ছবি: সংগৃহীত।
কতক্ষণ সময় দাও প্রতি রোগীর জন্য?
প্রবীণ চিকিৎসকের প্রশ্নের সামনে চুপ করে থাকেন নবীন ডাক্তার। তাঁর খ্যাতি আছে, অর্থ রয়েছে। কিন্তু মানবিকতা? প্রবীণ শিক্ষক ক্লান্ত স্বরে বলেন, ভুলে গিয়েছ, চিকিৎসক হতে গেলে কী শপথ পাঠ করতে হয়?
‘অলীক সুখ’ সিনেমার সেই দৃশ্য মানুষকে নাড়া দিয়েছিল। নানা হাসপাতালে সাধারণ মানুষকে এই সমস্যার সামনে পড়তে হয়। নামী চিকিৎসক তো দূরের কথা, সরকারি হাসপাতালে গেলেও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে আকছার। রোগী কেমন আছেন, সে প্রশ্ন পর্যন্ত করলে চিকিৎসক, নার্সরা রেগে যান বলে অভিযোগ উঠেছে।
সেই অবস্থা বদলাতে এ বার বিবেকানন্দের সেবার ধর্মকে কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবার মান ভাল করতে, সেবার আদর্শে তাকে বাঁধতে তৎপর স্বাস্থ্য শিক্ষা দফতর। রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামীজি, প্রজাপতি ব্রহ্মকুমারীর প্রশিক্ষকদের সে কারণে আহ্বান জানানো হচ্ছে। থাকবেন, অন্যরাও। ১৩ জানুয়ারি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যর কথায়, হাসপাতাল সেবার জায়গা। সেই মনোভাব চিকিৎসক, নার্স, কর্মীদের মধ্যে থাকলে আরও ভাল মানসিকতা তৈরি কবে কাজের ক্ষেত্রে। মেডিক্যাল কলেজগুলোতে প্রতি মাসে অন্তত একবার এ ধরনের ক্লাস বা কর্মশালার আয়োজন করার কথা ভাবা হয়েছে।
তবে এই ভাবনা একেবারে নতুন নয়। এর আগে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ, সাগর দত্ত হাসপাতালে দু’একবার চিকিৎসক, নার্স, পড়ুয়াদের সেবার আদর্শে উদ্বুদ্ধ করার এমন পাঠ নেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। এ বার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতেই তা চালু করার চেষ্টা হচ্ছে। ১৩ জানুয়ারি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে এমন পাঠ নেবেন নার্স, চিকিৎসকরা, পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের ছাত্ররাও। দার্জিলিঙের রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালিত নিবেদিতা শিক্ষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্রের স্বামী নিত্যসত্যানন্দ সেই পাঠ দেবেন। স্বামী নিত্যসত্যানন্দ বলেন, ‘‘খুবই ভাল উদ্যোগ। প্রতি মাসেই তা হওয়ার কথা। স্বামীজি বলেছিলেন শিব জ্ঞানে জীব সেবা। আর্ত, পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেছিলেন তিনি। সেবার ধর্ম, ওই মনোভাব মানুষের মধ্যে দেওয়ার মতো মহৎ কাজ আর নেই।’’
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে স্বাস্থ্য শিক্ষা ইউনিটের কোঅর্ডিনেটর কল্যাণ খান জানান, তাঁরাও বিষয়টি নিয়ে উৎসাহী। রোগী বা তাঁর পরিবারের লোকেরা কিছু জানতে চাইলে, তাঁদের সঙ্গে অনেক সময় খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। রোগীদে যত্ন নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ তো রয়েইছে। নার্স, চিকিৎসকদের মধ্যে আরও বেশি করে সেবার মনোভাব দরকার। তা হলে সে সব অনেকটাই দূর হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশাবাদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy