Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মাথাদের না ধরলে পাচার কমবে না

পাচারের অনেক রূপ, অনেক পথ। গাঁজা পাচারের সেই পথ ও চক্র নিয়ে আজ দ্বিতীয় পর্ব।দফতর সূত্রেই খবর,  চাষিদের কাছ থেকে কিনে সেই গাঁজা আরও বেশি দরে ‘বাজারে’ বেচে ব্যবসায়ীরা। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল, এই তিন মাস গাঁজা চাষের মরসুম, জানিয়েছে পুলিশ। যদিও সারা বছর ধরেই পাচার চলে বলে অভিযোগ। 

শুভঙ্কর চক্রবর্তী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:১১
Share: Save:

মালদহ যেখানে গাঁজা চাষ বন্ধ করে দিতে পেরেছে, সেখানে কোচবিহার পিছিয়ে কেন? এর জবাবে অনেকগুলি বিষয় উঠে আসছে। পুলিশের একটি অংশের মতে, মরসুমি ফসলের তুলনায় গাঁজা চাষে কয়েক গুণ বেশি মুনাফা। অনেকে বাড়ির উঠোনেও গাঁজা চাষ করছেন। পাশাপাশি প্রশাসনের একটি অংশ স্বীকার করে নিচ্ছে, এই চাষ ও বিক্রির পিছনে রয়েছে গ্রামের কয়েক জন মাতব্বরের মাথায়। সব ঝক্কি সামলানোর দায়িত্ব সেই মাতব্বরদের। রাজনৈতিক মহলেও তাদের নিয়মিত ওঠাবসা বলে একান্তে মানছেন পুলিশের কয়েক জন আধিকারিক। কোচবিহারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা লাগাতার অভিযান চালাচ্ছি। আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।’’

গাঁজা যে ধরা পড়ছে, সেটা ঘটনা। কিন্তু একই সঙ্গে প্রশাসনের অনেকে বলছেন, যা ধরা পড়ছে না, তার পরিমাণ আরও বেশি। তাঁদের মতে, এখন অনেকেই খেতের বদলে বাড়ির উঠোনে গাঁজা চাষ করছে। নারকোটিক কন্ট্রোল ব্যুরোর এক আধিকারিকের মতে, বাড়ির তৈরি গাঁজার দাম হয় ৪ হাজার টাকা কেজি। কম এলাকা নিয়ে হয় বলে একাই পুরো চাষ করা সম্ভব। তাই মুনাফাও বেশি।

ওই আধিকারিকের দেওয়া তথ্য অনুসারে, একটি গাঁজা গাছ থেকে গড়ে ২ কেজি গাঁজা মেলে। প্রতি বিঘায় প্রায় ৪০০টি গাঁজা গাছ লাগানো হয়। গুণগত মান অনুসারে এ, বি এবং সি, তিন ভাগে গাঁজা বিক্রি হয়। মরসুমে কৃষকরা ‘এ’ ক্যাটাগরির গাঁজা বিক্রি করে গড়ে ৫ হাজার টাকা কেজি দরে। ‘বি’ ও ‘সি’ ক্যাটাগরির দাম যথাক্রমে কেজি প্রতি ৩ হাজার ও ২ হাজার টাকা।

গাঁজা পাকড়াও • ২২ মার্চ, ২০১৮: ৭৭০ কেজি, ধরেছে কোচবিহারের নিশিগঞ্জ ফাঁড়ি। • ২৯ অগস্ট, ২০১৮: ১৫ কেজি, ধরেছে কোচবিহারের নিশিগঞ্জ ফাঁড়ি। • ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮: ৩০৭ কেজি, ধরেছে কোচবিহারের নিশিগঞ্জ ফাঁড়ি। • ৯ অক্টোবর, ২০১৮: ২৫০ কেজি, ধরেছে নিউ জলপাইগুড়ি থানা। • ৩০ অক্টোবর, ২০১৮: ২৩ কেজি, ধরেছে শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানা। • ১ নভেম্বর, ২০১৮: ২৬ কেজি, ধরেছে নিউ জলপাইগুড়ি থানা। • ৩ নভেম্বর, ২০১৮: ৬৫ কেজি, ধরেছে নিউ জলপাইগুড়ি থানা।

দফতর সূত্রেই খবর, চাষিদের কাছ থেকে কিনে সেই গাঁজা আরও বেশি দরে ‘বাজারে’ বেচে ব্যবসায়ীরা। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল, এই তিন মাস গাঁজা চাষের মরসুম, জানিয়েছে পুলিশ। যদিও সারা বছর ধরেই পাচার চলে বলে অভিযোগ।

গত কয়েক মাসে বেশ কয়েক কেজি গাঁজা ধরেছে পুলিশ। নষ্ট করা হয়েছে বহু গাঁজা গাছ। তবু তা পুরোপুরি শেষ করা যাচ্ছে না কেন? পুলিশের কারও কারও কথায়, এর পিছনে রয়েছে মাতব্বরদের ভূমিকা। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘মালদহে বকুল শেখ, জাকির শেখদের পুলিশ পাকড়াও করেছে। এখানে মাতব্বরদের ধরতে না পারলে গাঁজার ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না।’’

এই এলাকায় গাঁজা পাচারের ঘটনায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও। বিএসএফ, এসএসবির আধিকারিকরা এই নিয়ে রাজ্য পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এসএসবি-র শিলিগুড়ি ফ্রন্টিয়ারের আইজি শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা বহু গাঁজা উদ্ধার করেছি। পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কাজ করা হচ্ছে।’’ বিএসএফের উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের আইজি আজমল সিংহ কাঠাতও জানান, রাজ্য পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কাজ হচ্ছে।

তবে নেপথ্য মাথাদের ধরতে না পারলে সাফল্য আসবে না, সেটাও গোয়েন্দারাও মানছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cannabis trafficking
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE