Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নজর যদি থাকে তবে ওরা ঢুকল কী ভাবে

আজ সকালেই আমার এক ছাত্র ফোন করেছিল। বলল, “স্যর, এই ক্যাম্পাস সুরক্ষিত নয়।” বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তার বেষ্টনীর মধ্যে রয়েছে।

হরিমাধব রায় ভাষাবিজ্ঞানের অধ্যাপক, জেএনইউ

হরিমাধব রায় ভাষাবিজ্ঞানের অধ্যাপক, জেএনইউ

হরিমাধব রায়
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:০১
Share: Save:

আজ সকালেই আমার এক ছাত্র ফোন করেছিল। বলল, “স্যর, এই ক্যাম্পাস সুরক্ষিত নয়।” বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তার বেষ্টনীর মধ্যে রয়েছে। নিরাপত্তারক্ষীরা জিজ্ঞাসাবাদের পরেই কেউ ওই ক্যাম্পাসে ঢোকার অনুমতি পান। অথচ চল্লিশ-পঞ্চাশ জনের একটি দল লাঠি, হকি স্টিক নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকে পড়ল, ‘সাবরমতী’, ‘প্রাপ্তি’ থেকে একের পর এক হস্টেলে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের হামলা চালাল। এটা কী করে সম্ভব! জেএনইউয়ের ইতিহাসে এমন হিংসার উদাহরণ নেই। আমি নিজে কুড়ি বছর ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত। পড়াশোনা করেছি এখানে। এখন শিক্ষকতা করছি। কখনও এমন দেখিনি। এর আগেও বহুবার বিভিন্ন বিষয় নিয়েই গর্জে উঠেছে জেএনইউ। এপিজে আব্দুল কালাম রাষ্ট্রপতি থাকার সময়েও কালো পতাকা দেখানো হয়েছে। কই, এমন আক্রমণ তো হয়নি!


আসলে আমার মনে হয় এর পিছনে অন্য কারণ রয়েছে। মূল উদ্দেশ্য, ছাত্রছাত্রীদের মুখ বন্ধ করে দিতে চাওয়া হচ্ছে। পড়াশোনা যাতে সবাই করতে না পারে, সে রকমই এক ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। গত দু’মাসের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। পড়াশোনার ফি এমন ভাবে বাড়ানো হয়েছে, যা কেউ মেনে নিতে চাইছেন না। একটি সিমেস্টারে আগে যেখানে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা লাগত, এখন তা সাড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার বা তারও বেশি কিছু করা হয়েছে। ওই ফি কমানোর দাবিতেই আন্দোলন শুরু হয়েছে।
আন্দোলনের ফলে কিছু দিন ধরে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে রয়েছে। তাতে একটি সিমেস্টারের সিলেবাস শেষ করানো যায়নি। এ দিকে আর একটি সিমেস্টার শুরু করে দেওয়া হয়। ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছে, এমন ভাবে ফি বাড়ানো হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেক ছাত্রছাত্রীকে টাকার অভাবে বাড়ি ফিরে যেতে হবে। আমিও কোচবিহার থেকে গিয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। টাকার বিনিময়ে পড়াশোনা কিনতে হলে আমার পক্ষেও তা করা সম্ভব হত না। এখন তো ওই পথেই যাচ্ছে সব— টাকার বিনিময়ে পড়াশোনা কিনতে হবে।


তা হলে তো সাধারণ ঘরের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, সিএএ বা এনআরসি নিয়েও জেএনইউয়ের ছাত্রছাত্রীরা জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। জেএনইউয়ের প্রতিবাদের একটি ভাষা রয়েছে। সেটাই তো স্বাভাবিক। নোবেল জয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় তো এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র। ঘটনা হল, সবাই যেখানে চুপ, সেখানে ছাত্রদের প্রতিবাদ মানতে পারছেন না কেউ কেউ। তাই চুপ করিয়ে রাখার চেষ্টা শুরু হয়েছে। তা কী হয়! ছাত্ররা যুক্তির কথা বলে।


এখানে চাঁদ সওদাগরের ও মনসার গল্প মনে পড়ে। চাঁদ সওদাগরের পুজো পাওয়ার জন্য মনসার সেই চেষ্টার কথা সবাই জানে। একই ভাবে এখানেও ভাবা হচ্ছে, একবার জেএনইউয়ের ছাত্রছাত্রীদের বশে আনতে পারলে কাজ হাসিল। রবিবারের ঘটনা এই ভাবনাগুলিকে জোরালো করে দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, পুলিশ-প্রশসান থেকে নিরাপত্তারক্ষী, সবাই থাকতেও একদল বহিরাগত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকল, মারধর করল কী করে? আমাদের চল্লিশ জন ছাত্রছাত্রী হাসপাতালে ভর্তি। শিক্ষকদেরও ছাড়া হয়নি। ইংরেজির সৌগত ভাদুড়ী, সেন্টার ফর দ্য স্টাডিজ় অব রিজিওনাল ডেভেলপমেন্ট-এর সুচরিতা সেনও আক্রান্ত। ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ঘুরে বেড়াচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

JNU JNU Attack JNU Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE