দৃষ্টান্ত: বাড়িতে পড়ছে বিনতি। নিজস্ব চিত্র
দু’বছর আগের একটা ঘটনা জীবনে এসেছিল দুঃস্বপ্নের মতো। স্কুলে আসার পথেই ট্রাকের তলায় পড়ে গিয়েছিল সপ্তম শ্রেণির বিনতি রায়। প্রাণে বাঁচলেও ডান হাত সম্পূর্ণ পিষ্ট হয়ে যায় তার। বিনতির চোখের সামনেই মারা যায় তার এক সহপাঠী। সেই দুর্ঘটনার ঘোর কাটিয়ে পেরিয়ে এসেছে বিনতি। ডান হাত কাটা গিয়েছে। কিন্তু লেখাপড়া থামেনি। এ বারে বাঁ হাতেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে সে।
লাটাগুড়ি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী বিনতির মাধ্যমিক পরীক্ষার আসন পড়েছে লাটাগুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে। বিনতির এই জেদকে প্রতিদিন নীরবেই কুর্নিশ করছেন পরীক্ষার হলের নজরদার শিক্ষক-শিক্ষিকারাও।
ছোটবেলা থেকেই জীবনযুদ্ধে জেদই সম্বল বিনতির। লাটাগুড়ির ঝাড় মাটিয়ালি গ্রামের বাসিন্দা বিনতির বাবা ছোটবেলাতেই মারা যান। মা পুষ্প রায় মুড়ি ফেরি করে সংসার চালিয়েছেন। বিনতির একমাত্র দিদি মাধুরীও অত্যন্ত লড়াকু। মুর্শিদাবাদ থেকে পলিটেকনিকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করে লাটাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতেই সম্প্রতি সহ বাস্তুকারের পদে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। বোনের কথা বলতে গিয়ে চোখে জল আসে তাঁর। মাধুরী বলেন, “বোন অসুস্থ। বেশিক্ষণ বসে পড়তে গেলেই ওর পিঠে ব্যথা শুরু হয়। তাও কোনওমতে বাঁ হাতে লেখা শিখে পরীক্ষা দিচ্ছে সে।”
জেদ সম্বল করেই লড়ে যাচ্ছে বিনতি। ইংরেজি পরীক্ষা দিয়ে সে বলেছে, ‘‘কয়েকমাস আগেই মনে মনে শপথ করেছিলাম যে যত কষ্টই হোক পরীক্ষা আমি দেবই।’’ লাটাগুড়ি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটির সভাপতি মহুয়া গোপ বলেন, ‘‘এমন মেয়ে সমগ্র লাটাগুড়ির গর্ব।’’ লাটাগুড়ির স্থানীয় বাসিন্দা তথা সমাজকর্মী অনির্বাণ মজুমদার এবং পদ্মশ্রী করিমুল হোক বুধবার বিকেলে পরীক্ষার পর বিনতির বাড়িতে যান। বিনতির জন্যে পুণে থেকে একটি কৃত্রিম হাত আনার চেষ্টাও চলছে বলে জানান তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy