Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

৬ নম্বর ওয়ার্ডে সাফাই অভিযান নিয়ে টক্কর অশোক-গৌতমের

ভোটের একমাস আগে থেকেই টানটান উত্তেজনা বজায় ছিল শিলিগুড়ির ছয় নম্বর ওয়ার্ডে। একদিকে, রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচাযর্কে ওই ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী করে মেয়র পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করে দল। তেমনিই, ওয়ার্ডে প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভে অভিযোগ ওঠে তৃণমূলে।

৬ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ের পর এলাকায় ভোটারদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে দেখা হয়ে যায় প্রতিদ্বন্দ্বী নির্দল প্রার্থী আলম খানের সঙ্গে। আলম খান অশোক ভট্টাচার্কে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানান ও সহযোগিতারও আশ্বাস দেন। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

৬ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ের পর এলাকায় ভোটারদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে দেখা হয়ে যায় প্রতিদ্বন্দ্বী নির্দল প্রার্থী আলম খানের সঙ্গে। আলম খান অশোক ভট্টাচার্কে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানান ও সহযোগিতারও আশ্বাস দেন। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০৩:১১
Share: Save:

ভোটের একমাস আগে থেকেই টানটান উত্তেজনা বজায় ছিল শিলিগুড়ির ছয় নম্বর ওয়ার্ডে। একদিকে, রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচাযর্কে ওই ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী করে মেয়র পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করে দল। তেমনিই, ওয়ার্ডে প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভে অভিযোগ ওঠে তৃণমূলে। শেষে প্রার্থী ঠিক করে ভোটের আগে অবধি ওয়ার্ডে প্রচারও করেন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌতম দেব। তবে ২৮ এপ্রিল চর্তুমুখী লড়াইয়ে ফলাফলে ৫০০ উপর ভোটে জেতেন অশোকবাবু। কিন্তু চাপান-উতোর এখনও অব্যাহত শহরের লাইফলাইন বলে পরিচিত হিলকার্ট রোডের গা ঘেঁষা এই ওয়ার্ডটিতে। অন্তত ভোটের পর প্রথম রবিবার সকালে, তেমনটাই দেখলেন করলেন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।

সাত সকাল গাড়ি ডাঙিপাড়া এলাকায় ঢুকে পড়েন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। তার আগে অবশ্য ট্রাক, পেলোডার-সহ বিভিন্ন গাড়ি নিয়ে এলাকায় হাজির হয়ে যান পুরসভার সাফাই বিভাগের কর্মী অফিসারদের একাংশ। স্থানীয় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কুরেশি মহাল্লা নর্দমা, কালভার্টে-এ শুরু হয় সাফাই অভিযান। মশা মারার তেল ছেটানো শুরু হয় পাড়ার অলিগলিতে। মন্ত্রী মিনিট ১৫ দাঁড়িয়ে কাজের তদারকিও করে চলে যান। আর এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সাড়ে নয়টার পরেই ওয়ার্ডের চপ্পলপট্টি, মসজিদ এলাকায় পৌঁছান সদ্য নির্বাচিত কাউন্সিলর তথা সিপিএম নেতা অশোকবাবু। সাফাই অভিযান নিয়ে খোঁজখবর নেওয়ার পর এলাকায় ঘোরা শুরু করেন। তাঁকে ভোটে জেতানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে শুভেচ্ছার কার্ডও বিলি করেন।

অশোকবাবু বলেন, ‘‘মন্ত্রী শুনছি, সকাল থেকে এলাকায় কাউন্সিলরের কাজ করছেন। খুব ভাল কথা। ওঁর মনে হয়, ভোটে হারের পর কোনও কাজ নেই।’’ এর পরেই অশোকবাবু’র অভিযোগ, ‘‘পুরসভা কমিশনার এবং পুর সচিব তৃণমূলের নেতা হয়ে গিয়েছেন। এলাকার কাউন্সিলর কিছু জানেন না, কী হচ্ছে। এখন তো বোর্ড তৈরিই হয়নি। সেখানে পুরসভা কাজ করতে পারে, কিন্তু মন্ত্রীর নির্দেশে পুরসভার সরকারি জিনিসপত্র ব্যবহার করছেন। এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা কী ভাবে নেওয়া যায়, দেখছি।

গৌতমবাবুর দাবি, মন্ত্রী হিসাবে নয় এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান হিসাবে আইন মেনেই এলাকায় গিয়ে কাজ করেছি। তিনি বলেন, ‘‘এসজেডিএ পুরসভাকে আর্থিক সাহায্য করে। বহু জায়গায় যৌথভাবে কাজ হয়। এখানেও হয়েছে। আর ভোটের আগে আমরা এলাকায় যে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, সব পালন করব। নিকাশি, নর্দমা, রাস্তা সব হবে।’’ মন্ত্রী জানান, আমরা উন্নয়ন নিয়ে রাজনীতি করি না। আরক অশোকবাবুদের কথা আমরা উপেক্ষা করছি। এদিন মন্ত্রীর সঙ্গে এলাকায় দলের পরাজিত প্রার্থী অরূপরতন ঘোষ ছাড়াও এলাকায় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা ছিলেন। পরে মন্ত্রী বুদ্ধ পূর্ণিমার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধাননগর এলাকায় চলে যান।

সেই সময় মহাবীরস্থান রেলগেট এলাকা থেকে বাড়ি বাড়ি ঘুরতে থাকেন অশোকবাবু। অনেকেই এগিয়ে এসে তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। একসময় এলাকার তৃণমূলের বিক্ষুদ্ধ নেতা তথা ভোটের নির্দল প্রার্থী আলম খানও অশোকবাবুকে দেখে এগিয়ে এসে শুভেচ্ছা বিনিময় করে যান। অশোকবাবু বলেন, ‘‘এলাকার সার্বিক উন্নয়নের কাজ করা হবে। আমরা বোর্ড গঠনের পর পরিকল্পিতভাবে সব কাজ করব। এখন যা হচ্ছে, সবটাই রাজনীতি।’’ বেশ কিছুক্ষণ এলাকায় থাকার পর অশোকবাবুও মেডিক্যাল সেলস এক্সিকিউটিভদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চলে যান।

এর পরে অবশ্য বেলা ১১টা নাগাদ ফের এলাকায় যান মন্ত্রী গৌতমবাবু। আরেক দফায় তিনি এলাকার সাফাই-র কাজের তদারকি করেন। কোন কোন এলাকায় নিকাশি, জঞ্জাল নিয়ে সমস্যা হচ্ছে তাও শুনে নেন। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমরা মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। তাই ভোট শেষ হতেই কাজে নেমে পড়েছি। সমস্ত ওয়ার্ডেই কাজ করা হবে।’’

দিনভর এ সব দেখার পর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ‘‘পুরোটাই মনে হচ্ছে এলাকার নিয়ন্ত্রণের লড়াই। একজন কাউন্সিলর হয়ে কাজে নেমে পড়েছেন। আরেকজন, হেরেও এলাকা ছাড়তে চাইছেন না। তবে আমাদের কাজ হলেই ভাল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE