চতুর্মুখ: মহকুমাশাসক সঞ্জয় পাল, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুপর্ণা বিশ্বাস, মাথাভাঙার মহকুমাশাসক জিতিন যাদব, কোচবিহার কোতোয়ালি থানার আইসি সৌম্যজিৎ রায়। নিজস্ব চিত্র
তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে গৃহবন্দি। সেখান থেকেই লোকজনকে ‘সাহস’ জুগিয়ে যাচ্ছেন। কাউকে ফোন, কাউকে ভিডিয়ো কলে। কীভাবে লড়তে হবে কোভিডের সঙ্গে, পরামর্শ দিচ্ছেন। আবার নিজের প্রিয়বন্ধু হিসেবে তুলে ধরছেন, ‘কেটলি’কে। তিনি কোচবিহার মাথাভাঙার মহকুমাশাসক জিতিন যাদব।
আরও দু’জন লাঠি হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এ-গলি, সে-গলি। কখনও হ্যান্ডমাইক ফুঁকছেন তাঁরা। কেন মাস্ক পরতে হবে জানাচ্ছেন। ওঁদের একজন কোচবিহারের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুপর্ণা বিশ্বাস, অপরজন কোচবিহার কোতোয়ালি থানার আইসি সৌম্যজিৎ রায়। আর একজনের কথা না বললেই নয়, সেই শুরু থেকে সামনের সারিতে থেকে টানা লড়াই লড়েছেন তিনি। কোচবিহারের মহকুমাশাসক সঞ্জয় পাল। সম্প্রতি তাঁর বাবা প্রয়াত হয়েছেন। তাই এখন তিনি ছুটিতে। সেখান থেকেই খোঁজ রাখছেন সবকিছুর।
পুলিশ-প্রশাসনের অনেক কর্মী-আধিকারিক করোনায় আক্রান্ত। তাঁদের অনেকের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে বারবার। তার মধ্যে জেলা পুলিশের একাধিক আধিকারিক ও কর্মীদের লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন কোচবিহারের সাধারণ মানুষ। তাঁদের অনেকেরই কথায়, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সদের পাশাপাশি ওঁরাও প্রকৃত ‘কোভিড যোদ্ধা’। আধিকারিকদের কেউ অবশ্য তা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাতে চান না। এ ব্যাপারে প্রত্যেকেরই বক্তব্য, এই যুদ্ধ সবাই মিলে জিততে হবে।
মাথাভাঙার মহকুমাশাসক জিতিন যাদব করোনা প্রকোপ শুরু হওয়ার আগে থেকেই সচেতনতার প্রচার শুরু করেন। কীভাবে বারে বারে হাত ধুতে হবে, কিভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, গানের তালে তালে তাঁর সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল নেটওয়ার্কে। সেই সঙ্গে তিনি করোনা আক্রান্তদের সবসময় খোঁজখবর রাখা। পরে অবশ্য তিনি নিজের করোনা আক্রান্ত হন। সেই অবস্থাতেই ফেসবুকে লাইভে জানিয়েছেন, তিনি কী করে করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। পাশাপাশি, তাঁর আবেদন, “কেউ যাতে রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ না করেন।”
কোচবিহার সদর মহকুমার মহকুমাশাসক সঞ্জয় পালের কথা ঘুরে বেড়ায় মানুষের মুখে মুখে। পরিযায়ী শ্রমিকরা ফিরতে শুরু করলে তাঁর ঠিকানা হয় নিউ কোচবিহার রেল স্টেশন। সেখানে দিন-রাত পড়ে থেকে কীভাবে ওই শ্রমিকদের সঠিক পরিষেবা দেওয়া যায় সেই বার্তা দিয়েছেন। এর পরেই শহরের মধ্যে থাকা দু’টি কোয়রান্টিন সেন্টার তাঁর ঠিকানা হয়। আক্রান্তদের পাশে থেকে তাঁদের মনোবল বৃদ্ধি করেছেন। সেই সঙ্গেই লকডাউন যাতে সবাই মেনে চলে সেজন্য ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রয়োজনে লাঠি হাতে নিয়ে তাড়া করেছেন স্বাস্থ্যবিধি নির্দেশ অমান্যকারীদের। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুপর্ণা বিশ্বাস এবং কোচবিহার কোতোয়ালি থানার আইসি সৌম্যজিৎ রায়ও ঠিক একই ভাবে ছুটে বেড়াচ্ছেন।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “কোভিড রুখতে চিকিৎসক-নার্সদের পাশাপাশি পুলিশ-প্রশাসন খুব ভাল কাজ করছেন। ওই অফিসারও খুব ভাল কাজ করছেন।”
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy