে মন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে পানশালার মালিক (লাল রঙে চিহ্নিত)।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৫১
Share: Save:

কাউন্সিলর নান্টু পালের পরে এ বার খোদ মন্ত্রী গৌতম দেব। বেঙ্গল সাফারির সংরক্ষিত এলাকায় পরিদর্শনে গিয়ে ঘরে-বাইরে বিতর্কে পড়লেন ।

নান্টুবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, শিলিগুড়িতে সদ্য নিয়ে আসা দু’টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে বিরক্ত করার। তা নিয়ে বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞেরা আপত্তি তুলেছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে ওই একই জায়গায় গেলেন মন্ত্রী গৌতমবাবু। তবে তিনি একা নন। সঙ্গে ছিলেন একাধিক ব্যক্তি। এক পানশালার মালিকও তাঁর সঙ্গে থাকায় বিতর্ক তীব্র হয়েছে।

শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে মহানন্দা অভয়ারণ্যের সাফারিতে চার দিন আগে দুটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার আনা হয়েছে। আপাতত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে নিরিবিলিতে রাখা হয়েছে তাঁদের। কিন্তু, মন্ত্রী বাঘ দুটিকে রাখার ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে পরিদর্শনে যান। সে সময়েই দেখা যায়, শিলিগুড়ির একটি পানশালার মালিক পিন্টু দাসও মন্ত্রীর পাশেই ঘুরছেন। ঘটনাচক্রে, তৃণমূলের যুব সংগঠনে যুক্ত হলেও তিনি কেন সরকারি পরিদর্শনে সামিল হয়েছেন, তা নিয়ে অফিসার-কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যেই প্রশ্ন ওঠে।

তবে পর্যটন মন্ত্রীর দাবি, তিনি গিয়েছেন শুনে অনেকেই সেখানে ভিড় করেছিলেন। মন্ত্রী বলেন, ‘‘এ মাসের শেষে এই সাফারি উদ্বোধনের কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। এই সাফারিতে পর্যটন দফতরের অনেক টাকাও রয়েছে। তাই সব ঠিকঠাক রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখতেই আমি গিয়েছিলাম।’’ কিন্তু পিন্টুবাবু কেন গিয়েছিলেন? গৌতমবাবুর জবাব, ‘‘তিনি যুব সংগঠনে যুক্ত। পরিদর্শনের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগসূত্র নেই। অন্য কারণে গিয়ে থাকতে পারেন। আমার জানা নেই।’’ পিন্টুবাবুর বক্তব্য, ‘‘ওখানে আমাদের দলের অনেকেই ছিলেন। আমিও একটি ওয়ার্ডে দলের যুব সভাপতি। তাই গিয়েছিলাম।’’ ঘটনাচক্রে, দু’সপ্তাহ আগে পিন্টুবাবুর আওতায় থাকা ডিস্কোয় দুই তরুণী নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে। তবে আলোচনার মাধ্যমে নিগ্রহকারীরা ক্ষমা চাওয়ায় বিষয়টি মিটলেও তা নিয়ে পুলিশ ও আবগারি দফতরের তদন্ত এখনও চলছে।

সাফারিতে নতুন আসা বাঘ।

তাই এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই শিলিগুড়ির অনেক দলের নেতা-জনপ্রতিনিধিরা সরব হয়েছেন। বিজেপির প্রদেশ সম্পাদক তথা বিধানসভা ভোটে গৌতমবাবুর কাছে পরাজিত প্রার্থী রথীন বসুর মন্তব্য, ‘‘দলের লোককে নিয়ে সরকারি পরিদর্শনে যাওয়া উচিত নয়, সেটা গৌতমবাবুর মতো মন্ত্রী আর কবে বুঝবেন!’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার মনে করেন, মন্ত্রীই যদি বিধি অমান্য করেন তা হলে তা উদ্বেগের।

দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সুজয় ঘটকের মতে, ব্যক্তিগত সম্পর্কের সঙ্গে সরকারি কাজকে গুলিয়ে ফেলাটা ঠিক নয়। তিনি বলেন, ‘‘জনপ্রতিনিধিদের দেখলে অনেকেই ভিড় করেন। কিন্তু, সরকারি কাজের সময়ে তাঁদের দূরে রাখাটাই বাঞ্ছনীয়।’’

এ দিন সাড়ে ১২টা নাগাদ মন্ত্রী বেঙ্গল সাফারির মূল গেটে পৌঁছন। সেখানে গাড়ির কনভয় ছেড়ে হেঁটেই সাফারির ক্যাফেটেরিয়ায় দিকে যান। সেই সময় থেকেই পানশালার মালিক মন্ত্রীর পাশেই ছিলেন। তিনি মন্ত্রীর সঙ্গে সাফারির গাড়িতে উঠে পড়েন।

ওড়িশার নন্দনকানন থেকে আনা স্নেহাশিস, শীলা দুটি রয়্যাল বেঙ্গলকে দেখার পর প্রস্তাবিত দুটি পর্যটন কেন্দ্রের জমি দেখতে যান। তার আগে সরকারি অফিসারদের সঙ্গেও বসে কথা বলেন।

সে সময়ে পিন্টুবাবুকে মন্ত্রী-অফিসারদের জন্য রাখা চেয়ারেও বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক পানিক্কর হরিশঙ্কর, পরিবেশপ্রেণী সংগঠন ‘অ্যাক্ট’-র আহ্বায়ক রাজ বসু, রাজগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সদস্য দেবাশিস প্রামাণিক ছাড়াও বেঙ্গল সাফারির অধিকর্তা অরুণ মুখোপাধ্যায়।

অরুণবাবু এবং মহকুমাশাসক মন্তব্য করতে চাননি। রাজবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমি পিন্টু বলে কাউকে চিনি না। কাজেই আমি কিছু বলতে পারব না।’’

নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gautam Dev Bengal Safari Liquor Shop Owner
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE