Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সিন্ডিকেট-রাজ

বাদ যায়নি গজলডোবাও

বাড়ি বানাতে নির্মাণ সামগ্রী ওঁদের কাছ থেকে কিনতেই হবে। ভাড়াটেও ঠিক করে দেবেন ওঁরা। উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রীও। কী চলছে শিলিগুড়িতে! সরকারি সূত্রের খবর, প্রকল্প এলাকায় নির্মীয়মাণ একটি হোটেল প্রকল্পে দাবিমতো শ্রমিক, নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের জন্য চাপাচাপি শুরু হয়। দাবিমতো টাকা তো বটেই, ঠিকাদার সংস্থার কর্মীদের ভয় দেখানোও শুরু হয়। এমনকী, রাতে গিয়ে কাজ বন্ধের হুমকি দিয়ে আসা হয়। শেষে হোটেল সংস্থার তরফে অঞ্জন বসু শিলিগুড়ির এনজেপি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। গ্রেফতার করা হয় প্রহ্লাদ সরকার এবং জনার্দন সরকার নামের দুই অভিযুক্তকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৮ ০২:১৮
Share: Save:

বেসরকারি নির্মাণ তো বটেই, সরকারি প্রকল্পেও রয়েছে সিন্ডিকিটের ছায়া। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের পর্যটন প্রকল্প গজলডোবার ‘ভোরের আলো’ প্রকল্পেও গত বছর সিন্ডিকেট রাজের বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়।

সরকারি সূত্রের খবর, প্রকল্প এলাকায় নির্মীয়মাণ একটি হোটেল প্রকল্পে দাবিমতো শ্রমিক, নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের জন্য চাপাচাপি শুরু হয়। দাবিমতো টাকা তো বটেই, ঠিকাদার সংস্থার কর্মীদের ভয় দেখানোও শুরু হয়। এমনকী, রাতে গিয়ে কাজ বন্ধের হুমকি দিয়ে আসা হয়। শেষে হোটেল সংস্থার তরফে অঞ্জন বসু শিলিগুড়ির এনজেপি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। গ্রেফতার করা হয় প্রহ্লাদ সরকার এবং জনার্দন সরকার নামের দুই অভিযুক্তকে।

পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্তেরা শাসকদলের ঘনিষ্ট বলেই পরিচিত এবং জেলায় শাসকদলের প্রবীণ এক বিধায়কের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ রয়েছে। যদিও এলাকার ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিধায়ক তথা মন্ত্রী গৌতম দেব পুলিশ-প্রশাসনকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। মন্ত্রী জানিয়ে দেন, কোনও রকম তোলাবাজি বা জোরজবরদস্তি বরদাস্ত করা হবে না এবং কোনও সিন্ডিকেট ব্যবসা
চলবে না।

চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাইপাস লাগোয়া ঘোড়ামোড়ে নিজের চা গুদামে নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন ব্যবসায়ী পবনকুমার গোয়েল। তিনি এনজেপি থানায় অভিযোগ করেন, স্থানীয় এক সিন্ডিকেটের তিন সদস্য নিয়মিত গুদামে গিয়ে এই বলে হুমকি দিচ্ছেন যে, তাঁদের ঠিক করা দামেই বালি, পাথর কিনতে হবে, যা বাজারের দামের চেয়ে অনেকটাই বেশি। মালিকপক্ষ রাজি না হওয়ায় গুদামের গেটে তালা মেরে দিয়ে ভাঙচুর চালানো হয় বলেও অভিযোগ। অভিযোগ পেয়ে অবশ্য এনজেপি থানার পুলিশ আর দেরি করেনি। গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে। অভিযুক্তদের সকলেই এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত।

শাসকদলের নেতা এবং পুলিশের একাংশ জানাচ্ছেন, জোরজুলম বেশি চলে ব্যবসায়ীদের উপরই। অসম থেকে শিলিগুড়ির বাইপাসে জমি কিনে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন এক ব্যবসায়ী। এক গাড়ি ইট ফেলার পরেই দেখলেন, ট্রাক আটকে দেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে জমিতে গিয়ে শুনলেন, কয়েকজন যুবক ও প্রবীণ চাঁদা চাইছেন। কত চাঁদা দিতে হবে, ব্যবসায়ী তা জানতে চাইলে ক্যারমবোর্ডের দাম চাওয়া হয়। তা শুনে ব্যবসায়ী এক কথায় রাজি হন। ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘ওঁরা, ক্যারমবোর্ড বাবদ ৫ লক্ষ টাকা চাইলেন। সোনা দিয়ে বাঁধানো বোর্ড নাকি!’’ দরাদরি করে ওই ব্যক্তি ৩ লক্ষ টাকা দেওয়ার পরে নির্মাণকাজ শুরু করতে পেরেছিলেন। ওই ব্যবসায়ী জানান, এখন ওই সিন্ডিকেটের ছেলেরাই তাঁকে নানা ভাবে ‘সহযোগিতা’ করে থাকেন। তাই তিনি কারও নাম প্রকাশ্যে আনতে চান না। আবার রয়েছে ‘লাইফ মেম্বারশিপ’ প্রস্তাব! কী সেই প্রস্তাব? (চলবে)

(প্রতিবেদন: কিশোর সাহা, কৌশিক চৌধুরী, শুভঙ্কর চক্রবর্তী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE