Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

খাগরাবাড়িতে কুমারী পুজো শুরু, শিবযজ্ঞও

কুমারী পুজোকে ঘিরে মাতল কোচবিহারের খাগরাবাড়ি এলাকা। মঙ্গলবার থেকে শিবযজ্ঞ শুরু হয় খাগড়াবাড়িতে। বৃহস্পতিবার ছিল কুমারী পুজো। ১২ জন কুমারীকে এক সঙ্গে বসিয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করে পুজো দেওয়া হয়। পাশেই চলতে থাকে যজ্ঞ। আশেপাশের বাসিন্দাদের ভিড় উপচে পড়ে সেখানে। সকলেই হাত জোড় করে প্রার্থনা করেন। পাঁচ দিন ধরে ওই যজ্ঞ চলবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৮
Share: Save:

কুমারী পুজোকে ঘিরে মাতল কোচবিহারের খাগরাবাড়ি এলাকা। মঙ্গলবার থেকে শিবযজ্ঞ শুরু হয় খাগড়াবাড়িতে। বৃহস্পতিবার ছিল কুমারী পুজো। ১২ জন কুমারীকে এক সঙ্গে বসিয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করে পুজো দেওয়া হয়। পাশেই চলতে থাকে যজ্ঞ। আশেপাশের বাসিন্দাদের ভিড় উপচে পড়ে সেখানে। সকলেই হাত জোড় করে প্রার্থনা করেন। পাঁচ দিন ধরে ওই যজ্ঞ চলবে। তা ঘিরে শুরু হয়েছে মেলা। নানা জায়গা থেকে দোকানিরা তাঁদের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছেন মেলায়। বসেছে জিলিপির দোকান। বাসিন্দাদের কয়েক জন বলেন, “সারা বছর ধরে এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করে থাকি।” খাগরাবাড়ি শিবযজ্ঞ সমিতির সম্পাদক জয়শংকর ভট্টাচার্য বলেন, “শিবযজ্ঞ উপলক্ষে পুরানো রীতি মেনে ১২ জন নাবালিকাকে কুমারী পুজো করা হবে। তাদের সকলের বয়স ৩ থেকে ৮ বছরের মধ্যে।”

শিবযজ্ঞ সমিতির সভাপতি হিমাদ্রী শংকর ভট্টাচার্য জানান, এ বারে ৬৮ তম শিবযজ্ঞ। ১৯৪৮ সালে কোচবিহারের মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ধর্মসভার সিদ্ধান্ত মেনে ওই বছর থেকে শিবযজ্ঞ শুরু হয়েছে। মহারাজা একাধিকবার ওই যজ্ঞানুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছেন । ওই ঐতিহ্য মেনেই ফি বছর শিবযজ্ঞ হচ্ছে। বিশ্ববাসীর কল্যাণই যজ্ঞের মূল্য উদ্দেশ্য। রীতি মেনে সূর্য্যকান্ত মণির মাধ্যমে সৌররশ্মি প্রতিফলিত করে শিবমূর্তির পাদদেশে ওই যজ্ঞকুন্ডে অগ্নিসংযোগ করা হয়। প্রদীপ, দেশলাই কাঠি কিংবা মোমের আগুন ওই কাজে ব্রাত্য। এবারেও ওই রীতির হেরফের হয়নি। যজ্ঞের আহূতি হিসাবে প্রায় ৬০ কেজি ঘি, দুশো মণ আম শাল প্রভৃতি কাঠ সহ অন্য সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে।

পূন্যাহূতির উপকরণে সুপারি, কলা, পান, প্রভৃতি সামগ্রী আবশ্যিক। আয়োজকদের তরফে বিশ্বজিৎ শংকর ভট্টাচার্য বলেন, “শান্তি স্থাপনই লক্ষ্য আমাদের। সেই লক্ষ্যেই যজ্ঞ করা হয়।” উদ্যোক্তারা জানান, রাজাদের আমলের ঐতিহ্য মেনে লক্ষ আহূতি দেওয়া হয় যজ্ঞে। ২০ জন পুরোহিত যজ্ঞে আহূতি দেন। বেনারস ও হরিদবার থেকে সাধুরাও যোগ দিয়েছেন যজ্ঞে। ঘি, কাঠ, তিল, চাল প্রভৃতি সামগ্রী মিলিয়ে এক লক্ষবার আহূতি দেবেন পুরোহিতরা। প্রধান পুরোহিত রুদ্রাক্ষের মালা ঘুরিয়ে আহূতির হিসাব রাখবেন।

খাগরাবাড়ি শিবযজ্ঞ সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার মহারাজের সভাপন্ডিত প্রয়াত রমাশঙ্কর কাব্য ব্যাকরণ স্মৃতি তীর্থ মহাশয় অনাচার অবিচার ও খেয়োখেয়ীতে মত্ত মানুষের ধর্মীয় ও নৈতিক উন্নতির ব্যাপারে উদ্ববিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। পরে তাঁর ওই ভাবনা থেকেই মহারাজ জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণের সভাপতিত্বে ধর্মসভা হয়। সেখানেই শিবযজ্ঞের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। সমিতির সভাপতি হিমাদ্রী শংকর ভট্টাচার্য তাঁর লেখা বইয়ে ওই প্রসঙ্গে বলেছেন, কথিত আছে গিরিরাজ হিমালয় শিবের সঙ্গে গৌরীর বিয়ে দেওয়ার সময় হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত কোচবিহার রাজ্য জামাতা শিবকে যৌতুক প্রদান করেন। শিবের রাজ্য হিসাবেই হোক বা প্রাকৃতিক কারণে এখানকার লোক শিবভক্ত। ......কোচবিহারের রাজবংশকে শিববংশ বলা হয়। ...তাই শিবযজ্ঞ করাই সমীচীন মনে হল। ওই বইয়ে ১৩৫৯ সালের শিবযজ্ঞ ধর্মসভার সভাপতি মহারাজ জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণের বক্তব্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, “আমি কামনা করি আমাদের সকলের জীবন হোক আপনাদের শিবযজ্ঞের মত মহাযজ্ঞ। সেই যজ্ঞের অনলে পুড়ে যাক আমাদের হিংসা লোভ স্বার্থপরতা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE