Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

কুয়াশার চাদরেই কা‌টে রাত

প্রচন্ড শীতে শহরের ভবঘুরেদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছে।

ভবঘুরে: এ ভাবেই কাটছে হিম রাত। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

ভবঘুরে: এ ভাবেই কাটছে হিম রাত। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২৪
Share: Save:

ঠান্ডায় গান বন্ধ হয়ে গিয়েছে রিনা বৈরাগীর। ফুটপাথের এক পাশে চুপচাপ বসে থাকে। কখনও কখনও শুকনো পাতা, প্লাস্টিক কুড়িয়ে আগুন জ্বালায়। ইদানিং রাস্তায় দেখা যাচ্ছে না অনেককেই। পারদ যত নামছে ততই গুটিয়ে গিয়েছেন ভবঘুরেরা। ট্রেনের কামরা থেকে বাসস্ট্যান্ড, রাস্তার ফুটপাত, উড়ালপুলের নীচে ঠান্ডায় জড়সরো হয়ে রয়েছেন ভবঘুরেরা। শিলিগুড়ি থেকে বালুরঘাট বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভবঘুরে, ভিক্ষুক এবং নিরাশ্রয়দের গরম পোশাক, শীতবস্ত্র বিলি করেছেন। সব শহর, সব গ্রামের ভবঘুরে, নিরাশ্রয়রা কী শীতবস্ত্র পেলেন? কেমন আছেন তাঁরা?

থানা থেকেই কম্বল

মাঝে একদিন রোদের দেখা দিয়েই ফের কয়েকদিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ ছক্কা হাঁকিয়ে পারদ নামিয়ে কনকনে শীত এনেছে দক্ষিণ দিনাজপুরে। বালুরঘাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রিতেও মেনে গিয়েছিল। সঙ্গে কুয়াশা ঘন মেঘলা আবহাওয়ায় ঠান্ডা বাতাস বইতে থাকায় কাঁপুনি বাড়তে থাকে। প্রচন্ড শীতে শহরের ভবঘুরেদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছে। এদিন সন্ধ্যার পর বালুরঘাট থানার উদ্যোগে শহর ঘুরে ভবঘুরেদের খুঁজে তাদের কম্বল বিলির উদ্যোগ নেওয়া হয়। থানার আইসি সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘রাতে টহলে বেড়িয়ে বাসস্ট্যান্ড ও স্টেশন চত্বরের আশ্রয়ে থাকা ভবঘুরেদের গায়ে কম্বল তুলে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।’’

ভরসা শুধু পাতলা কম্বল

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের করিডরেই আস্তানা অন্তত ৬/৭ জন ভবঘুরের। কিন্তু বর্ষা এবং ঠান্ডার সময়টাই তাদের সমস্যা। সব চেয়ে বেশি কষ্ট ঠান্ডায়। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর কয়েকটি শীতবস্ত্র, কম্বল দিয়ে থাকে। সেটাই ভরসা। কয়েকজন জানান, ঠান্ডার সময়টা খুবই সমস্যা। কনকনে বাতাসে ফাঁকা করিডরে বসা যায় না। তখন ওয়ার্ডের কাছাকাছি একটা নিরাপদ জায়গা বাছতে হয়। দীনবন্ধু মঞ্চের গলি রাস্তায় ঠান্ডার মধ্যে দিনভর বসে রয়েছেন এক মহিলা। কয়েকদিন আগেও শীতের পোশাক একেবারেই ছিল না। সম্প্রতি তাঁকে একটি কম্বল দিয়ে গিয়েছেন সহৃদয় কোনও ব্যক্তি। তা মুড়িয়েই ভিক্ষে করতে বসে রয়েছেন রাস্তার একধারে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা, সাতটা পর্যন্ত গলি রাস্তাতেই বসে ভিক্ষে করেন। তার পর চলে যান।

গান বন্ধ শীতে

বাগডোগরা বিহার মোড় থেকে বাঁ দিকে রাস্তা চলে গিয়েছে বিমানবন্দরের দিকে। সেই রাস্তার পাশে আমগাছের নীচে বসে রিনা বৈরাগী। বাসিন্দারা জানালেন গত কয়েকদিন ধরে গান গেয়ে ভিক্ষে করছে না রিনা। বাসিন্দারা জানেন তাঁর নাম রিনা বৈরাগী। চোখে মুখে বলিরেখা দেখে বোঝা যায় বয়স ষাটের কোঠায়।

কারও সঙ্গে বিশেষ কথা বলেন না। দিনভর রাস্তা। ঘুরে গান গেয়ে ভিক্ষে করেন। কনকনে ঠান্ডায় আপাতত রিনার গান বন্ধ। এলাকার এক মিষ্টির দোকানের মালিক একটি কম্বল দিয়েছেন তাঁকে। সেই কম্বল গায়ে জড়িয়েই রাস্তার পাশে বসে থাকেন। শুকনো পাতা, প্লাস্টিক হাতের কাছে যা পায় তা পুড়িয়ে ওম নেওয়ার চেষ্টা করেন। রাতের বেলায় ফুটপাতে কোনও বন্ধ দোকানের নীচে শুয়ে পড়েন তিনি।

দোকানের নীচে

রায়গঞ্জের স্টেশন, মোহনবাটী, শিলিগুড়িমোড়, জেলা হাসপাতাল, বিদ্রোহী মোড়, সুদর্শনপুর, চণ্ডীতলা, কর্ণজোড়া সহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার ধারে প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন ভবঘুরে থাকেন। তাঁরা কেউ দোকানের বারান্দায় আবার কেউ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে থাকেন। নিশীথসরণি এলাকায় এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাও দোকানের বারান্দায় থাকেন। এছাড়াও মোহনবাটী ও শিলিগুড়িমোড় এলাকায় বহু দিনমজুর, রিকশা ও ভ্যানচালক রাস্তার ধারে থাকেন। কিছু দিন আগে রায়গঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে আশ্রয়হীন ভবঘুরে, মানসিক ভারসাম্যহীন, দিনমজুর, রিকশা ও ভ্যানচালককে কম্বল ও শীতবস্ত্র দেওয়া হয়।

ফুটপাত থেকে বারান্দা

সম্বল বলতে একটা কাপড়ের পুঁটলি৷ যার ভিতরে নোংরা জামা-কাপড়ের পাশাপাশি রয়েছে পুরনো অথবা ছেঁড়া একটা কম্বল বা কাঁথা৷ কনকনে ঠান্ডায় একমাত্র সেটাই ভরসা জলপাইগুড়ির বেশিরভাগ ভবঘুরের৷ গরমের রাতে শহরের বিভিন্ন রাস্তার পাশে তাদের ঠাই নিতে দেখা যায় এই ভবঘুরেদের৷ কিন্তু ঠান্ডায় বেকায়দায় পড়া সেই ভবঘুরেদের অনেকেই ঠাঁই নিয়েছেন রেল স্টেশনে বা বাস স্ট্যান্ডের কোন সেডের নীচে, তো কেউ বা হাসপাতালের প্রতীক্ষালয়ের এক কোণে৷ সেখান থেকে অনেক সময় আরপিএফ বা মানুষের তাড়াও খেতে হচ্ছে তাদের৷ তখন আবার তাদের ঠাঁই হচ্ছে কোন বন্ধ দোকানের সাটারের নীচে৷ জলপাইগুড়ির থানা মোড়ে ফি বছর প্রতি রাতে এক মহিলাকে রাস্তায় ঘুমোতে দেখা যায়৷ পুলিশের মানবিকতার ফলে এবার ঠান্ডায় তার ঠাই হয়েছে থানার বারান্দায়৷ অনেক ভবঘুরে এমনও রয়েছেন, জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে। তাঁদের গায়েও নেই কোনও গরম জামা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pavement Dwellers Fog Winter Weather
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE