নাগেশ্বরী চা বাগানে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। — নিজস্ব চিত্র।
খাদ্য দফতরের পাঠানো চাল, গম বাগান কর্তৃপক্ষ সঠিক ভাবে শ্রমিকদের মধ্যে বিলি করছেন কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। শনিবার বিকালে ডুয়ার্সের মেটেলি ব্লকের নাগেশ্বরী চা বাগানে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলার পরে এমন সন্দেহের কথা জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘‘শ্রমিকদের জন্য বাগানে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল-গম রেশনে বিলির জন্য পাঠানো হচ্ছে। অথচ শ্রমিকরা তা ঠিকঠাক পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ শুনছি। এটা চলতে পারে না। বাগানে রেশন বিলির কাজ ঠিকভাবে হচ্ছে কি না তা দেখতে ফুড ইন্সপেক্টরদের পাঠানো হবে। প্রয়োজনে বাগান কর্তৃপক্ষের হাত থেকে রেশন বিলির ভার তুলে নিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দেওয়া হবে।’’
একই সঙ্গে নাগেশ্বরী বাগানে অনাহারের কারণে কোনও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি বলেও দাবি করেন খাদ্যমন্ত্রী।
গত মার্চ মাস থেকেই অচলাবস্থা চলছে নাগেশ্বরী চা বাগানে। ৯ মে থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে এক শিশু সহ ৩ জনের মৃত্যু হয়। এর পরেই বাগান কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য সরকার নড়েচড়ে বসে। গত ১৪মে বাগান কর্তৃপক্ষ মার্চ মাসের বকেয়া মজুরির অর্ধেক টাকা মিটিয়ে দেয়। বাগানে অনটনের খবর পেয়েই খাদ্যমন্ত্রী নাগেশ্বরীতে আসার সিদ্ধান্ত নেন। এদিন মন্ত্রী আসার আগে থেকেই মেটেলি ব্লক প্রশাসনের মারফত নাগেশ্বরী চা বাগানে পরিবার পিছু ১০কেজি করে চাল বিলি শুরু হয়।
এর পর বিকালে নাগেশ্বরী চা বাগানের ক্লাব ময়দানে পৌঁছে মন্ত্রী জানিয়ে দেন, বাগানে কোনও মৃত্যুই অনাহার বা অপুষ্টির জন্যে ঘটেনি। বিভিন্ন অসুখে ভুগেই মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যে যেতেও পরামর্শ দেন তিনি। এরপরেই মন্ত্রী জানান ফি মাসে নাগেশ্বরী চা বাগানে ১৪৭.৭৮ ক্যুইন্টাল চাল এবং ২৪.৬৩ ক্যুইন্টাল গম খাদ্য দফতরের তরফ থেকে পাঠানো হয়। সেই চাল শ্রমিক পরিবার গুলির হাতে ঠিক ভাবে পৌঁছচ্ছে নাকি তা বাগানে গুদামজাত থাকছে সেটা দেখতেই একজন আধিকারিককে ওজনযন্ত্র নিয়ে বাগানে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বাগানের এক কর্মী দীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সাহায্য, ত্রাণ সাময়িক কাজে আসলেও এভাবে সমস্যার সমাধান হবে না। রাজ্য সরকারে তরফ থেকে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডেকে যাতে স্থায়ী সমাধান হয় আমরা সেটাই চাই। রেশন বাগান কর্তৃপক্ষ দেবে নাকি স্বনির্ভর গোষ্ঠী তা নিয়ে আমাদের চিন্তা নেই। আমরা বাগান স্বাভাবিক ভাবে চলুক এটাই চাই।’’
এ দিন খাদ্যমন্ত্রী দফতরের প্রধান সচিব অনিল বর্মাকেও শ্রমিকদের সামনে কথা বলতে বলেন। অনিল ভার্মা বলেন, ‘‘চা বাগানের ভেতরে বন্টন ব্যবস্থা সরাসরি খাদ্য দফতরের হাতে থাকে না। চা বাগান কর্তৃপক্ষই তা করে থাকে। তবে খাদ্যশস্য নাগেশ্বরী বাগানে যে পর্যাপ্ত পাঠানো হয় তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।’’
নাগেশ্বরী চা বাগানের ম্যানেজার শিলাদিত্য বসু বলেন, ‘‘বাগানে যে মন্ত্রী আসবেন তা আগে থেকেই জানতাম। সে জন্যেই ফ্যাক্টরিতে যেখান থেকে চাল বন্টন করা হচ্ছিল সেখানেই অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু উনি যে ফ্যাক্টরিতে না এসেই চলে যাবেন তা বুঝিনি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বাগান কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবেই চাল গম বন্টন করে। বাগানে যে অপুষ্টিতে কেউ মারা যাননি সে বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমরাও একমত। এমনকী, ফুড ইন্সপেক্টরকে দিয়ে রেশন বিলি ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার কথা যে তিনি বলেছেন তাতেও আমাদের কোনও আপত্তি নেই। তবে স্বনির্ভর গোষ্ঠী বাগানের থেকে ভালভাবে রেশন বন্টন করতে পারবে বলে আমাদের মনে হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy