Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভূতের ভয়ে সন্ধে হলেই দোর আঁটছে গোবিন্দপুর

উত্তর গোবিন্দপুর বাজারে চায়ের দোকান করে সংসার চালান ঝরুনাথ রায়! তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে ভূতের আতঙ্কে সন্ধ্যার পর বাজার ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

গৌর আচার্য
কালিয়াগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:২৪
Share: Save:

উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ থানার ধনকৈল গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর গোবিন্দপুর এলাকার বাসিন্দা গোকুল বর্মন কালিয়াগঞ্জ ও হেমতাবাদ ব্লকের বিভিন্ন হাটে তেলেভাজা বিক্রি করেন। গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি হাট থেকে পসরা গুটিয়ে সন্ধ্যা সাতটার আগেই বাড়ি ফিরে আসছেন। গোকুলবাবুর দাবি, গ্রামে ঢোকার রাস্তার পাশেই একটি আমগাছ রয়েছে! গত তিনদিন ধরে সন্ধ্যার পর অন্ধকার নেমে আসলে গ্রামের অনেকেই ওই গাছে সাদা পাঞ্জাবি পরা কাউকে ঝুলে থাকতে দেখছেন! মাঝে মাঝে গাছ থেকে পুরুষ কন্ঠের কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে! তিনি ফিসফিস করে বলেন, ‘‘ওই গাছে ফাঁসকালি ভূত বাসা বেঁধেছে! তাই ভূতের খপ্পড়ে পড়ার ভয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাচ্ছি!’’

উত্তর গোবিন্দপুর বাজারে চায়ের দোকান করে সংসার চালান ঝরুনাথ রায়! তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে ভূতের আতঙ্কে সন্ধ্যার পর বাজার ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। সবাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। তাই রাত ৮টার মধ্যেই দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তাঁরাও।

তবে ওই গাছে সাদা পাঞ্জাবি পরা কাউকে ঝুলে থাকতে দেখেছেন বা গাছ থেকে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন, এমন কাউকে গ্রামে খুঁজে পাওয়া যায়নি বা কেউ তাঁদের হদিসও দিতে পারেননি। এলাকায় চুরি করার উদ্দেশ্যে দুষ্কৃতীদের একাংশ কৌশলে গুজব ছড়িয়ে দিয়েছে কি না, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন কালিয়াগঞ্জ থানার আইসি বিচিত্রবিকাশ রায়।

প্রায় তিন মাস আগে ওই আমগাছ থেকে উত্তর গোবিন্দপুর এলাকার বাসিন্দা মন্টু দেবশর্মা নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, পারিবারিক কোনও সমস্যার কারণে মানসিক অবসাদে ওই ব্যক্তির গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। এর পর গত দু’মাসে ওই গ্রামেরই আরও দুই যুবক বিষক্রিয়ায় মারা যান। পারিবারিক বিবাদের জেরে তাঁরাও বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশের দাবি।

স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য প্রফুল্ল রায় সবটাই রটনা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। কালিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নিতাই বৈশ্যও বাসিন্দাদের বোঝাতে হবে বলে জানিয়েছেন। বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সম্পাদক অঞ্জন মজুমদার বলেন, ‘‘ভূত বলে কিছু নেই। সবটাই গুজবের জেরে আতঙ্ক।’’ তাই তিন দিন ধরে এলাকায় সচেতনতা ও শিবির চালিয়ে যাচ্ছে মঞ্চ।

গ্রামে ১২৫টি পরিবারের বসবাস। ৫০টিরও বেশি পরিবার ভূতের আতঙ্কে রয়েছেন বলে বাসিন্দাদের দাবি। ওই গ্রামের বেশির ভাগ বাসিন্দা চাষবাষ, দিনমজুরি, আনাজ বিক্রি, ছোটখাটো ব্যবসা ও ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। বাসিন্দাদের দাবি, গত একসপ্তাহ ধরে ওই গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে ভূতের আতঙ্ক এতটাই গ্রাস করেছে যে, সন্ধ্যা নামতেই তাঁরা বাইরের বিভিন্ন কাজ সেরে বাড়িতে ঢুকে পড়ছেন। এলাকার বেশ কিছু দোকানপাটও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সন্ধ্যা সাতটার পর অনেকেই ঘোরদোরের দরজা ও জানালা বন্ধ করে দিচ্ছেন! রাস্তাঘাট সুনসান হয়ে যাচ্ছে! দরকার ছাড়া কেউই বাড়ি থেকে বার হচ্ছেন না।

এলাকার গৃহবধূ গোধুলি বর্মন, মনি রায়, ভ্যানচালক বাবলু দেবশর্মা ও চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী পলি বর্মনদের দাবি, ‘‘পুলিশ ও প্রশাসন গাছটি কেটে ফেলুক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ghost panic Kaliaganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE