Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বাঁধভাঙা ক্ষয়ক্ষতি

এ দিন সকাল থেকে অঝোর বৃষ্টিতে বালুরঘাটের আত্রেয়ী নদীর একাধিক জায়গায় বাঁধ ফুটো হয়ে ভেঙে যায়। পূর্ব দিকে বেলতলাপার্ক থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে হুহু করে জল ঢুকে চকভবানী, ঘাটকালী, বাজারপাড়া হয়ে খিদিরপুরের ঘরবাড়ি প্লাবিত করেছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৪৯
Share: Save:

দক্ষিণ দিনাজপুর

বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নদীর জল। রবিবার ভোরে গঙ্গারামপুরের জাহাঙ্গিরপুর অঞ্চলের রামদেবপুরে মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে আব্দুল রহমান মিয়াঁ (৫৬) ও জুলেখা বিবি (৫০) নামে এক দম্পতির মৃত্যু হয়েছে। বালুরঘাট শহরের সঙ্গে হিলি, তপন, কুশমন্ডি এবং গঙ্গারামপুর ব্লকের একাংশ প্লাবিত হয়ে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠেছে।

এ দিন সকাল থেকে অঝোর বৃষ্টিতে বালুরঘাটের আত্রেয়ী নদীর একাধিক জায়গায় বাঁধ ফুটো হয়ে ভেঙে যায়। পূর্ব দিকে বেলতলাপার্ক থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে হুহু করে জল ঢুকে চকভবানী, ঘাটকালী, বাজারপাড়া হয়ে খিদিরপুরের ঘরবাড়ি প্লাবিত করেছে। চকভবানীর ত্রিধারাপাড়ায় স্ল্যুইসগেট ভেঙে জেলাশাসকের কার্যালয় থেকে জেলা আদালত পর্যন্ত প্রায় ১০০ মিটার রাজ্যসড়ক এক হাঁটু জলের তলায় চলে যায়। শহরের একে গোপালন কলোনির ঘরবাড়িও ডুবেছে।

বালুরঘাটের পাগলিগঞ্জ এলাকায় ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়কের একাংশ আত্রেয়ীর জলের ধাক্কায় ভেঙে গর্ত হয়েছে। তপন ব্লকের রামপাড়াচেঁচড়ায় পুনর্ভবা নদীর বাঁধ ভেঙে বুড়িতলা, আজমতপুর, রামচন্দ্রপুর এবং গুরইলে ঘরবাড়ি, চাষের জমি প্লাবিত হয়েছে। এলাকার প্রাক্তন পঞ্চায়েত সভাপতি বিমল তরফদার বলেন, ‘‘আমন ধান ও সব্জি চাষের জমি ভেসে চাষিরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন।’’ টাঙন নদের বাঁধ ফুটো হয়ে কুশমন্ডি ব্লকের বেদাতিপাড়া এবং কালিকামোড়া ভেসে গিয়েছে। সর্বত্র ত্রাণের দাবি উঠেছে।

জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে ৫০টি ত্রাণ শিবির খুলে খাদ্যসামগ্রী ও পলিথিন বিলির কাজ শুরু হয়েছে।’’ তিনি জানান, পুনর্ভবা চূড়ান্ত বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। আত্রেয়ী এবং টাঙনে বিপদসীমা ছাড়িয়ে জল বাড়ছে। হিলি, বালুরঘাট, তপন এবং কুশমন্ডি ব্লক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সেচ এবং পূর্ত বিভাগ বাঁধ মেরামতি শুরু করেছে বলে জেলাশাসক জানান। গঙ্গারামপুরের বিডিও বিশ্বজিৎ ঢ্যাং জানান, মাটির দেওয়াল যখন ধসে পড়ে, তখন ওই দম্পতি ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। বাসিন্দারা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়। মৃত দম্পতির পরিবারের সদস্যদের বিডিও সমব্যথী প্রকল্প থেকে দু’হাজার টাকা ও ত্রাণসাহায্য করেন। বালুরঘাটের পুরপ্রধান রাজেন শীল বলেন, সমস্ত হাইস্কুলে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার জন্য পুরসভায় কন্ট্রোলরুম চালু করা হয়েছে।

আলিপুরদুয়ার

টানা দু’দিন জলবন্দি থাকার পর জল নামতে শুরু করল আলিপুরদুয়ার শহরে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে জেলা জুড়ে। মাদারিহাটের এক বালকের ডুবে মৃত্যু হয়েছে। প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ জলবন্দি ছিলেন দু’দিন। প্লাবিত হয়ে বিভিন্ন ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতে আড়াইশো হেক্টর জমির শষ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জল নামা শুরু হতেই দুর্গতদের ত্রাণ পৌঁছনোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা।

সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সমস্ত নদীর জল দ্রুত গতিতে নামছে। রবিবার সকাল থেকে আকাশ পরিস্কার ছিল। কালজানি ও সংকোশ নদীতে হলুদ সংকতে জারি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আলিপুরদুয়ারে ৮৬, ২০ মিমি ও হাসিমারায় ৬৬. ২০ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। কিষানগঞ্জে রেল লাইনে জল উঠে যাওয়ায় বহু ট্রেন বাতিল হয়েছে বলে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল সূত্রে জানা গিয়েছে।

মহকুমাশাসক সমীরণ মণ্ডল জানান, শুক্রবার গভীর রাত থেকে জেলা শাসকের দফতরে খিচুড়ি রান্না করে দুর্গতদের বিলি করা হচ্ছে। সঙ্গে জলের পাউচ, চিঁড়ে, গুড় ও শিশুদের গুঁড়ো দুধ। রবিবার কয়েক হাজার মানুষকে খাবার দেওয়া হয়েছে।

ডিজাস্টার সেল সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনশো পাঁচটি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আট হাজার পাঁচশো বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত। রবিবারও আনন্দনগর, শান্তিনগর, ছ’নম্বর ওয়ার্ড সহ বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন ছিল। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গৌতম তালুকদার এলাকায় গিয়ে চিঁড়ে গুড় বিলি করেন। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তনু ভৌমিক এলাকায় গিয়ে মানুষের অসুবিধের কথা শোনেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে রাতুল বিশ্বাস জানান শান্তিনগর ও শোভাগঞ্জে ইনভার্টার চালাতে গিয়ে দু’জন মারা গিয়েছেন। তা ছাড়া ঘাঘরা এলাকায় জল নামায় সেখানে ওষুধ ও পরিস্রুত পানীয় জলের কথা প্রশাসনকে জানিয়েছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE