শোক: মল্লিকার মা। নিজস্ব চিত্র
নিম্নবিত্ত পাড়া। টিনের চালা বাড়ি। ঘেঁষাঘেঁষি সব ঘর। এনজেপি রেল হাসপাতাল মোড় বাজার নামে পরিচিত এই এলাকা এখন উজ্জ্বল এক জন পনেরো বছরের কিশোরীর নামে। মল্লিকা মজুমদার। গত ১৪ অগস্ট ‘ব্রেন ডেথ’ হয় তার। শনিবার তার একাধিক অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হয়েছে তিন জনের দেহে।
এই এলাকার রেল কলোনি হাইস্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ত মল্লিকা। তার সহপাঠী রাখি বর্মন শনিবার বলছিল, ‘‘মল্লিকার পথে চলে আমরাও এখন থেকে কোনও না কোনও ভাবে সমাজের উপকার করার চেষ্টা করব। ও আমাদের সকলের প্রেরণা হয়ে থাকবে।’’
মল্লিকার বাবা মানিক পেশায় ট্রাকচালক। কাকারা ঠিকাদারের অধীনের শ্রমিকের কাজ করেন। মানিকবাবু বলছিলেন, ‘‘আমি অঙ্গদানের কিছুই বুঝতাম না। এখন মেয়ের জন্য কষ্টও হচ্ছে, আবার গর্বে বুক ফুলেও উঠছে।’’ একান্তবর্তী এই পরিবারের মাথা, মল্লিকার ঠাকুর্দা প্রভাতবাবু অসুস্থ। নাতনির অঙ্গদানে তিনিও গর্বিত। প্রভাতবাবু বলেন, ‘‘ সারাজীবনে যা করতে পারিনি, মল্লিকা জীবন দিয়ে সেটাই করে গেল।’’
পরিবারের লোকেরা জানিয়েছে, ছোটবেলা থেকেই মল্লিকার কানে ব্যথা ছিল। তবে কী হয়েছিল, তা কেউ জানত না। ৩০ জুলাই স্কুলে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে। ৩১ জুলাই তাকে ভর্তি করা হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। ১ অগস্ট নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় তার। ১৪ তারিখ চিকিৎসকেরা জানান, তার ব্রেন ডেথ হয়েছে। মল্লিকার কাকা সুব্রত জানান, মস্তিষ্কের কোষ শুকিয়ে গিয়েছিল বলে চিকিৎসকদের কাছে শুনেছি। শুক্রবার রাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।
স্কুলে ক্যারাটে শিখত মল্লিকা। ছবি আঁকতেও ভালোবাসত। শেষ যে দিন স্কুলে গিয়েছিল, সে দিন ঠাকুমার রান্না করা বাটা মাছের ঝোল খেয়েছিল সে। মল্লিকাদের প্রতিবেশী ফুলদেবী পাসোয়ান বলেন, ‘‘হাসিখুশি একরত্তি মেয়েটা চোখ খুলে দিয়ে গেল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy