Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

জলপাইগুড়িতে ভূমিকম্পে মৃত্যু, আতঙ্ক

ভূমিকম্পে নির্মীয়মাণ বাড়ির দেওয়ালে চাপা পড়ে এক রাজমিস্ত্রির মৃত্যু হল। শনিবার সকালে ঘটনাটি ঘটে রাজগঞ্জের ডাঙাপাড়া এলাকায়। পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম মংলু রায় (৪২)। ওই ব্লকেই আহত আরও দু’জনের একজনকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, আরেক জনকে শিলিগুড়ির একটি নার্সিং হোমে ভর্তি করানো হয়েছে। ভূমিকম্পের আতঙ্কে অসুস্থ হয়েছেন অন্তত ১৭ জন।

জ্ঞান হারিয়েছেন অরবিন্দনগরের এক ব্যক্তি। —নিজস্ব চিত্র।

জ্ঞান হারিয়েছেন অরবিন্দনগরের এক ব্যক্তি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১৬
Share: Save:

ভূমিকম্পে নির্মীয়মাণ বাড়ির দেওয়ালে চাপা পড়ে এক রাজমিস্ত্রির মৃত্যু হল। শনিবার সকালে ঘটনাটি ঘটে রাজগঞ্জের ডাঙাপাড়া এলাকায়। পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম মংলু রায় (৪২)। ওই ব্লকেই আহত আরও দু’জনের একজনকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, আরেক জনকে শিলিগুড়ির একটি নার্সিং হোমে ভর্তি করানো হয়েছে। ভূমিকম্পের আতঙ্কে অসুস্থ হয়েছেন অন্তত ১৭ জন। তাঁদের মধ্যে ৭ জনকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বাকিদের মধ্যে ৮ জনকে ব্লক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। জলপাইগুড়ি শহরে অসুস্থ দু’জনের বাড়িতে চিকিৎসা করানো হয়।

এ দিকে বেশ কিছু বহুতলে ফাটল দেখা দিয়েছে। জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ভূমিকম্পে মৃত ও জখম পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে আজ, রাবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজগঞ্জে যাবেন।

জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পৃথা সরকার বলেন, “ভূমিকম্পে রাজগঞ্জ ব্লকে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই ব্লকের দু’জন জখম হয়েছেন। এ ছাড়াও আতঙ্কে অসুস্থ ৭ জনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।” জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা বলেন, “যে ৭ জনকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে তাঁদের মধ্যে ৬ জন মহিলা, ১ জন পুরুষ। শারীরিক দুর্বলতার কারণে আতঙ্কে তাঁরা অসুস্থ হয়েছেন।” জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী রবিবার রাজগঞ্জে যাবেন। সেখানে তিনি ভূমিকম্পে মৃত শ্রমিকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন।”

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ১১টা ৪১ মিনিট ২৫ সেকেন্ডে গোটা শহর ভূমিকম্পে দুলে ওঠে। প্রায় এক মিনিটের দুলুনিতে আতঙ্কিত বাসিন্দারা ঘর বাড়ি ছেড়ে পালাতে শুরু করেন। কাঁপতে থাকা বাতি স্তম্ভ, বহুতলগুলিকে দেখে আতঙ্ক বেড়ে যায়। রাস্তার গাড়ি ফেলে ফাঁকা জায়গার খোঁজে দৌড়তে শুরু করেন চালক। ওই রেশ না কাটতেই বেলা ১২টা ২০ মিনিট নাগাদ ফের শহর দুলতে দেখে বাসিন্দারা দিশাহারা হয়ে পড়েন। আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রিখটার স্কেলে এ দিন কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৫। শহরের নদী ও জলাশয়ে আচমকা জলোচ্ছ্বাস দেখা যায়। করলা নদীতে সাগরের মতো বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে।


জলপাইগুড়িতে কম্পনের সময়ে বহুতলের বাইরে বেরিয়ে এসেছেন বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সময় রাজগঞ্জের ডাঙাপাড়া এলাকায় তিন তলা বাড়ি তৈরির কাজ করছিলেন মংলু রায়। ভূমিকম্প টের পেয়ে তাঁর সঙ্গীরা দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে যান। সব শেষে মংলু বেরোতে গেলে উপর থেকে ইটের দেওয়াল তাঁর মাথায় ভেঙে পড়ে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। ভূমিকম্পের সময় পালাতে গিয়ে ওই ব্লকের আরও দু’জন জখম হন। এ দিকে ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে জলপাইগুড়ি শহর এবং সংলগ্ন এলাকায় ৭ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ময়নাগুড়িতেও ৪ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ বাগ বলেন, “প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।” ধূপগুড়ি ব্লক হাসপাতালেও ভূমিকম্পের আতঙ্কে অসুস্থ ৪ জনকে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ দিকে ভূমিকম্পে বহুতলে ফাটল দেখা দেওয়ায় আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। তেলিপাড়া এলাকায় একটি বাড়ির ছোট দেওয়ালের কিছু অংশ ধসে পড়ে। ফাটল দেখা দেয় কয়েকটি বাড়িতে। শিয়াল পাড়া, অরবিন্দ নগর, পাণ্ডা পাড়া, মোহান্ত পাড়া এলাকায় অন্তত পনেরোটি বহুতলে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। জেলাশাসক বলেন, “ক্রমশ খবর আসছে। প্রশাসনের তরফেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE