Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পথ চেয়ে জৈন পরিবার

তত ক্ষণে ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে দ্বীপের জনজীবন। হোয়াট্সঅ্যাপে একটা মেসেজ এসেছে। তার পর থেকে ছেলেমেয়েদের ফোনের সংযোগ আর মিলছিল না। টিভি খুলে, নানা পোর্টাল দেখে ভোজরাজবাবুরা বোঝার চেষ্টা করছিলেন, কী হয়েছে?

ফেরা: হেলিকপ্টারের সামনে পর্যটকেরা। নিজস্ব চিত্র

ফেরা: হেলিকপ্টারের সামনে পর্যটকেরা। নিজস্ব চিত্র

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ০৭:১০
Share: Save:

ছুটির দিন। রবিবার। তাই খাওয়া-দাওয়ার পরে ভরদুপুরে ছেলেমেয়েদের পাঠানো ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে ফোন করে ফেলেছিলেন শিলিগুড়ির স্টেশন ফিডার রোডের প্রবীণ এলাচ ব্যবসায়ী ভোজরাজ জৈন। কোনও দিন সময়-সুযোগ হলে বালি দ্বীপে বেড়াতে যাবেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। বিকেল গড়াতেই সেই দ্বীপ যেন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায় জৈন পরিবারের কাছে।

তত ক্ষণে ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে দ্বীপের জনজীবন। হোয়াট্সঅ্যাপে একটা মেসেজ এসেছে। তার পর থেকে ছেলেমেয়েদের ফোনের সংযোগ আর মিলছিল না। টিভি খুলে, নানা পোর্টাল দেখে ভোজরাজবাবুরা বোঝার চেষ্টা করছিলেন, কী হয়েছে? অবশেষে রাত ৯টা নাগাদ পরিবারের বধূ ভাগ্যশ্রীর অডিও বার্তা মেলায় কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন তাঁরা। তবে ভাগ্যশ্রীর বার্তায় যে অসহায়তা ছিল, তা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাড়ির প্রবীণা মনীষা। তাঁর ভাই রবীন্দ্র, শ্রবণও ভেঙে পড়েন। ভোজরাজবাবু বলেন, ‘‘আমরা রাতে পাগলের মতো নানা জায়গায় ফোন করেছি। রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাসে ফোন করার চেষ্টা করেছি। কোথাও ফোন বেজে গিয়েছে, কোথাও ফোনে সংযোগ হয়নি। শেষ পর্যন্ত সকালে যোগাযোগ হয়েছে।’’ সোমবার দুপুরে জানতে পেরেছেন, ইন্দোনেশিয়ার উদ্ধারকারী দল ওই ১২ জনকে বালিতে পৌঁছনোর আশ্বাস দিয়েছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২ অগস্ট, বৃহস্পতিবার স্টেশন ফিডার রোডের জৈন পরিবারের ভাইবোনেরা মিলে মোট ১২ জন কলকাতা হয়ে বালিতে যান। সেখান থেকে পর দিন গিলি দ্বীপে যান জাহাজে। ওই দ্বীপে থাকার পরে সোমবার বিকেলে বালিতে ফিরে মঙ্গলবার কলকাতায় পৌঁছনোর কথা। মনীষাদেবী বলেন, ‘‘ওঁরা আগেও বিদেশে বেড়াতে গিয়েছে। কখনও এমন বিপদ ঘটেনি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘কোনও খবর নেই। এর থেকে বড় আতঙ্ক তো আর কিছু হতে পারে না!’’ তাঁর কথায়, ‘‘একটা বাচ্চা আছে। কী খাচ্ছে, কোথায় আছে, কী ভাবে কখন ফিরবে, কিচ্ছু জানি না।’’ এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মনীষা। পাশে বসা প্রৌঢ় ভোজরাজবাবুর চোখেও জল।

এ দিন দুপুরের দিকে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে জৈন পরিবার। কারণ, বিস্তর দরদাম করে চড়া ভাড়ায় হেলিকপ্টারে ১২ জনই দু-দফায় বালিতে পৌঁছে গিয়েছেন বলে খবর পেয়েছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে নবান্ন থেকে ফোন গিয়েছে ওই পরিবারে। পরিবারের এক কর্তা রবীন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘নবান্ন থেকে ফোন করে আমাদের সব রকম সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। আমরা জানিয়েছি কপ্টার ভাড়া করে বালিতে ফেরা গিয়েছে। বিমানের টিকিট পেতে সমস্যা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে আমাদের টিকিট যাতে মেলে, সেই ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।’’ পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব জানান, ওই পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যোগাযোগ রেখেছেন শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা মেয়র অশোক ভট্টাচার্যও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Earthquake Indonesia Indonesia Earthquake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE