Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শিবদিঘির মোহনরা ডিম দেয়নি, উদ্বিগ্ন প্রশাসন

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিকেলে বা রাতের দিকে কচ্ছপ এক পুকুর থেকে আর এক পুকুরে চলে যায়। বাম জমানায় ওই পুকুরের চারদিক কংক্রিট দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। এরপরই একের পর এক কচ্ছপ মারা যেতে থাকে। কংক্রিট তৈরির ফলে পরিবেশ নষ্ট হওয়াতেই ওই মৃত্যু মিছিল বলে অভিযোগ তোলেন স্থানীয়রা।

খাবারের-সন্ধানে: শিবদিঘিতে ঘাটে মোহনদের ভিড়। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

খাবারের-সন্ধানে: শিবদিঘিতে ঘাটে মোহনদের ভিড়। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৮ ০৪:৫৭
Share: Save:

সময় মেনে বছরে একবার ডিম দেওয়ার কথা মোহনদের। কিন্তু দেড় বছর পেরোতে চললেও ডিম দিচ্ছে না কেউই। চিন্তায় পড়েছে প্রশাসন। উদ্বেগে স্থানীয় বাসিন্দারাও। কোচবিহারের বাণেশ্বরের শিবদিঘির বাসিন্দা মোহনেরা আসলে কচ্ছপ। এলাকার লোকজন তাঁদের দেবতা মেনে পুজোও করেন। একসময় পরপর কয়েকটি কচ্ছপের মৃত্যুতে প্রবল বিতর্ক হয়েছিল। তখন দিঘির কংক্রিটের পাড় ভেঙে আবার মাটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সেখানেই এ বার ডিম পাড়ার উপযুক্ত পরিবেশ নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।

কোচবিহারের দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতি তথা জেলাশাসক কৌশিক সাহা বলেন, “এমন অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” স্থানীয় বাসিন্দা পরিমল বর্মন বলেন, “আশপাশের পুকুর বা ঝোপে, জঙ্গলে মোহনের ডিম দেখতে পাচ্ছি আমরা। কিন্তু শিবদিঘির পাড়ে যেখানে ডিম পাড়ার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছিল সেই পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। ওই ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা হবে বলে আমরা আশাবাদী।”

কচ্ছপ মূলত নির্জন জায়গায় একটি ঝোপের আড়ালে নরম মাটিতে ডিম পাড়তে অভ্যস্ত। এমন জায়গায় স্ত্রী কচ্ছপ মাটি খুঁড়ে ডিম দেয়। সেগুলি আবার বালি বা নরম মাটি দিয়ে ঢেকে দেয় কচ্ছপ। দুই থেকে চার মাসের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোয়। বাণেশ্বরের ওই দিঘিতে বর্তমানে ২৫০টির বেশি কচ্ছপ রয়েছে। এছাড়া, ওই অঞ্চলের প্রায় সব পুকুরেই কমবেশি কচ্ছপ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিকেলে বা রাতের দিকে কচ্ছপ এক পুকুর থেকে আর এক পুকুরে চলে যায়। বাম জমানায় ওই পুকুরের চারদিক কংক্রিট দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। এরপরই একের পর এক কচ্ছপ মারা যেতে থাকে। কংক্রিট তৈরির ফলে পরিবেশ নষ্ট হওয়াতেই ওই মৃত্যু মিছিল বলে অভিযোগ তোলেন স্থানীয়রা।

পরে কংক্রিট ভেঙে দিয়ে ফের আগের পরিবেশ ফেরানো হয়। কচ্ছপরা যাতে সুস্থ থাকে সে জন্য সুনির্দষ্ট খাবার, ওষুধ দেওয়া শুরু হয়। এখনও প্রতিদিন ৬ কেজি করে ভাত, বর্ষাকালে সেই সঙ্গে কেঁচো, গুগলি দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ছ’মাস অন্তর জলে পাঁচশোটি করে অক্সিজেন ট্যাবলেট দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে বাইরের খাবার পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে। সেখানে ডিম পাড়ার জন্য কেন উপযুক্ত পরিবেশের অভাব হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার কথায়, “ওই জায়গায় একটু নরম মাটি, কুচি পাথর, নির্জনতা আর ঝোপের ব্যবস্থা ঠিকঠাক করলেই পরিবেশ ফিরে আসবে। আর বর্ষার সময়েই মূলত ডিম পাড়ে ওঁরা। তাই এখনই ওই পরিবেশ চাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Turtle Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE