Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কাশ্মীরে শ্রমিক মৃত হৃদ্‌রোগে

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় কাজ থাকতেন সোহরাব। তাঁর মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েন তাঁর সহকর্মী আঞ্জুম আখতার, বাবুল আলমরা। তাঁরা সোহরাবের গ্রামেরই বাসিন্দা।

অসহায়: চাকুলিয়ায় চিন্তায় সোহরাব আলির পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।

অসহায়: চাকুলিয়ায় চিন্তায় সোহরাব আলির পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাকুলিয়া শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৮ ০১:০২
Share: Save:

মাত্র মাসখানেক আগে কাশ্মীর কাজের জায়গায় পাড়ি দিয়েছিলেন উত্তর দিনাজপুরের সোহরাব আলি ( ৪৫)। কিন্তু আচমকা চাকুলিয়ার শিবরামপুরের কাজিভিটা গ্রামে কান্নার রোল। কাশ্মীরে একটি সংস্থার অধীনে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। সোমবার দুপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মারা যান সোহরাব।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় কাজ থাকতেন সোহরাব। তাঁর মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েন তাঁর সহকর্মী আঞ্জুম আখতার, বাবুল আলমরা। তাঁরা সোহরাবের গ্রামেরই বাসিন্দা। প্রথমে তাঁরা বুঝেই উঠতে পারছিলেন না কী ভাবে সহকর্মীর বাড়িতে ওই খবর পাঠাবেন। দেহটাকে নিয়েই বা কী করবেন। প্রথমে গ্রামের একজনকে তাঁরা খবরটা দেন। আরও জানান, হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করতে হবে। কিন্তু পরিবারের লোক না থাকলে হবে না। চাকুলিয়ার এক গ্রামের বাসিন্দা বিষয়টি রায়গঞ্জের সাংসদ মহম্মদ সেলিমকে জানান। সেলিম কাশ্মীরের দলীয় বিধায়ক মহম্মদ ইউসুফ তারিগামির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারিগামি ময়নাতদন্ত করানোর ব্যবস্থা করেন। বুধবার দুপুরে কাশ্মীর থেকে বিমানে পাঠানো হয়েছে সোহরাবের দেহ। দিল্লি হয়ে কলকাতা পৌঁছনোর কথা রাতে। আজ, বৃহস্পতিবার সোহরাবের দেহ পৌঁছনোর কথা চাকুলিয়ায়।

সোহরাবের বাড়িতে স্ত্রী ও ১৫ বছরের এক ছেলে। ছেলে রেজাউল আলম স্থানীয় একটি স্কুলে পড়াশোনা করে। পরিবারের এক আত্মীয় জানান, সোহরাবের স্বপ্ন ছিল, ছেলে শ্রমিক না হয়ে লেখাপড়া শিখে গ্রামের স্কুলের শিক্ষক হবে। কিন্ত বাবার এই পরিণতিতে থমকে গিয়েছে রেজাউল। তাই কাশ্মীরে বাবার সহকর্মীদের কাছে তার আবেদন, তার বাবাকে একবারের জন্য দেখতা চায়। বাবার দেহ তাকে দেখানো হোক। রেজাউলের এই কাতর আবেদনে সাড়া দিয়ে বাবুল আলম, ফরিদ আলম, আঞ্জুম আখতার মেহেবুব, আলম মহম্মদ আখতাররা মৃতদেহ গ্রামের বাড়ি ফেরাতে উদ্যোগী হন। তাঁরা কেউ ঠিকাদারের কাছ থেকে ঋণ, কেউ অগ্রিম টাকা নিয়ে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে দেহ কফিনবন্দি করে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করেন।

এ দিন গোটা গ্রাম শোকাহত। সোহরাবের স্ত্রী বিবি বুচুন নেশা স্বামীর দেহ কখন এসে পৌঁছবে সেই অপেক্ষায়। অন্য দিকে, ছেলেও বারবার খোঁজ নিচ্ছে, তার বাবার দেহ কখন এসে পৌঁছবে। পরিবার সুত্রের খবর, সোহরাব পাঁচ বছর ধরে কাশ্মীরে কাজ করেন। গত ইদের সময় বাড়ি এসেছিলেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর ফের কাজে যোগ দিতে যান। রেজাউল জানাল, শনিবার রাতে বাবার সঙ্গে শেষবার ফোনে কথা হয়েছিল তার। কাশ্মীর থেকে ফোনে আঞ্জুম আখতার ফোনে জানালেন, তাঁরা সকলে মিলে দেহ গ্রামে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Kashmir Chakulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE