Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
শিলান্যাস করেন মোদী
Narendra Modi

‘সড়ক না মৃত্যুফাঁদ?’

শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার পর্যন্ত পূর্ব পশ্চিম মহাসড়কের কাজ দু’টি পর্যায়ে ভাগ করেছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।

বেহাল: চূড়াভাণ্ডারের মাঠ ছুঁয়ে যাওয়া মহাসড়ক। ছবি: দীপঙ্কর ঘট

বেহাল: চূড়াভাণ্ডারের মাঠ ছুঁয়ে যাওয়া মহাসড়ক। ছবি: দীপঙ্কর ঘট

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:০৩
Share: Save:

‘ফোর লেন’ সড়কের শিলান্যাস করেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার পরে কেটে গিয়েছে এক বছর সাত দিন! সড়ক তৈরির কাজে এখনও পর্যন্ত এক কড়াই পিচও ফেলা হয়নি। ২০১৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জলপাইগুড়ির চূড়াভাণ্ডারের মাঠে সরকারি অনুষ্ঠানে এসে পূর্ব পশ্চিম মহাসড়কের শেষ পর্যায়ের কাজের শিলান্যাস করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার পরে কাজ শুরু তো দূরের কথা, চূড়াভাণ্ডারের সেই মাঠ ছুঁয়ে যাওয়া মহাসড়কই এখন নিত্যযাত্রীদের কাছে আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। বাস চালকদের দাবি, ‘‘সড়ক তো নয়, যেন মৃত্যুফাঁদ।

শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার পর্যন্ত পূর্ব পশ্চিম মহাসড়কের কাজ দু’টি পর্যায়ে ভাগ করেছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। শিলিগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ি হয়ে ধূপগুড়ি পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের কাজ গত বছর মোদী সভা করার সময়েই চলছিল। মোদীর শিলান্যাস মঞ্চ বাঁধা হয়েছিল এই অংশের মধ্যে থাকা চূড়াভাণ্ডারে। চূড়াভাণ্ডার থেকে কিছুটা এগিয়ে ফালাকাটা থেকে সলসলাবাড়ি পর্যন্ত জাতীয় সড়কের অংশ সম্প্রসারণ করে ‘ফোর লেন’ তৈরির শিলান্যাস করেছিলেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থলের পাশে থাকা জাতীয় সড়কে এখন যাতায়াত করাটাই দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।

সম্প্রসারণের কাজ চলায় জাতীয় সড়কের পুরনো পিচের আস্তরণ পে লোডার দিয়ে খুবলে নেওয়া হয়েছে। পরে সেখানে আর নতুন করে কংক্রিট বা পিচের আস্তরণ পড়েনি। রাস্তার একপাশে পড়ে রয়েছে বালির স্তুূপ। সেখান থেকে ঝুরঝুর করে বালি গড়িয়ে পড়ছে রাস্তায়। রাস্তার খুবলে নেওয়া অংশে গাড়ি যাওয়ার সময়ে একদিকে কাত হয়ে প্রায় উল্টে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। যেখানে পিচ রয়েছে সেখানে বালিতে চাকা পিছলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে প্রতি মুহূর্তে। সড়কের এমন দশা যেখানে তার থেকে কয়েক পা দূরের মাঠে প্রধানমন্ত্রীর সভার জন্য শামিয়ানা টাঙানো হয়েছিল। সে দিনের শিলান্যাস ফলকে লেখা ছিল— শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার যাতায়াতের দূরত্ব এবং সময় দুই-ই কমবে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও তা হয়নি। উল্টে ভাঙা জাতীয় সড়কে যাতায়াত যন্ত্রণা আরও বেড়েছে বলেই অভিযোগ।

প্রধানমন্ত্রী মহাসড়কের যে অংশের শিলান্যাস করেছিলেন তাতে বরাদ্দ হয়েছে ১৯৩৮ কোটি টাকা। তার পরেও সড়কের কাজ শুরু না হওয়া প্রসঙ্গে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের শিলান্যাস করেছিলেন। প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করে তবেই সেই কাজে হাত দেওয়া হবে। তা হলে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে আগেভাগে শিলান্যাস করানো হল কেন? জাতীয় সড়ক কর্তপক্ষের কাছে অবশ্য সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হতে দেরির পিছনে সড়ক কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রশাসন জমি দিতে দেরি করেছে। আর জেলা প্রশাসনের পাল্টা দাবি, যে অংশে জমি নিয়ে কোনও সমস্যা নেই সেখানে সড়ক সম্প্রসারণ এতদিন থমকে ছিল। তবে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক কর্তার আশ্বাস, “আশা করছি, দ্রুত কাজ শেষ হবে।”

সড়ক নিয়ে রাজনৈতিক টানাপড়েনও চলছে। জলপাইগুড়ির জেলা তৃণমূল সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর অভিযোগ, “লোকসভা ভোটের আগে জাতীয় সড়ক তৈরির আশ্বাস দিয়ে শিলান্যাস করেছিলেন মোদী। ভোটে জেতার পরে বিজেপি সরকার সব ভুলে গিয়েছে।” বিজেপির জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামীর পাল্টা দাবি, “আগামী কয়েক মাসের মধ্যে জাতীয় সড়ক-সহ উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ ব্যবস্থার যা উন্নতি বা পরিবর্তন হবে তা সকলেই দেখতে পাবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendrta Modi Jalpaiguri Siliguri Four Lane
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE