Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
নজরে সীমান্ত/১

২০ টাকাতেই হিলি সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে মাল

হিলিতে কান পাতলে শোনা যায়, ছোট ছোট পাচারকারী দলের একটা বড় অংশের ত্রাতা হয়ে উঠে এক ব্যক্তি একাধিক গাড়িবাড়ি কিনে এতটাই বিত্তশালী হয়েছেন যে নানা দলে তাঁর কদর বেড়েছে। কিছুদিন আগে সর্বভারতীয় দল ছেড়ে রাজ্যের প্রভাবশালী দলে যোগ দিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। হিলির তৃণমূলের এক পদাধিকারী নেতা একান্তে জানান, এখন সবাই নিজেকে তৃণমূল বলে দাবি করে থাকে।

বেআইনি: হিলি সীমান্তের পথে পাচারের সামগ্রী নিয়ে। নিজস্ব চিত্র

বেআইনি: হিলি সীমান্তের পথে পাচারের সামগ্রী নিয়ে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
হিলি শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৮ ০৮:২০
Share: Save:

‘ভীষণ’ কড়াকড়ি হিলি সীমান্তে। যেন মাছিটি গলার উপায় নেই। অথচ সেই সীমান্তেই কত কিছুই হাতবদল হয়ে যাচ্ছে চোখের নিমেষে। সীমান্ত গ্রামে কান পাতলেই শোনা যাবে ফিসফিসানি। এক বস্তা চিনি অথবা এক ব্যাগ জিরে পাঠাতে চান বাংলাদেশে? বস্তাপিছু ২০ টাকা করে হাতে ধরিয়ে দিলেই ও-পারে ঠিকঠাক গন্তব্যে পৌঁছে যাবে! আবার ৫০ টাকা কাকে দিলে হাতবদলের রাস্তা মোমের মতো মসৃণ হতে পারে সেই গল্পও কম নেই। যে ফড়েদের মাধ্যমে পাচার চলে তাঁদের নামও বাতাসে ওড়ে। কারও ছদ্মনাম নাম ‘লম্বুদা’, কারও ‘গেঁড়েদা’। ইংরেজি আদ্যক্ষর দিয়ে নানা সাংকেতিক নামও সীমান্তের বাতাসে ভাসে প্রতিদিন।

এক দিকে, বহির্বাণিজ্য। অন্যদিকে, চোরাকারবার— দু’টোই শান্তিতেই সহাবস্থান করে দক্ষিণ দিনাজপুরে হিলি সীমান্তে। প্রথমটা ‘ট্রাকের’ লম্বা লাইন ধরে হিলি আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে গিয়ে ও-পারে বাংলাদেশে পণ্য পৌঁছনোর ঝক্কি। অন্যদিকে, কাঁটাতারহীন অলিগলি সরু রাস্তার চোরাপথ ধরে ‘পোঁটলা’ বহনকারী একাংশ মানুষের ও-পারে মাল পৌঁছনোর রুজিরুটির তাগিদ মিলেমিশে যেন একাকার।

প্রথমটা, সরকারকে রাজস্ব জমা দিয়ে বৈধপথের বাণিজ্য। দ্বিতীয়টা, সীমান্ত-কন্ট্র্যাক্ট ম্যানকে ‘তোলা’ দিয়ে চোরাপথের অবৈধ বাণিজ্য। সেই কারবারে সীমান্তের ‘কনট্র্যাক্ট ম্যান’ই সব। প্রতিদিন তার কাছে ‘তোলা’ জমা দিয়েই চোরাপথে এক বস্তা চিনি কিংবা এক ব্যাগ জিরে পাচারের ছাড়পত্র মেলে। ওই তোলা আদায়ের একটা অংশ বিএসএফ, পুলিশের একাংশ থেকে নেতাদের হাতে পৌঁছে যায় বলে অভিযোগ শোনা যায়। বিএসএফ, পুলিশ যা পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে দাবি করে থাকে। জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশি নজরদারি রয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুলিশই ধরে। নাকা তল্লাশি, নজরদারি চলেই।’’ বিএসএফের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘নজরদারি চলে বলেই পাচারের অভিযোগে অনেক জিনিস আটক হয়। সীমান্তবাহিনী সে ব্যাপারে তৎপর।’’

অথচ হিলিতে কান পাতলে শোনা যায়, ছোট ছোট পাচারকারী দলের একটা বড় অংশের ত্রাতা হয়ে উঠে এক ব্যক্তি একাধিক গাড়িবাড়ি কিনে এতটাই বিত্তশালী হয়েছেন যে নানা দলে তাঁর কদর বেড়েছে। কিছুদিন আগে সর্বভারতীয় দল ছেড়ে রাজ্যের প্রভাবশালী দলে যোগ দিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। হিলির তৃণমূলের এক পদাধিকারী নেতা একান্তে জানান, এখন সবাই নিজেকে তৃণমূল বলে দাবি করে থাকে। কিন্তু তাঁরা পাচারে অভিযুক্ত তথা সন্দেহভাজন ব্যবসায়ীকে দলের সদস্য বলে মানেন না বলে দাবি করেছেন। তৃণমূলের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, ‘‘হিলির দখল নিতে রেষারেষি চলে। তবে দলের তরফে ওই কাজে কেউ যুক্ত রয়েছেন, এমন অভিযোগ আমার কাছে নেই।’’ অন্য দিকে, এলাকার আরএসপি বিধায়ক বিশ্বনাথ চৌধুরীর কথায়, ‘‘হিলিতে সুষ্ঠু কোনও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। চোরাকারবারকে বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে অনেকে বেছে নিতে বাধ্য হন। তাকে কেন্দ্র করেই তোলাবাজি চলে।’’ তবে তাঁদের আমলে এসব ছিল না বলে দাবি করেন তিনি। বিশ্বনাথবাবুর অভিযোগ, ‘‘বর্তমান শাসকদের একাংশ নেতার হাতে সিন্ডিকেটের ভার। রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকা পণ্যবাহী ট্রাকের কর্মীদের চরম হয়রানির দিকে তাদের নজর নেই।’’ (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal Trading Export Border Custom
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE