Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিস্ফোরণে ছড়াল গ্যাস, আতঙ্ক

জলপাইগুড়ি শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে হলদিবাড়ি মোড়ে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া জলপাইগুড়ি হিমঘরে ভোররাতে বিস্ফোরণ হয়। দু’টি চেম্বারে অ্যামোনিয়া গ্যাস রয়েছে এখানে। হিমঘরের হিসাবরক্ষক কালিদাস হালদার জানান, তারই একটিতে দুর্ঘটনা ঘটেছে।

লড়াই: এলাকায় ছড়িয়ে পড়া গ্যাস রুখতে কাজ করছেন দমকল কর্মী। জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল

লড়াই: এলাকায় ছড়িয়ে পড়া গ্যাস রুখতে কাজ করছেন দমকল কর্মী। জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৪৮
Share: Save:

রবিবার রাত সোয়া তিনটে। বিকট কান ফাটানো আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল একটি বেসরকারি হিমঘরের ম্যানেজার সঞ্জীব ঘোড়ার। কোল্ড স্টোরেজ চত্বরেই কোয়ার্টারে থাকেন তিনি। ভয়ঙ্কর ঝাঁঝালো গন্ধ থেকে প্রাণ বাঁচাতে দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়েন। পা ভেঙে যায় তাঁর। কোনও রকমে নিজেকে টেনে হিচড়ে নিরাপদ জায়গায় আসেন। আপাতত তিনি উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন।

জলপাইগুড়ি শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে হলদিবাড়ি মোড়ে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া জলপাইগুড়ি হিমঘরে ভোররাতে বিস্ফোরণ হয়। দু’টি চেম্বারে অ্যামোনিয়া গ্যাস রয়েছে এখানে। হিমঘরের হিসাবরক্ষক কালিদাস হালদার জানান, তারই একটিতে দুর্ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আধ কিলোমিটার দূর থেকেও সেই কান ফাটানো বিকট আওয়াজ শোনা গিয়েছিল। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ঝাঁঝালো অ্যামোনিয়া গ্যাস ছড়িয়ে যায় গোটা এলাকায়। এক কিলোমিটারের মধ্যে থাকা অনেকে অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন। শ্রমিক এবং কর্মী মিলিয়ে প্রায় সত্তরজন হিমঘর চত্বরেই থাকেন। তাঁরা পাঁচিল টপকে প্রাণ বাঁচান। তাঁদের ৮ জনের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তবে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

গ্যাস চেম্বার ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ হয় কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। হিমঘর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে দমকল। কিন্তু হিমঘরের মালিক শঙ্করলাল চৌধুরী আগে থেকেই অসুস্থ হয়ে শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, কী গাফিলতি ছিল, তাঁরা তা খতিয়ে দেখছেন।

সোমবার ভোরের দিকে জলপাইগুড়ি থেকে আসে দমকলের একটি ইঞ্জিন। আসে পুলিশও। আরও একটি দমকলের ইঞ্জিন আনা হয় কিছু পরে। সকাল আটটার পর থেকে গ্যাসের দাপট কিছুটা কমতে শুরু করে।

এরপরই ভিতরে গিয়ে বোঝা যায় বিস্ফোরণের দাপট। বিশাল হিমঘরের পেছন দিকে গ্যাস চেম্বারের উপরের দেওয়াল ধসে পড়েছে। দেওয়ালে ফাটল। মাটির মধ্যে ঢুকে গিয়েছে ১২ চাকা লরির একাংশ। দেওয়াল ভেঙে পড়ে দু’টি গাড়ি চৌচির। হিমঘর চত্বরে থাকা ঘাস হলুদ হয়ে গিয়েছে। বেলার দিকে গ্যাস চেম্বারগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে গ্যাসের দাপট একটু কমলেও পুরোপুরি যায়নি।

ওই হিমঘরের শ্রমিক দিলীপ মিস্ত্রি জানান, ভোরে হঠাৎ গ্যাসের গন্ধে ঘুম ভেঙে দেখেন, হিমঘর চত্বর থেকে সকলেই ছুটে পালাতে ব্যস্ত। গেট খোলা না পেয়ে পাঁচিল টপকে কোনওরকমে বাইরে এসে ছুটতে ছুটতে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে এসে পড়েন।

রুজির টানে সুদূর সুন্দরবন থেকে আসা যুবকটির কথায়, ‘‘বরাত জোড়ে বেঁচে গেলাম এ যাত্রায়।’’ কোল্ড স্টোরেজের উল্টো দিকে একটি টায়ারের দোকানের বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন মহম্মদ হাসেম। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘গ্যাসের গন্ধে বমি হতে শুরু করে, তারপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। মিনিট পনেরো পর জ্ঞান ফিরলে কোনও ক্রমে এলাকা থেমে পালাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Blast Cold Storage Jalpaiguri Ammonia gas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE