Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দোরে দোরে ঘুরেও ‘জীবিত’ হচ্ছেন না ‘মৃত’ বৃদ্ধা!

বালুরঘাট শহর লাগোয়া চকভৃগু গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার আত্রেয়ীর সেতুর বাঁধের ধারে ঝুপড়ি ঘরে একাই থাকেন নিঃসন্তান ওই বৃদ্ধা। প্রায় দশ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি একা। তাই মাসিক ৫০০ টাকার এই বার্ধক্যভাতাটুকুই তাঁর গ্রাসাচ্ছাদনের একমাত্র উপায়।

জীবিত: শান্তিবালা। নিজস্ব চিত্র

জীবিত: শান্তিবালা। নিজস্ব চিত্র

অনুপরতন মোহান্ত
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০৩:১১
Share: Save:

কয়েক মাস আগে সরকারি নথিতে ‘মৃত’ হয়ে গিয়েছিলেন শান্তিবালা দাস। সেই কারণে তাঁর বার্ধক্যভাতাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তিনি যে মরেননি তার প্রমাণ দিতে অগত্যা নিজেই পঞ্চায়েত ও ব্লক অফিসে গিয়েছিলেন অশীতিপর ওই বৃদ্ধা। কিন্তু গত চার মাস ধরে ঘুরে ঘুরেও তিনি এখনও ‘জীবিত’ হননি সরকারি খাতায়! পাড়ার লোকজনদের কাছে ওই বৃদ্ধা এখন বলছেন, ‘‘আমাকে কি মরে প্রমাণ করতে হবে যে, আমি মরিনি!’’

বালুরঘাট শহর লাগোয়া চকভৃগু গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার আত্রেয়ীর সেতুর বাঁধের ধারে ঝুপড়ি ঘরে একাই থাকেন নিঃসন্তান ওই বৃদ্ধা। প্রায় দশ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি একা। তাই মাসিক ৫০০ টাকার এই বার্ধক্যভাতাটুকুই তাঁর গ্রাসাচ্ছাদনের একমাত্র উপায়। সেটা আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অর্ধাহারেই দিন কাটাচ্ছেন তিনি। কখনও কখনও ভিক্ষেও করতে হচ্ছে। পঞ্চায়েত এবং ব্লক অফিসে ঘুরেও তিনি কাউকে বিশ্বাস করাতে পারেননি যে তিনি মরেননি। ৮৪ বছরের শান্তিবালা কিছুতেই বুঝতে পারছেন না, আর কী ভাবে তিনি প্রশাসনকে তাঁর জীবিত থাকার প্রমাণ দেবেন।

গত বন্যায় ঘর ভেঙে যাওয়ার পর পলিথিনের জোড়াতালি দিয়ে কোনও রকম ঝুপড়ি করে থাকেন। দূর সম্পর্কের আত্মীয়রা মাঝেমধ্যে খোঁজ নেন। তখন কিছু সাহায্য মেলে। কিন্তু বার্ধক্যভাতার টাকাতেই তাঁর সারা বছর কোনওরকমে ভাতকাপড়ের সংস্থান হয়। গত এপ্রিলের পর থেকে হঠাৎ বার্ধক্যভাতা বন্ধ হয়ে যায়। এর পর স্থানীয়দের পরামর্শে চকভৃগু পঞ্চায়েত থেকে বালুরঘাট পঞ্চায়েত সমিতিতে একাধিকবার ঘুরে জানতে পারেন, সরকারি নথিতে তাঁর মৃত্যুর তারিখ পর্যন্ত রয়েছে! তিনি যে বেঁচে রয়েছেন সেটা বারবার পঞ্চায়েত ও ব্লক অফিসে গিয়ে তিনি প্রমাণ দেন। তার পরেও ভাতা চালু হয়নি তাঁর।

ঘটনাটি বালুরঘাটের বিডিওর নজরে আসতে ব্লক প্রশাসনে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। বিডিও সুস্মিতা সুব্বা বলেন, ‘‘ভুলবশত কোনও কারণে তালিকায় বৃদ্ধার নামের পাশে মৃত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এপ্রিলের পর থেকে শান্তিবালাদেবী বার্ধক্যভাতা পাননি। নথি সংশোধন করে ভাতা চালু করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’ চকভৃগু গ্রামপঞ্চায়েত সূত্র্রের খবর, ভাতা চালু রাখতে প্রতি বছর ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ জমা দিতে হয় সংশ্লিষ্ট প্রাপককে। ওই বৃদ্ধা সম্ভবত সেই শংসাপত্র জমা না দেওয়ায় বিভ্রান্তি হয়েছে। শান্তিবালার নাম দ্রুত বার্ধক্যভাতার তালিকায় নাম তোলা হচ্ছে বলে ব্লকের তরফে জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Subsidy Government Old Woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE