Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চা বলয়ে আজ মমতার সভায় আশা, অভিমানও

মুখ্যমন্ত্রীর ডুয়ার্স সফর ঘিরে আশা-অভিমানের দোলাচলে রয়েছে উত্তরবঙ্গের চা শিল্প মহল। গত বছরের জুন মাসে মাদারিহাটে এসে আদিবাসী উপদেষ্টা পর্ষদের প্রথম বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। চা শ্রমিক-সহ আদিবাসী সমাজের উন্নয়নের জন্য গঠিত ওই পর্ষদের পরের বৈঠক ছ’মাস পরে হবে বলেও সে সময় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন।

এ ভাবেই ভেঙে পড়েছিল সভামঞ্চ। ছবি: রাজকুমার মোদক।

এ ভাবেই ভেঙে পড়েছিল সভামঞ্চ। ছবি: রাজকুমার মোদক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালবাজার শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩২
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রীর ডুয়ার্স সফর ঘিরে আশা-অভিমানের দোলাচলে রয়েছে উত্তরবঙ্গের চা শিল্প মহল।

গত বছরের জুন মাসে মাদারিহাটে এসে আদিবাসী উপদেষ্টা পর্ষদের প্রথম বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। চা শ্রমিক-সহ আদিবাসী সমাজের উন্নয়নের জন্য গঠিত ওই পর্ষদের পরের বৈঠক ছ’মাস পরে হবে বলেও সে সময় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন। এরপরে ন’মাস কেটে গেলেও পর্ষদের বৈঠক না হওয়ায় আদিবাসী সমাজের একটি অংশ ক্ষুব্ধ। সে কারণে মুখ্যমন্ত্রী গত সোমবার থেকে ডুয়ার্সে থাকলেও, তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন না বলে কয়েকটি আদিবাসী সংগঠন দাবি করেছেন। কেউ আবার দাবি করেছেন, তিন দিন ধরে মুখ্যমন্ত্রী ডুয়ার্সে থাকলেও, তাঁদের সরকারি ভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ক্ষোভ-অভিমান থাকলেও, চা বাগান ঘেরা বীরপাড়ায় আজ, মুখ্যমন্ত্রীর সভা ঘিরে আশায় রয়েছেন বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকেরা। অনেকেরই আশা, এ দিনের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন বন্ধ চা বাগান খোলার কথা ঘোষণা করতে পারেন।

সোমবার ঝড়বৃষ্টিতে মুখ্যমন্ত্রীর সভামঞ্চ ভেঙে যায়। পরে সেই মঞ্চ আবার তৈরি করা হয়।

ডুয়ার্সে বর্তমানে ছ’টি চা বাগান বন্ধ। মুখ্যমন্ত্রীর সভা যেখানে হবে, তার সাত কিলোমিটারের মধ্যেই ঢেকলাপাড়া চা বাগান। ১৩ বছর ধরে ওই বাগানটি বন্ধ। ২০০২ সালের অগস্ট মাসে বাগানটি বন্ধ হওয়ার পরে কয়েক মাসের জন্য খুললেও, ফের তা বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ এই চা বাগানের শ্রমিকদের সরকারি অনুদান দেওয়া হলেও, বাগানে অর্ধাহার এবং অনাহারের অভিযোগ রয়েছে। অর্ধাহার অপুষ্টিতে ভুগে, বিনা চিকিত্‌সায় শ্রমিক-মৃত্যুর অভিযোগও উঠেছে একাধিকবার। ঢেকলাপাড়া ছাড়াও বান্দাপানি, মধু, রেডব্যাঙ্ক, সুরেন্দ্রনগর এবং ধরণীপুর চা বাগানের বাসিন্দারাও মুখ্যমন্ত্রীর সভা ঘিরে ফের আশার আলো দেখছেন। ঢেকলাপাড়ার কয়েকজন শ্রমিকের কথায়, “বাগান থেকে সাত কিলোমিটার দূরে মুখ্যমন্ত্রী সভা করবেন। সভা থেকে হয়ত বাগান খোলার খবর পাব।”

চা শ্রমিক সংগঠনগুলির যুক্ত কমিটির আহ্বায়ক চিত্ত দে বলেন, “আমাদের একটি মাত্র প্রত্যাশা— মুখ্যমন্ত্রী বন্ধ বাগান খোলার ব্যবস্থা করুন।”

চা বাগানের জমিতে শ্রমিকদের পাট্টা পাওয়া নিয়েও আশাবাদী চা শ্রমিকেরা। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী আগেও একাধিকবার আশ্বাস দিয়েছিলেন। যদিও, গত দেড় বছর ধরে তা নিয়ে রাজ্য সরকারের কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়নি। শ্রমিকদের একাংশ মনে করছেন, আজকের সভা থেকে সে নিয়েও ঘোষণা থাকতে পারে। ইনটেকের চা শ্রমিক সংগঠন এনইউপিডব্লুর কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মনি ডার্নালের কথায়, “চা বাগানের আইনের সংশোধন করে দীর্ঘদিন ধরে বাগানে বসবাস করে আসা শ্রমিকেরা জমির স্বত্ব পাক, তা আমরা চাইছি।” ডুয়ার্স চা বাগান ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মনোহর তিরকে বলেন, “চা শ্রমিকদের বাঁচাতে গেলে বন্ধ বাগান খুলতে হবে।” ইউটিইউসির জেলা সম্পাদক নির্মল দাস বলেন, “চার বছর ধরে বাগান খোলার বিষয় সরকারের কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। দেখা যাক এবার কী হয়।”

তৃণমূলের চা শ্রমিক সংগঠন তৃণমূল টি প্ল্যানটেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি জোয়াকিম বাক্সলা জানিয়েছেন, তাঁরাও মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার আশায় রয়েছেন। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা হোক। চিকিত্‌সা পরিষেবা ঢেলে সাজা হোক।”

এ দিকে, গত বছরের জুন মাসে আদিবাসী উপদেষ্টা পর্ষদের বৈঠকে বিভিন্ন জেলায় আদিবাসী ভবন, চা বাগান এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্যে বিশেষ নজর, জমির খুঁটিনাটি নিয়ম সাদ্রী ভাষায় অনুবাদ-সহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়। যদিও, পরবর্তী বৈঠক আর না হওয়ায় সব কিছুই থমকে গিয়েছে বলে অভিযোগ। ডুয়ার্সের আদিবাসী নেতা জন বার্লা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী শুধু আশ্বাসই দেন। কথায় আর কাজে মিল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাব না।” আদিবাসী বিকাশ পরিষদের ডুয়ার্স কমিটির সম্পাদক পরিমল লগুনের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী যে আসছেন তা আমাদের জানানো হয়নি। তাই আমরাও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে পারিনি।” ট্রাইবাল অ্যাডভাইসরি কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য তথা আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সভাপতি বীরসা তিরকে বলেন, “পর্ষদের বৈঠকের মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও আমরা আশাবাদী।”

সভা ঘিরে আশায় ছোট চা চাষিরাও। জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “বিভিন্ন জেলায় প্রায় দেড় লক্ষ একর জমিতে ৪০ হাজার ছোট বাগান গড়ে উঠেছে। প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে ১০ লক্ষ মানুষ জড়িত। কিন্তু ছোট বাগানগুলিকে সরকারি ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন ছাড়পত্রের ব্যবস্থা করে ছোট বাগানগুলিকে রক্ষার ব্যবস্থা করুন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE