Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বিষ-বাতাসে জলপাইগুড়ি

কালীবাড়ির উল্টো দিকের মিষ্টির দোকানগুলিও খোলা। এক মহিলাকে ধরাধরি করে নিয়ে যাওয়া হল মিষ্টির দোকানে।

 সমস্যা: দূষণের আশঙ্কা। জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল

সমস্যা: দূষণের আশঙ্কা। জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:২২
Share: Save:

মধ্যরাতও গড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু ভিড় দেখে বোঝার উপায় নেই। রাত দুটোতেও জলপাইগুড়ির যোগমায়া কালীবাড়ির সামনে লোক গিজগিজ। কালীবাড়ির উল্টো দিকের মিষ্টির দোকানগুলিও খোলা। এক মহিলাকে ধরাধরি করে নিয়ে যাওয়া হল মিষ্টির দোকানে। তাঁর নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বলে সঙ্গীরা জানালেন। ঠান্ডা জল নাক দিয়ে টেনে মহিলা সুস্থ হন।

ওই ভদ্রমহিলা শুধু একাই নন, বুধবার সকালে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কালীপুজোর সন্ধে থেকে রাত পর্যন্ত তিন জন রোগীকে আনা হয়েছিল হাসপাতালে। তাঁরা সকলেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। রোগীর সংখ্যা বেশি না হলেও গাছগাছালি ভরা জলপাইগুড়ির বাতাসেও কালীপুজোর রাতে দূষণ থাবা বসিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণত জলপাইগুড়িতে বায়ু দূষণের সূচকের মাত্রা থাকে ৭৪, গত মঙ্গলবার কালীপুজোর রাতে সূচকের মাত্রা ১০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

পরিবেশ নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মুখপাত্র রাজা রাউত বলেন, “এটিকে বিপদ ঘণ্টি বলা যেতে পারে। এখনই যদি সচেতন না হই আমরা, তবে ভবিষ্যতে এই শহরের বায়ুও বিষিয়ে যাবে।” উত্তরবঙ্গের অন্যান্য জেলা সদরের তুলনায় জলপাইগুড়ির সবুজ তুলনামূলক বেশি বলে এত দিন ভাবা হয়েছে। শহরের মধ্যেই একাধিক বাগান রয়েছে। ব্রিটিশ ভারতে উত্তরবঙ্গের সদর ছিল জলপাইগুড়ি শহর। ব্রিটিশ রীতি মেনে রাস্তার দু’পাশে বড় গাছ লাগানোর প্রচলন তখন থেকেই। সেই শহরে হঠাৎ করে দূষণের মাত্রা বাড়ল কেন?

প্রাথমিক ভাবে আতসবাজিকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। শব্দবাজিতে নানা বিধিনিষেধ আরোপের পর আতসবাজির ঝোঁক বেড়েছে। চড়কি, তুবড়ি থেকে শুরু করে আকাশে উড়ে গিয়ে ফেটে রোশনাই ছড়ানো নানা বাজি. সব ক্ষেত্রেই আলোর সঙ্গে তীব্র ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। তাতে মিশে থাকে সীসা, পারদ, ফসফরাস, সালফার। এই সব গুঁড়ো বাতাসে মিশে দূষণ বাড়াচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় পরিবেশ দূষণ পর্ষদের তরফে জানানো হয়েছে, সূচক ১০০ থেকে ১২০ মধ্যে থাকলে সেই মাত্রাকে সহনীয় বলা হয়। তবে এই মাত্রায় শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসুর আক্ষেপ, “যদি দেদার বারুদ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে, তা হলে শত গাছগাছালিও দূষণ রুখতে পারবে না। এটা রুখতে মানুষকে সচেতন হতে হবে। না হলে এই প্রবণতা আটকানো খুবই কঠিন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Environment Pollution Jalpaiguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE