Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মোয়ামারি বন্ধ পড়ল তিন দিনে

মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে বন‌্‌ধ। বৃহস্পতিবারও এলাকার বিভিন্ন স্কুল, অফিস ও অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্র বন্ধ ছিল। বসির অনুগামীরা সকাল থেকেই মিছিল করে এলাকায়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২৮
Share: Save:

মারধর তো বটেই, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দাপিয়ে বেড়ানোরও অভিযোগ রয়েছে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি বসিরুদ্দিন মিয়াঁর বিরুদ্ধে। সেই নেতাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে টানা তিন দিন ধরে বন‌্ধ চলছে কোচবিহারের মোয়ামারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়।

মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে বন‌্‌ধ। বৃহস্পতিবারও এলাকার বিভিন্ন স্কুল, অফিস ও অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্র বন্ধ ছিল। বসির অনুগামীরা সকাল থেকেই মিছিল করে এলাকায়। তাঁদের দাবি, বসিরুদ্দিন মিয়াঁ বয়স্ক মানুষ। তাঁর নামে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এর পিছনে বিজেপি ও পুলিশের এক আধিকারিকের হাত রয়েছে। তৃণমূলেরই আরেকটি অংশের অবশ্য দাবি, দলের প্রভাবশালী গোষ্ঠীর ছায়াতে থাকাতেই ‘অপরাধ’ করেও অনেকদিন ছাড় পেয়েছে বসিরুদ্দিন। এ বারেই পুলিশ সঠিক ব্যবস্থা নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে বনধ বিরোধী হলেও কেন দল কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

কোচবিহারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নানা মামলা রয়েছে। নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে কেউ আইন ভাঙার চেষ্টা করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ওই মামলার সরকারি আইনজীবী ধ্রুবেশ চক্রবর্তী জানান, চারদিন পুলিশ হেফাজতের রাখার পরে বুধবার বসিরুদ্দিন মিয়াঁকে মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে তোলা হলে বিচারক সেলিম আনসারি জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। আগামী ১২ জানুয়ারি ফের তাঁকে আদালতে তোলা হবে। এ দিন আগ্নেয়াস্ত্র মামলা একই সঙ্গে চালানোর জন্য বিচারকের কাছে আবেদন করেছে পুলিশ। অভিযুক্তের আইনজীবী বিমল সরকার বলেন, “বসিরুদ্দিন নির্দোষ। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছে।”

দলীয় সূত্রের খবর, বসিরুদ্দিন মিয়াঁ ওই এলাকার পুরনো তৃণমূল নেতাদের একজন। তাঁদের দাপটে এখনও এলাকায় বিরোধীরা কোনঠাসা। সেখানে দলেরই একটি অংশ তাঁর নেতৃত্বের বিরোধিতা করে পথে নামে। তাতেই তাঁদের উপর বসিরুদ্দিন মিয়াঁ ও তাঁর অনুগামীরা হামলা করে বলে অভিযোগ। ২০১৬ সালের মে মাস নাগাদ দলেরই কয়েকজন কর্মী অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এলাকায় দাপিয়ে বেড়ানোর অভিযোগ তুলে মামলা করে। দিন কয়েক আগে কোচবিহার ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী খাদিজা বিবির স্বামী সহ ৫ জনকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ৩২৫, ৩২৬, ৩০৭, ৩৭৯ সহ একাধিক ধারায় মামলা হয়। এর পরেই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।

এই গ্রেফতার ও বন্‌ধকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর লড়াই প্রকাশ্যে চলে এসেছে। বসিরুদ্দিন তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের অনুগামী বলে পরিচিত। অন্যদিকে থাকা তৃণমূল কর্মীরা বিধায়ক মিহির গোস্বামীর অনুগামী। মিহিরবাবু সরাসরি দলীয় নেতৃত্বকে অভিযোগ জানাতে চান। এমনকি কেউ অপরাধ করে ছাড় পাবেন না বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন। সেখানে রবীন্দ্রনাথবাবু দলীয় কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

রবীন্দ্রনাথবাবুর ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের কোচবিহার জেলার সহ সভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদ বলেন, “কারও বিরুদ্ধে মামলা হলেই তিনি দোষী হন না। দল পুরো বিষয় খতিয়ে দেখেছে।” পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী বলেন, “ওই ঘটনায় আরও অভিযুক্ত রয়েছে। তাঁদের প্রত্যেককে গ্রেফতার করতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE